হ-বাংলা নিউজ:
রাজধানীর উত্তরায় র্যাব-১ কার্যালয়ের প্রধান ফটক আটকে গুম ও অপহরণের সঙ্গে জড়িতদের বিচার দাবিতে ভুক্তভোগীরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন। শুক্রবার জুমার নামাজের পর তারা সেখানে ব্যানার নিয়ে বসে পড়েন এবং র্যাব-১-এর ভেতরে থাকা গুমঘর বা বিশেষ টর্চার সেল পরিদর্শন করতে প্রধান উপদেষ্টা এবং গুম কমিশনের সদস্যদের অনুরোধ করেন। ভুক্তভোগীরা ঘোষণা করেন যে, তারা এ অবস্থান কর্মসূচি অব্যাহত রাখবেন যতক্ষণ না তাদের দাবির সুরাহা হয়।
শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায়, র্যাব-১ কার্যালয়ের সামনে শতাধিক ছাত্র, তরুণ এবং বিভিন্ন মাদ্রাসার শিক্ষক অবস্থান নেন। ফটকে টানানো ব্যানারে লেখা ছিল, “হাসিনা রেজিমের সব গোপন বন্দিশালা উন্মোচন, গুমের সঙ্গে জড়িতদের বিচার ও সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে ভুক্তভোগীদের গণ-অবস্থান কর্মসূচি।” এই কর্মসূচিটি “কাউন্সিল এগেইনস্ট ইনজাস্টিস (সিএআই)” নামক অনলাইন প্ল্যাটফর্মের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয়।
সম্মেলনে অংশ নেওয়া সংগঠনের সমন্বয়ক শের মোহাম্মদ, যিনি চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসার তরুণ শিক্ষক, বলেন, তিনি ২০২২ সালে র্যাবের হাতে গুমের শিকার হন এবং র্যাব-১ কার্যালয়ের ভেতরে এক বিশেষ টর্চার সেলে তাকে ২৩ দিন আটকে রাখা হয়। পরবর্তীতে মিথ্যা মামলায় কারাগারে পাঠানো হয় এবং দীর্ঘদিন হাজতবাস করতে হয়। তিনি বলেন, “আমরা গুমের শিকার সবাই বিচারের দাবিতে এখানে এসে একে একে জড়ো হয়েছি।”
তিনি আরও বলেন, “এখানে যে গুম সেলগুলো রয়েছে, সেগুলো উন্মোচন করা উচিত, কারণ এগুলো গুরুতর অপরাধের জ্বলন্ত সাক্ষ্য। এগুলোর উন্মোচন না হলে এর সঙ্গে জড়িত অপকর্ম চাপা পড়ে যাবে।” শের মোহাম্মদ অভিযোগ করেন, তাদের উন্মোচনের আশ্বাস দেওয়া হলেও ছয় মাসেও কিছু করা হয়নি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “র্যাবের ডিজি এক সময় বলেছিলেন যে, এখানে কোনো গুম সেল নেই, কিন্তু গুম সংক্রান্ত কমিশন এখন স্পষ্টভাবে বলেছে যে, তারা টর্চার সেলের অস্তিত্ব খুঁজে পেয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “আমরা যতক্ষণ পর্যন্ত প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এখানে না আসবেন, আমাদের অবস্থান কর্মসূচি চলবে।”
এছাড়া, বন্দিদের গুমের পদ্ধতি সম্পর্কে ভুক্তভোগীরা জানান, র্যাব-১ এর ফটকে বন্দিদের প্রথমে কিছু সময় রাখা হয়, এরপর তাদের উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়। তারা বলেন, “খুনি হাসিনার সময়ে যারা এগুলো নিয়ন্ত্রণ করত, তারা এখন নিজেদের মধ্যে একটি সিন্ডিকেট তৈরি করেছে। এই সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে, না হলে দেশের পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।”
একজন ভুক্তভোগী বলেন, “এ আগে মেজর নাভিদ কায়সার নামে এক র্যাব কর্মকর্তার নিষ্ঠুর নির্যাতনের খবর একটি বিদেশি মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছিল। তবে অবাক করা বিষয় হলো, যখন আমরা বিচারের দাবিতে এখানে এসেছি, তখন সেই নির্যাতনকারী মেজর নাভিদ কায়সার আমাদের সঙ্গে কথা বলতে আসেন।”
প্রধান ফটকের আশপাশে সাদা পোশাকে র্যাবের গোয়েন্দা সদস্যদের তথ্য সংগ্রহ করতে দেখা যায়। কর্পোরাল সোহাগ নামে একজন গোয়েন্দা সদস্য জানান, তারা উপরের স্যারের নির্দেশে তথ্য সংগ্রহ করছেন। অবস্থান কর্মসূচির কারণে র্যাব-১ কার্যালয়ের যানবাহন এবিপিএন কার্যালয়ে ঘুরে যাতায়াত করতে দেখা যায়।
