হ-বাংলা নিউজ: নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতৈক্য না থাকলেও নির্বাচন কমিশন (ইসি) জাতীয় সংসদের সীমানা নির্ধারণ আইনের সংশোধন চূড়ান্ত করেছে। এতে বিদ্যমান আইনের ৪, ৬ এবং ৮ নম্বর ধারায় সংশোধনীর প্রস্তাব করা হয়েছে। সম্প্রতি এই সংশোধনী ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে এবং এতে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের কিছু সুপারিশ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তবে অনেক সুপারিশই বাদ দেওয়া হয়েছে। বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতারা জানান, তাদের মতামত নেওয়া হয়নি এই সংশোধনীর আগে।
সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচন ব্যবস্থাসহ ছয়টি কমিশনের সংস্কার প্রতিবেদনের সুপারিশের আলোচনার জন্য ১৩ ফেব্রুয়ারি জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠিত হয়, যার নেতৃত্বে রয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে একবার বৈঠকও করেছে। তবে ইসি সংশোধনী প্রস্তাবটি ১২ ফেব্রুয়ারি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে, সরকারের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে। আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠিতে ইসি জানায়, ৫১টি নির্বাচনি এলাকার সীমানা নিয়ে ৩৩১টি আবেদন নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে, যেখানে বিদ্যমান আইনের ৪, ৬ এবং ৮ নম্বর ধারার শর্ত প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে।
নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের বেশিরভাগ সুপারিশ আমরা আমলে নিয়ে সীমানা নির্ধারণ আইনের সংশোধনী চূড়ান্ত করেছি, যা এখন আইন মন্ত্রণালয়ে আছে। তিনি জানান, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ একটি জরুরি কাজ, তাই সংশোধনী প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে এবং আগস্ট-সেপ্টেম্বরের মধ্যে এটি শেষ করতে চায় ইসি।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের এক সদস্য বলেন, রাজনৈতিক দলের মতামত নেওয়ার আগে আইন সংশোধন করা এক ধরনের অসঙ্গতি। তারা মনে করেন, সুপারিশের ভিত্তিতে আইন সংশোধনী নির্ধারণ হওয়া উচিত।
ইসি সূত্রে জানা গেছে, ডিসেম্বরে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনে প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসি। সীমানা নির্ধারণ আইনের সংশোধন না হওয়ায় কাজ শুরু করা যাচ্ছে না, তবে আইন সংশোধিত হলে ৫-৬ মাস সময় লাগবে সীমানা নির্ধারণ প্রক্রিয়া শেষ করতে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী জানান, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারে এখনও কোনো আলোচনা হয়নি এবং তারা দলের ফোরামে আলোচনা করার আগে কোনো মন্তব্য করতে পারছেন না।
আইন সংশোধনীর প্রস্তাব:
এ সংশোধনীতে নতুন আইন চাওয়ার পরিবর্তে বিদ্যমান আইনের ৪, ৬ এবং ৮ নম্বর ধারায় কিছু সংশোধনী আনা হয়েছে:
- ৪ নম্বর ধারায়: সীমানা পুনর্নির্ধারণ কমিটিতে ভূগোলবিদ, মানচিত্রকার, পরিসংখ্যানবিদ ও নগর পরিকল্পনাবিদদের অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
- ৬ নম্বর ধারায়: সীমানা নির্ধারণের মানদণ্ডে ভৌগোলিক অখণ্ডতা, প্রশাসনিক সুবিধা, সর্বশেষ জনশুমারি এবং ভোটার সংখ্যা অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। এছাড়া, সিটি করপোরেশন, ইউনিয়ন ও পৌরসভার ওয়ার্ড বিভক্ত করা যাবে না। সংশোধনীর মাধ্যমে শহর এলাকায় আসন বাড়ানো হবে না, বরং গ্রামের আসন বাড়বে।
- ৮(৩) ধারায়: ৮(৩) উপধারা সংশোধনের মাধ্যমে পূর্ববর্তী অবস্থায় ফিরিয়ে আনার প্রস্তাব করা হয়েছে, যা জাতীয় সংসদের সীমানায় বড় ধরনের রদবদলের পথ খুলে দেয়।
রাখা হয়নি বেশ কিছু সুপারিশ:
জাতীয় সংসদের সীমানা নির্ধারণে ভূগোলবিদ, মানচিত্রকার, পরিসংখ্যানবিদ, নগর পরিকল্পনাবিদ ও জনসংখ্যাবিদদের সমন্বয়ে বিশেষায়িত কমিটি গঠনের সুপারিশ ছিল সংস্কার কমিশনের। তবে ইসি এই কমিটি গঠনের প্রস্তাব দেয়নি। এছাড়া, সীমানা নির্ধারণে জেলা পর্যায়ে দাবির শুনানি করার সুপারিশও বাদ দেওয়া হয়েছে।
এভাবে, প্রস্তাবিত সংশোধনী আইনের চূড়ান্ত প্রস্তাব রাজনৈতিক দলের মতামতের অমিল এবং সংশোধনী প্রস্তাবের ব্যাপারে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।
