দৈনিক সংবাদপত্র -টিভি ও বিভিন্ন গণমাধ্যমের সম্মানীত সম্পাদক,বার্তা সম্পাদক।

হ-বাংলা নিউজ:

আসসালামু ওয়ালাইকুম।
বাংলাদেশী সচেতন মুক্তিকামী জনতার জন্য আরেকটি সুখবর আমরা সকলের সাথে শেয়ার করার লক্ষে আপনাদের দারস্থ হলাম। দয়া করে নিচের রিপোর্টটি প্রকাশ করে বাধিত করিবেন। লিংক পাঠালে কৃতজ্ঞ থাকবো।

রমজান মুবারক ও সকলের জন্য শুভ কামনা। আব্দুল্লাহ ইউসুফ শামীম। প্রধান সম্পাদক, সুপ্রভাত সিডনি। 

অস্ট্রেলিয়ায় স্বৈরশাসক শেখ মুজিবুর রহমানের মূর্তি অপসারণ: জনগণের আরেকটি বিজয়
– সুপ্রভাত সিডনি রিপোর্ট

বাংলাদেশী-অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী কমিউনিটির দাবির প্রেক্ষিতে ওয়েস্টার্ন সিডনি ইউনিভার্সিটির প্যারামাটা ক্যাম্পাসে স্থাপিত শেখ মুজিবুর রহমানের একটি আবক্ষ মূর্তি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সরিয়ে ফেলেছে। ২০ মার্চ ২০২৫ বৃহস্পতিবার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করে যে, তারা মূর্তিটি আইন অনুষদের সামনের উন্মুক্ত স্থান থেকে অপসারণ করে সরিয়ে নিয়ে গিয়েছে।

বিশ্বের স্বৈরশাসকদের মধ্যে নিজেদের মূর্তির প্রতি এবং স্বৈরশাসকের অনুসারীদের মাঝে তাদের স্বৈরাচারী নেতাদের মূর্তির প্রতি এক ধরনের অস্বাভাবিক আকর্ষণ দেখা যায়। স্ট্যালিন, মুসোলিনি, হিটলার, ফ্রান্সিসকো ফ্রাঙ্কো, সাদ্দাম হোসেন, মুয়াম্মার গাদ্দাফি, ইদি আমিন, মোবুতু সেসে সেকো, সুহার্তো, ফার্দিনান্দ মার্কোস এবং পিনোশের মতো একনায়করা নিজেদের শক্তিমত্তা ও প্রভাব বজায় রাখতে বিভিন্ন স্থাপত্য নির্মাণের আশ্রয় নিয়েছিল। ইতিহাস সাক্ষী দেয় এদের প্রত্যেকের স্থাপিত মূর্তিগুলো গণবিপ্লব ও জনরোষের মুখে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

২০২৪ সালের ঐতিহাসিক গণবিপ্লবের পর বাংলাদেশে শেখ মুজিবের মূর্তিগুলো জনতা ক্ষোভের প্রকাশ হিসেবে ধ্বংস করে দেয়। বাংলাদেশের প্রথম স্বৈরশাসক, সদ্য স্বাধীন রাষ্ট্রে গুম, খুন, নির্যাতন এবং বিচারবহির্ভূত হত্যার নায়ক, একদলীয় শাসনের প্রতিষ্ঠাতা ও দুর্নীতির মাধ্যমে দেশকে দুর্ভিক্ষের দিকে ঠেলে দেওয়া এই শাসকের প্রতীকী মূর্তিগুলো দেশজুড়ে ভেঙে ফেলা হয়। আওয়ামী লীগ সরকারের ফ্যাসিবাদী শাসনের স্মারক ৩২ নম্বর বাড়িটিও গণতান্ত্রিক চেতনার জনতা দুর্নীতি ও স্বৈরশাসনের প্রতীক হিসেবে প্রত্যাখ্যান করে গুড়িয়ে দিয়েছে।

গত ষোল বছরে ফ্যাসিবাদী দমননীতির মাধ্যমে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকা আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় অর্থ এবং জনগণের সম্পদ অপব্যবহার করে বাংলাদেশে প্রায় বারোশ থেকে দেড় হাজার মুজিব মূর্তি স্থাপন করেছিল। বিভিন্ন আকার ও নকশার এই মূর্তিগুলোর নির্মাণে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হয়। এইসব প্রকল্পে দুর্নীতির মাধ্যমে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও দেশের সম্পদ অবাধে লুট করে। এক পর্যায়ে তারা বাংলাদেশের বাইরেও বিভিন্ন দেশে মুজিবের মূর্তি স্থাপন করা শুরু করে।

এ ধারাবাহিকতায় আওয়ামী শাসনামলে বিভিন্ন দেশে শেখ মুজিবের মূর্তি স্থাপন করা হয়। ইংল্যান্ডের ইস্ট লন্ডনে ব্যক্তিমালিকানাধীন সম্পত্তিতে, যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে, ভারতের কলকাতা উপ-দূতাবাসে এবং ফ্রান্সের প্যারিস, তুরস্কের আঙ্কারা ও যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানে স্থানীয় সংস্থাগুলোর সহযোগিতায় এসব মূর্তি বসানো হয়েছিল। এসব মূর্তি নির্মাণে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে কোটি কোটি টাকা অপচয় করা হয়, যার বড় অংশ দুর্নীতির মাধ্যমে আত্মসাৎ করা হয়েছে।

২০১৭ সালে এমনই একটি মূর্তি স্থাপন করা হয়েছিল ওয়েস্টার্ন সিডনি ইউনিভার্সিটির প্যারামাটা ক্যাম্পাসে। মূর্তিটির উদ্বোধন উপলক্ষে বাংলাদেশ থেকে আসে তৎকালীন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলো বাংলাদেশ হাইকমিশনের কর্মকর্তারা, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত আওয়ামী রাজনীতির অনুসারী কিছু শিক্ষক।

এই মূর্তিটি স্থাপনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে প্রলুব্ধ করতে একটি প্রতারণার কৌশল নেয়া হয়। আওয়ামী লীগের লোকজন শেখ মুজিবকে বঙ্গোপসাগরের জলসীমা ও সামুদ্রিক আইন প্রণয়নের পথিকৃৎ হিসেবে উপস্থাপন করে। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সীড মানি হিসেবে কয়েক মিলিয়ন ডলার দিলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ডোনারের আগ্রহের বিষয় নিয়ে রিসার্চ সেন্টার স্থাপন করে। জনশ্রুতি রয়েছে ওয়েস্টার্ন সিডনি ইউনিভার্সিটির আইন অনুষদের অধীনে এরকম একটি সেন্টারের প্রতিষ্ঠার জন্য গরীব দেশ বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অস্ট্রেলিয়ার এ ইউনিভার্সিটিকে বিপুল পরিমাণ অর্থ দান করা হয়। স্থানীয় অনেকেই বলেন এই প্রকল্পের নামে হাজার কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে, যার বড় একটি অংশ আওয়ামীপন্থী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, গবেষক ও স্থানীয় আওয়ামী নেতারা কমিশন হিসেবে সরিয়ে নিয়েছে।

তথ্য অধিকার আইনের অধীনে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এ সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। আপাতদৃষ্টিতে দেখা যায় এই স্বল্পস্থায়ী গবেষণাকর্মের মূল উদ্দেশ্য ছিল অস্ট্রেলিয়ায় শেখ মুজিবের একটি মূর্তি স্থাপন এবং সেটিকে প্রোপাগান্ডার অংশ হিসেবে ব্যবহার করা। মুজিবের মূর্তি স্থাপনের কিছুদিন পরই রিসার্চ সেন্টারটি বন্ধ হয়ে যায়। যেহেতু পরবর্তীতে গবেষণা চালিয়ে যাওয়ার জন্য অর্থ সরবরাহের আর কোন দায় ছিলো না, ফলে কয়েক বছরের মধ্যেই তথাকথিত ‘ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ওশেন গভর্নেন্স’ কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। সামুদ্রিক আইন গবেষণার নামে পরিচালিত এই ভুয়া প্রকল্প বাতাসে মিলিয়ে গেলেও মুজিবের মূর্তিকে ঘিরে আওয়ামী সমর্থকদের কার্যকলাপ অব্যাহত থাকে।

পরবর্তী সময়ে প্রবাসী আওয়ামী অনুসারীরা মূর্তিটিকে ঘিরে বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও প্রচারণার আয়োজন করে। ‘জাতির পিতার ভাস্কর্যটি কেমন করে আমাদের হলো’, ‘সিডনিতে বঙ্গবন্ধুর আবক্ষ মূর্তি প্রবাসীদের তীর্থস্থান’— এ ধরনের বক্তব্য প্রচার করে নিয়মিত ফ্যাসিবাদী চেতনার মহিমা তুলে ধরা হয়।

যখন মুজিবের এ মূর্তিটি স্থাপন করা হচ্ছিলো তখন থেকেই অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন এবং প্রবাসীদের উল্লেখযোগ্য ব্যাক্তিরা ওয়েস্টার্ন সিডনি ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে তাদের আপত্তির বিষয়টি জানায়। কিন্তু যেহেতু আর্থিক মুনাফা জড়িত রয়েছে, কোন আপত্তিই কখনো শেষপর্যন্ত কাজ করেনি। অস্ট্রেলিয়া থেকে প্রকাশিত একমাত্র বাংলা পত্রিকা সুপ্রভাত সিডনির প্রধান সম্পাদক আবদুল্লাহ ইউসুফ শামীম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সাথে দীর্ঘদিন  এ বিষয়ে যোগাযোগ রেখে এবং দাবী জানিয়ে আসছিলেন। অস্ট্রেলিয়ার মাননীয় শিক্ষা মন্ত্রী জেসন ক্ল্যায়ারকে এ ব্যপারে অবহিত করা হয়। সিডনির একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে  এ ধরনের একটি অপকর্মের কথা মাননীয় মন্ত্রীর জানা ছিল না বলে জানা যায়।

২০২৪ সালের আগস্টে বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদের পতনের পর, আবদুল্লাহ ইউসুফ শামীমের নেতৃত্বে প্রবাসী বাংলাদেশীদের বেশ কয়েকটি সংগঠন আবারও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে। তারা শেখ মুজিবের স্বৈরশাসনের ইতিহাস, আওয়ামী লীগের দমনমূলক কর্মকাণ্ড এবং সাম্প্রতিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করে। প্রশ্ন তোলা হয়, একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয় কিভাবে সচেতনভাবে একজন স্বৈরাচারী একনায়কের মূর্তি প্রদর্শন করা হয়? সুপ্রভাত সিডনি হলো অস্ট্রেলিয়া থেকে বর্তমানে প্রকাশিত একমাত্র বাংলাভাষী কমিউনিটি পত্রিকা। পত্রিকাটির পক্ষ থেকে প্রশ্ন রাখা হয়, যে স্বৈরশাসক কেবলমাত্র নিজের নিয়ন্ত্রিত চারটি পত্রিকা রেখে বাকি সমস্ত পত্রিকাকে বন্ধ করে দেয়ার উদাহরণ তৈরি করেছিলো, মুক্তবুদ্ধি ও বিশ্লেষণী চিন্তার স্থান একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে কিভাবে তার মূর্তি প্রদর্শন করা হয়? উল্লেখ্য, শেখ হাসিনার পতনের পর বাংলাদেশ সফরকালে আবদুল্লাহ ইউসুফ শামীমকে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে ঢাকার বিমানবন্দরে আটক করা হয়। তবে প্রবাসী সাংবাদিক কনক সরওয়ারের তাৎক্ষণিক প্রচারাভিযান এবং বিএনপি ও জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের হস্তক্ষেপে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়।

দীর্ঘ আলোচনার পর, প্রমাণাদি পর্যালোচনা করে এবং সকল যুক্তি বিবেচনা করে ওয়েস্টার্ন সিডনি ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ তাদের সংশ্লিষ্ট কমিটিতে আলোচনা ও সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে মুজিবের মূর্তিটি সরিয়ে ফেলার কথা অফিশিয়ালি জানায় গত ২০ মার্চ ২০২৫ তারিখে। পরদিন মূর্তিটির স্থানে সুপ্রভাত সিডনির প্রতিনিধি গিয়ে দেখা দেখেন , যেখানে একসময় এটি স্থাপিত ছিল, সেখানে কেবল ঘাস সরানো কিছু মাটি রয়ে গেছে। কংক্রিটে বানানো বেদীর উপর স্থাপিত মূর্তিটি একেবারে সমূলে উৎপাটন করা হয়েছে। এই স্থানে যে কোন কালে কোন স্থাপনা ছিলো, কিছু মাটি ছাড়া তার আর কোন চিহ্ন অবশিষ্ট নেই।

অস্ট্রেলিয়া আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতার সাথে এই মুজিব-মূর্তি উৎপাটনের ঘটনায় প্রতিক্রিয়া ও মতামত জানার জন্য যোগাযোগ করা হলে তারা আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলতে রাজি হননি।

এই ঘটনা মুক্তিকামী জনগণের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিজয়। প্রবাসী বাংলাদেশীরা বিশ্বব্যাপী সচেষ্ট হলে এবং যুক্তিসম্মতভাবে শেখ মুজিবের প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরতে পারলে অন্যান্য দেশেও তার মূর্তিগুলো অপসারণ সম্ভব। স্বাধীনতার জন্য আত্মোৎসর্গ করা আবু সাঈদ, মুগ্ধ, ওয়াসিম, রিয়া গোপসহ হাজার হাজার শহীদ এবং আহতদের আত্মত্যাগের ফলেই বাংলাদেশের জনগণের মানবাধিকার ও স্বাধীনতা পুনরুদ্ধারের একটি সুযোগ তৈরি হয়েছে। আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দখলদার শক্তি ও কলকের প্রতীক এইসব মূর্তিগুলো অপসারণের প্রকৃত কৃতিত্ব ঐতিহাসিক জুলাই বিপ্লবের বীরদের প্রাপ্য। প্রবাসী বাংলাদেশীরা আশা করেন, বাংলাদেশের পরিচয় আওয়ামী ফ্যাসিবাদ ও স্বৈরশাসন দিয়ে হবে না, বরং পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশকে সম্মানের স্থানে তুলে ধরবে এ দেশের সংগ্রামী ও মুক্তিকামী সাধারণ মানুষেরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *