তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম অর্থনৈতিক সংগ্রাম এবং একটি সদা পরিবর্তনশীল রাজনৈতিক পরিবেশের মাঝেও জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে অন্তর্বর্তী সরকারের দৃঢ় প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তবে তিনি সতর্ক করেছেন যে, সামনে পথটা সহজ হবে না।
বর্তমান সরকারের ছয় মাস পূর্তি উপলক্ষে রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা বাসসকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘স্থিতিশীলতা এবং ঐক্য বজায় রাখা এবং রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করার পাশাপাশি জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ।’ তিনি আরও বলেন, এই যাত্রা খুব মসৃণ হবে না।
২০১৩ সালের জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানকালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা হিসেবে অগ্রণী ভূমিকা পালনকারী নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলো কাটিয়ে উঠে দেশের জনগণের ইচ্ছাকে প্রতিফলিত করে এমন একটি ভবিষ্যত গঠনে অবিচল রয়েছি।’
উপদেষ্টা জানান, গত ছয় মাসে সরকারের পথচলা ছিল অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক ষড়যন্ত্র, শতাধিক আন্দোলন, অর্থনৈতিক সংকট এবং রাজনৈতিক চাপের সম্মুখীন হওয়ার মতো এক চ্যালেঞ্জপূর্ণ অভিজ্ঞতা।
অব্যাহত চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও নাহিদ ইসলাম বিশ্বাস করেন যে, সরকার অব্যাহত সংলাপ এবং সহযোগিতার মাধ্যমে ৮ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা সরকারের মাধ্যমে জাতির পরিবর্তন সাধন করতে পারবে।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ এবং আইসিটি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করা নাহিদ ইসলাম বলেন, “আগামী রাস্তাটি এত মসৃণ হবে না। তবে সঠিক সমর্থন পেলে অন্তর্বর্তী সরকার দেশের জন্য একটি আরও স্থিতিশীল ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের ভিত্তি স্থাপন করতে পারবে।”
তিনি জানান, জনগণের বিপুল প্রত্যাশা রয়েছে সরকারের ওপর, বিশেষত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি, খুনিদের বিচার নিশ্চিত করা, এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করার বিষয়ে।
সরকারের সামনে অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করে নাহিদ ইসলাম বলেন, “আমরা যখন প্রশাসনের দায়িত্ব গ্রহণ করি, তখন বিশৃঙ্খলা ছিল। আমলাতন্ত্র ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো সুশৃঙ্খল ছিল না এবং আমাদেরকে সেখান থেকে পুনর্গঠন করতে হয়েছিল।”
তিনি আরও বলেন, “আগের প্রশাসনের দুর্নীতি এবং চাঁদাবাজি দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা সৃষ্টি করেছিল, যা একদিনে দূর করা সম্ভব নয়।”
রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে, নাহিদ ইসলাম গণ-অভ্যুত্থানের শক্তির মধ্যে যে বিভাজন সৃষ্টি হয়েছে, সে সম্পর্কে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, “অব্যুত্থান বিভিন্ন গোষ্ঠীকে একত্রিত করেছিল, তবে অনেকেই জাতীয় কল্যাণের বদলে নিজেদের স্বার্থকে প্রাধান্য দিতে শুরু করেছিল।”
এই বিভাজন নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করে নাহিদ বলেন, “যে ঐক্য ছিল তা ক্ষীণ হয়ে গেছে, এবং সরকারের সংস্কার প্রচেষ্টায় এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।” তবে তিনি আশাবাদী যে, এই বিভাজন অতিক্রমযোগ্য হবে। তিনি বলেন, “আমি বিশ্বাস করি, ঐক্য সম্পূর্ণভাবে হারিয়ে যায়নি। আমরা আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি এবং বিভাজনমূলক অভ্যাস থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করছি।”
সংস্কার এবং ঐক্য গঠন সম্পর্কিত বক্তব্যে নাহিদ ইসলাম বলেন, “সরকারের সাফল্যের মাধ্যমে ঐক্য গঠন সম্ভব হবে এবং তা আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ হবে। আগামী মাসগুলোতে তা প্রমাণ হবে।”
তিনি জোর দিয়ে বলেন, “যেকোনো অর্থপূর্ণ পরিবর্তন আনতে রাজনৈতিক সদিচ্ছা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এবং আমরা আশা করি রাজনৈতিক দল ও জনগণ একসাথে কাজ করবে।”
এছাড়া, গণমাধ্যমের স্বাধীনতার বিষয়ে নাহিদ ইসলাম পরিষ্কারভাবে বলেন, সরকার গণমাধ্যমের সমালোচনায় হস্তক্ষেপ করেনি। তিনি আরও বলেন, “গণমাধ্যমের সমালোচনা করার জন্য এখন পর্যন্ত কোনো চাপ প্রয়োগ করা হয়নি।”
নাহিদ ইসলাম জানান, সরকার যখন মুক্ত গণমাধ্যমের ধারণাকে সমর্থন করে, তখন এটি সংবেদনশীল বিষয়ে যেমন নিষিদ্ধ ছাত্র সংগঠন ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের প্রতিবেদন করার সময় সতর্ক হতে বলেছে।
তিনি স্বীকার করেছেন, কিছু মিডিয়া আউটলেট সামাজিক চাপ ও প্রতিবাদের লক্ষ্যে পরিণত হয়েছে, তবে তিনি উল্লেখ করেন যে, সরকার এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থা তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
এই চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও নাহিদ ইসলাম সরকার অবাধ ও মুক্ত গণমাধ্যম পরিবেশ গড়ে তোলার প্রতি দৃঢ় প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন।
