হ-বাংলা নিউজ:
নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালার তফসিলে ‘শাপলা’ প্রতীক অন্তর্ভুক্ত না করার সিদ্ধান্তের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) অষ্টম কমিশন বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের কাছে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ জানান, শাপলা প্রতীক চেয়ে দুটি দল—নাগরিক ঐক্য ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)—আবেদন করেছিল। তবে সবকিছু বিবেচনা করে প্রতীকের তালিকায় শাপলা রাখা হয়নি। তার ভাষায়, “আমরা শাপলাকে বাদ দেইনি, বরং তা অন্তর্ভুক্ত করার মতো সিদ্ধান্ত হয়নি।”
তিনি আরও বলেন, নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা সংশোধন করে বর্তমানে মোট ১১৫টি প্রতীক সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৫১টি প্রতীক নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য বরাদ্দ, বাকি ৬৪টি নতুন নিবন্ধিত দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জন্য রাখা হবে।
এর আগে বুধবার, শাপলা প্রতীককে দলীয় প্রতীক হিসেবে অন্তর্ভুক্ত না করার সিদ্ধান্তের কথা জানান আরেক নির্বাচন কমিশনার আবদুর রহমানেল মাছউদ। তিনি বলেন, “শাপলা জাতীয় প্রতীক হওয়ায় নীতিগতভাবে এটিকে নির্বাচন প্রতীক হিসেবে রাখা হয়নি।” সিদ্ধান্তটি কার্যকর হলে এই প্রতীক আর কোনো দল ব্যবহার করতে পারবে না।
প্রতীকের নতুন তালিকা ও সংশোধন
বর্তমানে নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালায় দলীয় ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রতীক একই তফসিলে একীভূত করা হয়েছে। সংশোধিত বিধিমালার ২০(১) ধারা অনুযায়ী, প্রার্থীরা ১১৫টি প্রতীকের মধ্য থেকে যেকোনো একটি প্রতীক বরাদ্দ পেতে পারেন।
১১৫টি প্রতীকের তালিকায় রয়েছে: আপেল, আম, আনারস, কলা, ধানের শীষ, নৌকা, দাঁড়িপাল্লা, হাত (পাঞ্জা), মাছ, মোরগ, ঘুড়ি, চেয়ার, টেলিভিশন, হাতি, সিংহ, বটগাছ, হারিকেন, রিকশা, বাইসাইকেল, ফুল, পাখা, ফ্রিজ, মশাল, মোবাইল ফোন, হেলিকপ্টারসহ আরও অনেক চিহ্ন।
নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন পুনর্বহাল হওয়ায় দলটির পুরনো প্রতীক ‘দাঁড়িপাল্লা’ তালিকায় রাখা হয়েছে। অপরদিকে, আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল না হয়ে স্থগিত থাকায় তাদের প্রতীক ‘নৌকা’ও বহাল রয়েছে।
সারজিসের প্রতিক্রিয়া: শাপলা নয়, তবে ধানের শীষ কিভাবে?
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলীয় সংগঠক সারজিস আলম নির্বাচন কমিশনের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। বুধবার রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে পোস্ট দিয়ে তিনি বলেন, “শাপলা যদি রাজনৈতিক প্রতীক হতে না পারে, তাহলে ধানের শীষ, পাটপাতা বা তারকার মতো প্রতীকও জাতীয় প্রতীকের অংশ—তাদেরও হওয়া উচিত নয়।”
তার বক্তব্য, “শাপলা জাতীয় প্রতীক নয়, এটি জাতীয় প্রতীকের একটি উপাদান। যেমন ধানের শীষ বা তারকা চিহ্ন। তাহলে শুধু শাপলার প্রতীক ব্যবহারে আপত্তি কেন? জাতীয় ফল কাঁঠাল ইতিমধ্যেই প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “শাপলার প্রতীক নিয়ে ভয় পেলে সেটা স্পষ্ট করে আগে থেকেই বলা উচিত ছিল। আইনি দিক থেকে শাপলা প্রতীক হতে কোনো বাধা নেই।”
উপসংহার:
শাপলা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত ও ব্যাখ্যা যেমন রাজনৈতিক মহলে আলোচনার জন্ম দিয়েছে, তেমনি জাতীয় প্রতীকের ব্যবহার নিয়ে আইনগত ও নীতিগত প্রশ্নও তুলেছে দলগুলো। এখন দেখার বিষয়—ইসি এই বিতর্কের প্রতিক্রিয়া কীভাবে সামলায়।
