বাংলাদেশ ইন্ডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশন (বিপ্পা) নেতারা বিদ্যুৎ খাতে বেসরকারি কেন্দ্রগুলোর লুটপাটের অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। একইসঙ্গে তারা বেসরকারি খাতের বিদ্যুৎ উৎপাদকদের জন্য একটি যৌথ টাস্কফোর্স গঠনের দাবি জানিয়েছেন। এছাড়া, বিদ্যুৎ খাতের ট্যারিফ পর্যালোচনায় গঠিত কমিটিকে স্বাগত জানিয়েছে বিপ্পা।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে বিপ্পা আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন সংগঠনের নেতারা। সংবাদ সম্মেলনে বিদ্যুৎ খাতের সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরেন বিপ্পার সাবেক সভাপতি ও কনফিডেন্স গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান ইমরান করিম। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন সংগঠনের বর্তমান প্রেসিডেন্ট কেএম রেজাউল হাসনাত।
বিপ্পার সভাপতি জানান, বর্তমানে বেসরকারি খাতে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর বকেয়া পরিমাণ প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ফার্নেস অয়েলভিত্তিক কেন্দ্রগুলোর বকেয়া ১০ হাজার কোটি টাকা এবং অন্যান্য বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বকেয়া ৫ থেকে ৬ হাজার কোটি টাকা। তিনি বলেন, “আমাদের বিল সাধারণত ৩০ দিনের মধ্যে পরিশোধ করার কথা থাকলেও পিডিবি তা করছে না। এর ফলে আমরা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য প্রয়োজনীয় জ্বালানি কিনতে পারছি না। ফার্নেস অয়েল আমদানি করতে সর্বোচ্চ ৪৫ দিন সময় লাগে, আর বকেয়া না পাওয়ায় গ্রীষ্মকালে বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালাতে সমস্যা হতে পারে। ফলে গ্রীষ্মে বিদ্যুৎ সঙ্কট সৃষ্টি হতে পারে, যা লোডশেডিংয়ে পরিণত হতে পারে এবং ঘাটতি দুই থেকে তিন হাজার মেগাওয়াট হতে পারে।”
বেসরকারি খাতে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর লুটপাটের বিষয়ে তিনি বলেন, “এটা ঠিক হবে না, সবাইকে এক ধরনের ভাবা। কেউ কেউ করতে পারে। তবে আমরা নিশ্চিতভাবে দাবি করছি যে, এই লুটপাটের অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া উচিত।”
ভারতের আদানি গ্রুপ থেকে বিদ্যুৎ কেনার প্রসঙ্গে তিনি জানান, “আদানির বিদ্যুৎ কেনার ওপর কোনো ট্যাক্স-ভ্যাট নেই, কিন্তু তেলের ওপর ১৫ শতাংশের বেশি ট্যাক্স-ভ্যাট রয়েছে। আদানির বিদ্যুৎ ইউনিট প্রতি ১৭ টাকা ২০ পয়সা হলেও, তেলের ভ্যাট-ট্যাক্সসহ খরচ ১৭ টাকা ০৬ পয়সা হয়।”
তিনি বলেন, “আদানির সঙ্গে চুক্তি করার আগে সরকার সুকৌশলে ফার্নেস অয়েলভিত্তিক কেন্দ্রগুলোর তুলনায় কম দামের প্রচার চালায়, যা আমরা বহুবার সরকারের বিভিন্ন ফোরামে উল্লেখ করেছি।”
ট্যারিফ পর্যালোচনায় গঠিত কমিটি সম্পর্কে বিপ্পা সভাপতি বলেন, “এটা আমরা আগে থেকেই জানতাম এবং এতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। আমরা চাই যে, সরকার প্রতিটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পর্যালোচনা করুক।”
ইমরান করিম আরও বলেন, চলতি বছর পিক আওয়ারে বিদ্যুতের চাহিদা ১৭ হাজার ২০০ মেগাওয়াট হবে। নবায়নযোগ্য কেন্দ্রগুলো থেকে বিদ্যুৎ পাওয়ার সম্ভাবনা নেই, ফলে ফার্নেস অয়েলভিত্তিক কেন্দ্র চালানোর কোনো বিকল্প নেই। কারণ গ্যাস সংকট এবং কয়লাভিত্তিক কেন্দ্রগুলো পূর্ণ সক্ষমতায় উৎপাদন করতে পারছে না।
তিনি আরও বলেন, “মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের কারণে ২০২২ সালের শেষ থেকে বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। এছাড়া পিডিবির বিল দেরিতে দেওয়ার কারণে ব্যাংকের ঋণের সুদ বাবদ ৩ হাজার ২০০ কোটি টাকা দিতে হয়েছে, যা আরো একটি লোকসান। বর্তমানে অনেক বেসরকারি কোম্পানির মূলধন ঋণাত্মক হয়ে পড়েছে, ব্যাংকও আর বিশ্বাস করতে চাচ্ছে না।”
তিনি সরকারের কাছে প্রস্তাব দিয়েছেন, “যদি এখনই ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তাহলে সামনে সেচ মৌসুমে কৃষিতে সমস্যা হতে পারে, যা খাদ্য উৎপাদনেও প্রভাব ফেলবে। গত বছরের বন্যার কারণে খাদ্য উৎপাদন কমেছে, এবং এ বছর যদি সেচে সমস্যা হয়, তাহলে দেশে খাদ্যের ঘাটতি হতে পারে।”
