হ-বাংলা নিউজ: তিন দিনের সম্মেলন শেষে জেলা প্রশাসকরা (ডিসি) সরকার থেকে ১২টি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা নিয়ে তাদের দায়িত্ব পালন করতে মাঠে ফিরে এসেছেন। সরকারের নীতিনির্ধারকরা তাদের আইন ও বিবেক অনুসরণ করে প্রভাবমুক্ত হয়ে কাজ করার তাগিদ দিয়েছেন। নির্বাচনি দায়িত্ব পালনে তাদের নির্ভয়ে কাজ শুরু করতে বলা হয়েছে। এছাড়া, তারা যেন কারো রক্তচক্ষুর কাছে নতি স্বীকার না করে এবং নিজের ওপর আস্থা রেখে সরকারি নির্দেশনা পালন করেন, এ বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, কালোবাজারি, মজুতদার ও বাজার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের তাগিদও দেওয়া হয়েছে।
সম্মেলন:
১৬ ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়া জেলা প্রশাসকদের তিন দিনের সম্মেলনে মোট ৩৪টি পৃথক কর্ম-অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলন উদ্বোধন করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ডিসিরা এবারের সম্মেলনে ৩৫৪টি প্রস্তাব পেশ করেন, যা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। সম্মেলনে মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা, সিনিয়র সচিব, সচিব এবং অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
১২টি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা:
এ সম্মেলনের ১২টি মূল নির্দেশনায় রয়েছে—
- সরকারি সম্পদ জবরদখল রোধ, খাল, নদী ও অন্যান্য প্রাকৃতিক জলাধারের সংরক্ষণ, বিদ্যুৎ সরবরাহ নির্বিঘ্ন করা, কৃষি উপকরণের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করা, উন্নয়ন প্রকল্পের তদারকি এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনিয়ম ও দুর্নীতিরোধে পদক্ষেপ গ্রহণ।
- একইসাথে, চিকিৎসা সেবায় হয়রানি বন্ধ এবং সব ধরনের সেবা অনলাইনে দেওয়া নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি:
বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে, ডিসি সম্মেলন থেকে বলা হয়েছে, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে উন্নীত করা সম্ভব হয়নি। পুলিশসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন, বিশেষ করে গত বছরের ৫ আগস্ট স্বৈরাচার পালানোর পর পুলিশি অস্ত্র লুট হওয়ার ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যক্রম দুর্বল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে প্রায় আড়াই লাখ গুলি উদ্ধার না হওয়া সন্ত্রাসীদের হাতে চলে যেতে পারে। এসব কারণে ডিসিদের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সুসংহত করতে বাড়তি নজরদারি চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে যৌথ বাহিনীর সহায়তা নেওয়ার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে।
নির্বাচন সংক্রান্ত নির্দেশনা:
নির্বাচন সংক্রান্ত কাজ শুরুর তাগিদও দেওয়া হয়েছে ডিসিদের। প্রধান নির্বাচন কমিশনার তাদের উদ্দেশে বলেন, “আমরা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি, আপনাদেরও আমাদের সহযোদ্ধা হিসেবে কাজ শুরু করতে হবে। এটি একটি যুদ্ধ, আমাদের লক্ষ্য একটি সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দেওয়া।” ডিসিদের বলেন, নির্বাচনে যেকোনো ধরনের বাধা বা সমস্যায় তারা নির্ভয়ে কাজ করবেন।
রমজান ও খাদ্য সরবরাহ:
আসন্ন মাহে রমজানে নিত্যপণ্য সাধারণ মানুষের নাগালে রাখতে ডিসিদের বিশেষ পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। সরকার ওপেন মার্কেট সেল (ওএমএস) ও টিসিবি’র মাধ্যমে সুলভমূল্যে খাদ্য সরবরাহ করবে। ঈদ উপলক্ষে বিনামূল্যে ১০ কেজি চাল দেওয়ার উদ্যোগও রয়েছে। এসব সরকারি উদ্যোগের সুষ্ঠু বণ্টন নিশ্চিত করতে ডিসিদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
এছাড়া, বাজারে ভোজ্যতেলের সংকট সৃষ্টি হওয়া, কালোবাজারি, মজুতদারির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে ডিসিদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যাতে কেউ সরকারের উদ্যোগের বিরুদ্ধে অপতৎপরতা চালাতে না পারে।
কৃষি উৎপাদন:
দেশের কৃষি উৎপাদন বাড়ানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। চলতি বোরো মৌসুমে কৃষকদের সার, বীজ এবং সেচ সুবিধা নির্বিঘ্নে পাওয়ার ব্যবস্থা করতে ডিসিদের তাগিদ দেওয়া হয়েছে। কৃষিকাজে বিদ্যুৎ সরবরাহও যাতে নিরবচ্ছিন্ন থাকে, তা তদারকি করতে বলা হয়েছে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর অনিয়ম:
দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির ঘটনা ঘটে, যেমন— ভর্তি বাণিজ্য, অভিভাবক কমিটির সঙ্গে মারামারি ও মামলা-হামলা, এবং দোকানঘর ভাড়া দেওয়ার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ। এসব অপরাধ মোকাবেলায় ডিসিদের কার্যকর পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান:
সরকারের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দুর্নীতি দেশের এক নম্বর সমস্যা এবং এটি দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিদেশেও প্রভাব ফেলছে। ডিসিদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেবেন এবং এর বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
