Title:ট্রেনযাত্রীদের দুর্ভোগ অব্যাহত, রেলপথ অবরোধে বাড়ছে সমস্যা

হ-বাংলা নিউজ:

ট্রেনযাত্রীদের দুর্ভোগ যেন কোনোভাবেই থামছে না। দাবির পক্ষে আন্দোলনের অংশ হিসেবে ট্রেন অবরোধ, ভাঙচুর এবং যাত্রীদের হামলা চলছে। ইট-পাটকেল দিয়ে কোচের জানালার গ্লাস ভেঙে যাত্রীরা গুরুতর আহত হচ্ছেন, এবং ঘণ্টার পর ঘণ্টা বগিতে আটকে থেকে যাত্রীদের ভোগান্তি বাড়ছে। রেলপথে একের পর এক অবরোধের ফলে স্বস্তি ও নিরাপদ ট্রেন ভ্রমণ ক্রমেই অস্বস্তিকর হয়ে উঠছে। বর্তমান পরিস্থিতি চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে।

যেকোনো স্থানে রেলপথ অবরোধ হলে পুরো রেল চলাচল ব্যবস্থায় বিরূপ প্রভাব পড়ে। ট্রেন বিলম্বিত কিংবা বাতিল হলে যাত্রীদের বিরাট সমস্যা সৃষ্টি হয়। পরপর ঘটে যাওয়া কয়েকটি অবরোধের ফলে যাত্রীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। গত ২-৩ দিন ধরে রেল শিডিউল বিপর্যস্ত হচ্ছে এবং ট্রেনগুলো ৫ থেকে ১১ ঘণ্টা বিলম্বিত হয়ে চলছে।

সোমবার ঢাকার মহাখালী লেভেল ক্রসিংয়ে তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের রেলপথ অবরোধের ফলে ট্রেন শিডিউল বিপর্যয় চরম আকার ধারণ করে। মঙ্গলবারও ট্রেন চলাচল ৫ থেকে ৮ ঘণ্টা বিলম্বিত হয়েছে। সোমবার পাঁচটি এবং মঙ্গলবার একটি ট্রেন বাতিল করা হয়, যার ফলে হাজার হাজার টিকিটের টাকা ফেরত দিতে হয়েছে রেল কর্তৃপক্ষকে। রেলওয়ে অপারেশন দপ্তরের সূত্র মতে, ছয় মাসে ঢাকাসহ সারা দেশে ২২ বার রেলপথ অবরোধ করা হয়েছে এবং ট্রেন ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটেছে। এই সব কারণে ট্রেন চলাচল প্রায় ৩০ ঘণ্টা বন্ধ থাকে, এবং একদিন ট্রেন বন্ধ থাকলে রেলকে প্রায় ৬ কোটি টাকা লোকসান হয়।

মঙ্গলবার রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ফাহিমুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, সাধারণ মানুষ ট্রেনে নিরাপদ ও সাশ্রয়ী ভ্রমণ করেন, কিন্তু রেলপথ অবরোধ ও ট্রেন আটকে দাবির আদায় করায় রেলওয়ের আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে এবং যাত্রীরা দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। তিনি বলেন, রেলপথ অবরোধ ও ট্রেন আটকে আর কোনো দাবি আদায় করা উচিত নয় এবং সব বিষয়ে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে হবে।

রেলওয়ে অপারেশন ও পরিবহণ দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক থাকায় রেলপথে যাত্রী পরিবহণ কিছুটা কমেছে। এক কর্মকর্তা জানান, এমন পরিস্থিতিতে বিনা টিকিটে যাত্রীর সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে, বিশেষ করে লোকাল, মেইল ও কমিউটার ট্রেনগুলিতে।

রেলওয়ে যান্ত্রিক প্রকৌশল দপ্তর জানায়, রেলপথে পাথর নিক্ষেপ ও ভাঙচুরের কারণে কোচ ও ইঞ্জিনের জানালার গ্লাস ভেঙে যাচ্ছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত কোচ-বগি মেরামত করা সম্ভব হচ্ছে না। এর কারণে ট্রেন কম সংখ্যক কোচ নিয়ে চলতে হচ্ছে। ট্রেনচালক ও গার্ডের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। একাধিক ট্রেনচালক ও গার্ড জানান, তাদের জীবন ঝুঁকিতে থাকলেও তারা ট্রেন চালাচ্ছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর এক কর্মকর্তা জানান, রেলপথ অবরোধ ঠেকানোর মতো জনবল তাদের নেই, ফলে তারা বাধ্য হয়ে তা শুধু দেখতেই পারেন। রেলওয়ে পুলিশপ্রধান সরদার তমিজ উদ্দিন আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, ট্রেনযাত্রীদের সেবা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তারা তৎপর রয়েছেন এবং বারবার অনুরোধ করছেন, রেলপথ অবরোধ বা ট্রেন আটকে দাবির আদায় কোনোভাবেই যুক্তিযুক্ত হতে পারে না।

কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার আনোয়ার হোসেন বলেন, ট্রেন আটকে বা অবরোধ করে দিলে শত শত যাত্রী কমলাপুর স্টেশনে জড়ো হন, যার ফলে উত্তেজিত যাত্রীরা স্টেশন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর চড়াও হন এবং কখনও কখনও ভাঙচুর ও নাজেহাল করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *