ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের নীতির পরিণতি: অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদী সংকট

হ-বাংলা নিউজ:

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের গৃহীত নীতির কারণে দেশের সার্বিক অর্থনীতি দীর্ঘমেয়াদে এক ভয়াবহ দুষ্টচক্রে পতিত হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার আগস্টে দায়িত্ব গ্রহণের পর একটি ভঙ্গুর অর্থনীতি পেয়েছে, যেখানে ছয় মাসের মধ্যে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হলেও পরিস্থিতি উন্নত করা সম্ভব হয়নি। বন্যার প্রভাবও অর্থনীতির পুনরুদ্ধারে নতুন সমস্যা সৃষ্টি করেছে। এসব কারণে, সরকারের গৃহীত পদক্ষেপগুলোর সুফল পুরোপুরি দৃশ্যমান হয়নি।

মূল্যস্ফীতির হার বৃদ্ধির অন্যতম কারণ পণ্যমূল্যের অস্থিতিশীলতা, যা এখনো নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি। যদিও অক্টোবরের পর থেকে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমতে শুরু করেছে, তবে সরকার আগামী জুনের মধ্যে ৭ থেকে ৮ শতাংশের মধ্যে মূল্যস্ফীতি নামানোর লক্ষ্যে কাজ করছে।

এদিকে, বিভিন্ন সিন্ডিকেটের হাত থেকে ভোক্তারা জিম্মি হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে আমন মৌসুমে অসাধু মিলারদের কারসাজিতে চালের মূল্য আকাশ ছুঁয়েছে। সয়াবিন তেল, মসুর ডালসহ একাধিক পণ্যের দাম বেড়েছে এবং বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা হচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের সাবেক ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বলেন, “সিন্ডিকেট চক্রগুলো ধরতে সরকারকে গোয়েন্দাগিরি চালাতে হবে এবং এসব বাজারে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।”

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেশের অর্থনীতি রক্তশূন্য হয়ে পড়েছিল। তাদের দুর্নীতি ও লুটপাটের ফলে প্রতিবছর গড়ে ১৬০০ কোটি ডলার পাচার হয়ে গেছে। এর প্রভাব হিসেবে ব্যাংক খাতে তারল্য কমে গিয়েছিল, এবং রাজস্ব আয়েও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছিল। ১৫ বছর ধরে চলা ঋণ নীতির কারণে মূল্যস্ফীতি বাড়তে থাকে, যার ফলে বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়।

পূর্ববর্তী সরকারের পতনের পর, নতুন সরকার কিছু পদক্ষেপ নিলেও মূল্যস্ফীতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে। তবে জানুয়ারিতে মূল্যস্ফীতির হার কমে ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশে পৌঁছেছে, কিন্তু খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতির হার এখনও ডাবল ডিজিটে রয়েছে। এর ফলে, বিশেষত স্বল্প-আয়ের মানুষ ভোগান্তির শিকার হচ্ছে।

বর্তমান সরকার মূল্যস্ফীতি কমানোর জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাধ্যমে সুদের হার বৃদ্ধি করেছে, তবে এর কারণে উৎপাদন খাতে টাকার জোগান কমে গেছে, ফলে জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার কমে গেছে। আমদানি বৃদ্ধি করতে গেলেও ডলারের উপর চাপ পড়ে, যার ফলে মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে যায়।

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর দেশ থেকে টাকা পাচার কমে গেছে, যার ফলে ডলারের প্রবাহ কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। এ কারণে বৈদেশিক রিজার্ভে কিছুটা উন্নতি হয়েছে এবং ডলারের দামও স্থিতিশীল হয়েছে। তবে অভ্যন্তরীণ খাতে নেতিবাচক প্রভাব এখনও দৃশ্যমান, যেখানে ব্যবসায়ীরা দুর্নীতির শিকার হয়ে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

যদিও বর্তমান সরকার রাজস্ব আয় বৃদ্ধি করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, তবুও কিছু ক্ষেত্রে ভ্যাট এবং সেবার ফি বৃদ্ধির কারণে পণ্যের দাম বেড়েছে, যা জনসাধারণের জন্য চাপের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *