ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও ডাকাতির পিছনে ছাত্রলীগের অবদান: গোয়েন্দা তথ্য ও পুলিশের সতর্কতা

হ-বাংলা নিউজ: ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও ডাকাতির মতো অপরাধ উদ্বেগজনক হারে বেড়ে যাওয়ার পেছনে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হাত রয়েছে। নিষিদ্ধ ঘোষিত এই সংগঠনটির নেতারা পরিকল্পিতভাবে রাজধানী ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পেশাদার অপরাধীদের মাঠে নামাচ্ছেন। এমনকি কিছু ক্ষেত্রে তারা নিজেরাও এসব অপরাধে যুক্ত হচ্ছে। গোয়েন্দা সংস্থার অনুসন্ধানে সম্প্রতি এসব অপরাধের পেছনে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের involvement থাকার চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে।

এছাড়া, পুলিশের নির্দেশনায় জড়িতদের তালিকা প্রণয়ন এবং অপরাধের পেছনে থাকা ৫টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এসব নির্দেশনা ইতোমধ্যে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে মাঠ পর্যায়ে পাঠানো হয়েছে।

পুলিশের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, পাঁচটি বিষয়ের উপর নজর দেওয়া হচ্ছে:
১. ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ,
২. রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা এবং সামাজিক কার্যক্রম,
৩. তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা,
৪. তাদের পূর্ণ নাম, পরিচয়, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, পাসপোর্ট নম্বর (যদি থাকে),
৫. অতীত ও বর্তমান কার্যক্রমের বিস্তারিত তথ্য, এবং পূর্ববর্তী কোনো মামলা বা জিডির তথ্য।

পুলিশ সদর দপ্তর জানিয়েছে, এই তালিকা তৈরির মূল উদ্দেশ্য হলো নিষিদ্ধ এই সংগঠনের নেতাকর্মীদের কার্যক্রম এবং গতিবিধি নজরদারি করা, কোনো ধরনের হয়রানি বা মামলার জন্য নয়। গোয়েন্দা সংস্থা এবং পুলিশ দাবি করছে, নিষিদ্ধ সকল সংগঠনের নেতাকর্মীদের সম্পর্কে এমন তথ্য সংগ্রহ করা অপরিহার্য।

গত ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আত্মগোপন করেন। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর গত ২৩ অক্টোবর ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এর পর থেকেই ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে বলে গোয়েন্দা তথ্য প্রকাশ পেয়েছে।

গোয়েন্দা সংস্থাগুলি জানিয়েছে, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ফেসবুক, মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ এবং অন্যান্য অ্যাপসের মাধ্যমে সংগঠিত হয়ে নানা অপরাধ কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। তারা কিশোর গ্যাং, মাদকসেবী এবং চিহ্নিত অপরাধীদের ব্যবহার করে চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধ সংগঠিত করছে। এছাড়া, এসব কর্মকাণ্ড পরিচালনায় প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তা তাদের দেওয়া হচ্ছে।

বিগত দিনগুলোতে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের একটি অডিও ভাইরাল হয়েছে, যেখানে তিনি ঢাকায় অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। অডিওতে তিনি বলেন, “যে শহরে আমাদের নেতাকর্মী দিনের বেলায় চলাচল করতে পারবে না, সে শহরে রাতে কেউ ঘুমাতে পারবে না।”

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেছেন, ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়ার পরেও সংগঠনটির পুনর্গঠন বা নতুন শক্তি তৈরির সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। ছাত্রলীগ একসময় আওয়ামী লীগের শক্তিশালী শাখা হিসেবে পরিচিত ছিল এবং নানা সময় ক্যাম্পাসগুলোতে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে তারা যুক্ত ছিল।

সাবেক আইজিপি মোহাম্মদ নুরল হুদা যুগান্তরকে বলেন, “যে কেউ রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য হুমকি সৃষ্টি করবে, তাদের তালিকা তৈরি করা এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া আইনগতভাবে সঠিক। এটি শুধুমাত্র ছাত্রলীগের জন্য নয়, বরং সকল নিষিদ্ধ সংগঠনের জন্য প্রযোজ্য।”

রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং সাংবাদিক মাসুদ কামাল বলেছেন, “ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের যারা চিহ্নিত অপরাধী, তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। তা না হলে তারা নতুনভাবে সংগঠিত হয়ে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়াবে।”

এছাড়া, অনেক আত্মগোপনকারী ছাত্রলীগ নেতা রাজনৈতিক দল ও ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে আশ্রয়ের জন্য চেষ্টা করছে, এবং এসব দলও তাদের নিজেদের শক্তি বাড়াতে এসব নেতাকর্মীদের কাছে টানছে।

এতথ্য বিশ্লেষণে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, ছাত্রলীগের নিষিদ্ধ ঘোষিত নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে দেশে অস্থিতিশীলতা আরও বৃদ্ধি পাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *