শিক্ষকতা পেশায় বাংলাদেশী’রা

হ-বাংলা নিউজঃ

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশীদের আগমন মূলত ১৯৭০ সালের দিকে। উল্লেখ্যযোগ্য হারে সেই সংখ্যা ৮০’র দশকের দিকে উর্দ্ধমুখি সংখ্যার বিচারে আনুমানিকভাবে ধরা যেতে পারে ৭০’র
দশকের ৩৫,০০০ এখন দাঁড়িয়েছে ২,৭৭,০০০ থেকে ৩০০,০০০। মাইগ্রেসনের বদৌলতে আরো
২,৮০,০০০ থেকে ২,৯০,০০০ সংখ্যা যোগ করা যেতে পারে

উন্নত জীবন, নিশ্চিত নিরাপত্তা, সন্তানদের উচ্চ শিক্ষা, নিরাপদ ভবিষ্যত উল্লেখযোগ্য কারন, মার্কিন
মুল্লুক বসতি গড়ার পেছনে। ভৌগলিক বিচারে বেশির ভাগ বাংলাদেশীদের আবাস নিউ-ইউর্ক/ নিউ জার্সী / আটলান্টিক সিটি / বাফেলো / লস এঞ্জেলস।

ক্যালোফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের লস-এন্জেলেস শহর থেকে প্রায় ৭০ মাইল দূরে অবস্থিত ইনল্যান্ড এমপায়ার দুটি কাউন্টি নিয়ে ইনল্যান্ড এমপায়ার গঠিত। রিভার সাইড কাউন্টি এবং সান বার্নারডিনো এক হাজার থেকে পনেরো শত বাংলাদেশীদের বসবাস। সাহিত্য সংস্কৃতী অথবা আমাদের যে কোন জাতীয় দিবসগুলো বেশ জাকজমক ভাবে উৎসব মুখর পরিবেশ এখানে উদযাপন করা হয় ৷

আজকে মূলত এমন কয়েজন গুনী ব্যক্তিকে পাঠকদের সংগে পরিচয় করিয়ে দেব যাঁরা অত্যন্ত সম্মানের
সাথে শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত আছেন –

ডঃ অধ্যাপক নিজামউদ্দিন কাজী

রিভারসাইড কাউন্টির মরেনো ভ্যালি শহরে দীর্ঘদিন যাবত বসবাস করে আসছেন। হাতেগুনা যে কয়জন বাংলাদেশী অত্র এলাকায় বসবাস শুরু করেছেন তিঁনি তাঁদের মাঝে অত্যতম। কমিউনিটির অত্যন্ত শ্রদ্বাভাজন ব্যক্তিবর্গের একজন। তিনি নিজেকে এমন এক উচ্চতায় নিয়ে গেছেন বাংলাদেশী
কমিউনিটির একজন অভিবাবক বললে বেশী বলা হবে না। চিটাগাং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিতে মাস্টার্স
সম্পন্ন করে ১৯৭৮ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। তারপর শুধুই সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে উপরে
উঠা। অক্লান্ত পরিশ্রম আর মেধায় ইউনিভারসিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। দীর্ঘ ৪০ বছর Mt. San Jacinto College এ গণিতের শিক্ষক হিসেবে কর্মরত অবস্থায়
সম্প্রতি অবসর গ্রহণ করেন। কর্মকালীন সময়ে বিভিন্ন পদে সফলতার সংগে দায়িত্ব পালন করেন।জ্ঞানের আলোক বার্তীকা যে কয়েজন বাংলাদেশী কমিউিনিটিতে আলো ছড়িয়েছেন, দিয়েছেন পথ
নির্দেশিকা আগামী প্রজন্মকে জনাব কাজী তাঁদের মাঝে অন্যতম ।

প্রতিনিয়ত উৎসাহ দিয়ে চলেছেন, আমাদের আগামী প্রজন্মকে শিক্ষকতা পেশায় যুক্ত হতে, এই প্রজন্মের কাছে, এই সমাজের কাছে তিনি যেন এক বাতিঘর, যেন এক জীবন্ত কিংবদন্তি, তাঁর শিক্ষার আলোক রশ্মি অন্ধকার কে জয় করে উদ্ভাসিত হউক নতুন এক সূর্যদয়।
এ যেন বাংলাদেশী কমিউনিটির প্রত্যেকের চাওয়া।

তামিনা মোর্শেদ—

“Speeding to Stardom” সাফল্য যখন নক্ষত্র ছোয়া এই বাক্যটি তাহমিনা মোর্শেদের সাথে সমার্থক। মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিকে মেধা তালিকায় স্থান পাওয়া তাহমিনা মোর্শেদ পরবর্তীতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর শেষে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসেবে
যোগদান করেন। স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ছিলেন অত্যন্ত চৌকশ মেধাবী। পড়াশুনা পাশাপাশি সংস্কৃতি চর্চা উপস্থিত গল্প বলা, বিতর্ক প্রতিযোগীতায় পেয়েছেন অসংখ্যা পুরস্কার ।

পরবর্তীতে থিতু হয়েছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। অরিগোন অঙ্গরাজ্যের Portland State University
থেকে অর্জন করেছেন অর্থনীতিতে উচ্চতর ডিগ্রি। সাফল্যের নন্দন কাননে যোগ করলেন আরেক নন্দন
তত্ত্বের পালক। Riverside Community College এর বিভাগীয় প্রধান থেকে বর্তমানে
University of California, San Marcos
Associate Professor
অত্যন্ত সদালাপি, সুহাসিনি, অমায়িক মানবিক এই মানুষটি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন কমিউনিটির যে কোন প্রয়োজনে আগামী প্রজন্মের কাছে নিজেকে দাঁড় করিয়েছেন এক অনন্য উচ্চতায়।

তামান্না ভুইয়া-

বয়সে নবীন, অত্যন্ত মেধাবী আমেরিকায় জন্ম বাংলাদেশী শিক্ষিকা বাংলাদেশে একটি প্রচলিত
প্রবাদ আছে “ যে রাধে সে চুল ও বাঁধে” তেমনি একটি প্রবাদকে তিনি অত্যন্ত সুন্দর এবং সাবলীল ভাবে
প্রাত্যহিক জীবনে ধারন করেছেন। একাধারে বাংলাদেশী কৃষ্টি, সাংস্কৃতি এবং লাল-সবুজ পতাকা বুকে
ধারন করে শিক্ষা ক্ষেত্রের সর্বোচ্চ ডিগ্রি (PHD) অর্জন করেছেন Capella University থেকে
ইংরেজী সাহিত্যে। কঠোর অধ্যাবসায়, কায়িক পরিশ্রম আর শৃংখল জীবন এই তিনের সমন্বয়ে একজন তামান্না আজ বাংলাদেশীদের গর্ব। বর্তমানে অত্যন্ত সুনামের সাথে Mount San Jacinto College এ ইংরেজী সাহিত্যে শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত আছেন।

শিক্ষকতা জীবনে একাডেমিক সিনেট মেম্বার সহ বিভিন্ন পর্যায়ে অত্যন্ত সুনামের সংগে দায়িত্ব পালন
করেছেন। ইতিমধ্যে একজন জনপ্রিয় শিক্ষিকা হিসেবে সবার মনে স্থান করে নিয়েছেন।পড়াশুনা সংক্রান্ত যে কোন পরামর্শ এবং সহযোগিতায় বাংলাদেশী কমিউনিটিতে অত্যন্ত বিশ্বস্ত এবং জনপ্রিয় একটি নাম “ তামান্না ভুইয়া।”

খাদিজা মঞ্জুরুল শাহীন

“ইচ্ছা শব্দটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, এটা কোন কিছুর প্রতি যে আকর্ষণ তৈরি করে, তা ভিতর থেকে হয়। বাহিরে থেকে ইচ্ছা জাগিয়ে তোলা সম্ভব নয়। ইচ্ছে শক্তি আসলে একটি বিপ্লব। বিপ্লব ঘটে যখন ভিতর থেকে পরিবর্তন চাওয়া হয়। যা কিছু পরিবর্তন তা আগে ভিতরে হয়, তারপর বাইরে তার প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। কিছু বদলাতে চাইলে আত্মবিপ্লব ঘটা ভীষণ জরুরি।

বিখ‍্যতা লেখিকা শুভশ্রী’দের উপরোক্ত লেখাটির যথার্থতা প্রমাণ করেছেন খাদিজা শাহীন। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক ইর্ষনীয় সাফল্যের ধারাবাহিকতায় উচ্চ শিক্ষার্থে ভর্তি হন স্বনামধন্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন (chemistry) বিভাগে। পরিবারের ইচ্ছে ছিল ডাক্তারি পড়ার, কিন্তু সেই ইচ্ছাকে উপেক্ষা করে হতে চেয়েছিলেন বিজ্ঞানী। অনার্স মাস্টার্সে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন।পরবর্তীতে বৈবাহিক কারনে পাড়ি জমান আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া । তারপর দৈনন্দিন জীবনে আসে বিশাল পরিবর্তন, একাধারে
নতুন দেশ, নতুন জীবন, সংসার সন্তান সামলানো তারপর ব‍্যাক্তিগত ক‍্যারিয়ার। প্রাত‍্যহিক জীবনের সমস্ত
প্রতিকূলতাকে উপেক্ষা করে “ইচ্ছা” শব্দটিকে শক্তিতে রূপান্তরিত করে অবশেষে ভর্ত্তি হলেন “UNIVERSITY OF CALIFORNIA RIVERSIDE. CHEMISTRY তে নিলেন উচ্চতর ডিগ্রি।

প্রিয় পাঠক, লেখার সূচনাতে লেখক “শুভশ্রী দে” ইচ্ছা শব্দটি দিয়ে শুরু
করেছিলাম। তিনি লেখায় যেমনটি বলেছিলেন- কিছু বদলাতে চাইলে আত্মবিপ্লব ঘটা ভীষণ জরুরী।
খাদিজা শাহীন তেমনি হার না মানা জীবনে যুদ্ধে একজন সংগ্রামীর নাম। বর্তমানে তিনি MORENO VALLEY COMMUNITY COLLEGE এ CHEMISTRY’র প্রভাষক হিসেবে
শিক্ষাদান করছেন।

প্রিয় পাঠক, লেখা শুরু করেছিলাম সমাজের কিছু গুণী ব্যক্তিকে পরিচয় করিয়ে দেব বলে। তাদের শিক্ষা জীবন, তাদের পথচলা, সমাজে তাদের অবস্থান তদুপরি আমাদের আগামী প্রজন্মকে শিক্ষায় অনুপ্রাণিত করা ছিল মূলত লেখার উদ্দেশ্য।
শিক্ষার মাধ্যমে আমরা নিজেদের যেমন উন্নত করতে পারি, তেমনি আমাদের সমাজকেও সমৃদ্ধ করতে
পারি। শিক্ষা হচ্ছে একটি দর্শন, আগুনের পরশমণি, যার ছোঁয়ায় মানুষের নৈতিক জীবনে বোধ,
মানবিকতা এবং আদর্শিক মূল্যবোধ সৃষ্টি করে।
শিক্ষা কেবল বইয়ের মাঝে সীমাবদ্ধ নয়, এটি জ্ঞান, দক্ষতা, মূল্যবোধ অর্জনের মাধ্যম। এটি সকল পটভূমির মানুষকে তাদের স্বপ্ন অর্জন করতে এবং জীবনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে ক্ষমতাবান করে
তোলে।
আমার ধ্যান, আমার ধারণা, আমার চিন্তা, আমার বিশ্বাস আমাদের আগামী প্রজন্ম আমাদের ৫৫ হাজার
বর্গমাইলের একখন্ড অখণ্ড বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে একটি সম্মানজনক অবস্থানে পৌঁছে দেবে।

এই প্রত্যাশায়- আমি
মনজুরুল শাহীন
সাংবাদিক ও কলাম লেখক
রিভার সাইড, ক্যালিফোর্নিয়া

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *