হ-বাংলা নিউজ:
অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই মাসে ঘোষণাপত্র জারি করবে না। এর পরিবর্তে সরকার এ প্রক্রিয়াটিকে সহায়তা (ফ্যাসিলিটেট) করবে। ঘোষণাটি শিক্ষার্থী, রাজনৈতিক দল এবং সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠনগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে আসবে। এ প্রক্রিয়ায় দেশের নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠনগুলোর সঙ্গে আলোচনা হবে এবং আশা করা হচ্ছে আগামী সপ্তাহের মধ্যে এটি শেষ হবে।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে মিডিয়া ব্রিফিংয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম এসব কথা বলেন। তিনি জানান, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র নিয়ে অনেক জলঘোলা হবে। প্রধান উপদেষ্টা প্রেস উইং এই ব্রিফিংয়ের আয়োজন করেছে।’
ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টা প্রেস সেক্রেটারি শফিকুল আলম এবং ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ মজুমদার উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে ১৫ জানুয়ারির মধ্যে ঘোষণাপত্র জারি করার দাবি থাকলেও এখন কিছুটা সময় লাগবে। শফিকুল আলম বলেন, “ফেব্রুয়ারির মধ্যে সব শিক্ষার্থী তাদের পাঠ্যবই পাবে।”
এ বিষয়ে উল্লেখযোগ্য যে, ৩১ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীরা সমাবেশ করেছিল। সেখানে তারা ১৯৭২ সালের সংবিধান বাতিল করে জুলাই আন্দোলনের ঘোষণাপত্র জারি করার উদ্যোগ নেয়। তবে সরকারের হস্তক্ষেপের পর এটি বন্ধ হয়ে যায়। সেই সময়ে ছাত্র আন্দোলনের নেতারা সরকারের প্রতি ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত ঘোষণাপত্র জারি করার সময়সীমা নির্ধারণ করেন।
বৃহস্পতিবারের ব্রিফিংয়ে মাহফুজ আলম বলেন, “জুলাই আন্দোলনের ঘোষণাপত্র শিক্ষার্থীদের দাবি, কিন্তু সরকার দেশের নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠনগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে ঐকমত্যের ভিত্তিতে এটি তৈরি করবে।” তিনি আরও বলেন, “সেখানে সবার মতামত শোনা হবে এবং পরবর্তী সময়ে কতটুকু সংস্কার করা হবে, সেটি বিবেচনায় নেওয়া হবে।”
মাহফুজ আলম জানান, “গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী সব সংগঠনের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিকভাবে আলোচনা করা হবে এবং আশা করা হচ্ছে আগামী সপ্তাহের মধ্যে আলোচনা শেষ হবে।”
তিনি আরও বলেন, “ঘোষণাপত্রের প্রস্তাব শিক্ষার্থীরা দিয়েছে। তবে সরকার এটি তৈরি করবে না। সরকার শুধু প্রক্রিয়াটি সহায়তা করবে। সরকার একে নিজে তৈরি করে ঘোষণা করবে না; বরং সব পক্ষের ঐকমত্যের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের প্রস্তাবনা ঘোষণাপত্র হিসেবে প্রকাশিত হবে।” এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, “শিক্ষার্থীরা ৩১ ডিসেম্বর ঘোষণাপত্র দেওয়ার কথা বলেছিলেন, কিন্তু সরকার বুঝতে পারে যে এটি শুধু শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে এলে জাতীয় ঐক্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে, তাই সরকার এ দায়িত্ব গ্রহণ করে।”
মাহফুজ আলম আশা প্রকাশ করেন, “সরকার শুধু রাজনৈতিক দল নয়, সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে ঘোষণাপত্র তৈরি করবে। আশা করছি আগামী সপ্তাহের মধ্যে এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত জানানো হবে।”
তিনি আরও বলেন, “শিক্ষার্থীদের দাবি ছিল ১৫ জানুয়ারির মধ্যে ঘোষণাপত্র প্রকাশ করা, তবে সময় কিছুটা বাড়ানো হতে পারে, এজন্য শিক্ষার্থীদের ধৈর্য ধারণ করতে হবে।” তিনি যোগ করেন, “জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র নিয়ে অনেক জলঘোলা হবে, তবে সবার সম্মতিতে এটি তৈরি হলে তা দেশের জন্য ভালো হবে।”
১৯৭২ সালের সংবিধান বাতিল করার বিষয়ে মাহফুজ আলম বলেন, “এটা শিক্ষার্থীদের প্রস্তাবনা। অন্যান্য রাজনৈতিক দল হয়তো এর বিরোধিতা করবে, তবে এটি একটি বিতর্কিত বিষয়। আমরা এসব বিতর্কিত বিষয় আলোচনা করে লিপিবদ্ধ করব।”
তিনি আরও বলেন, “১৯৭২ সালের সংবিধান প্রণীত হওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এটি সমালোচনামূলকভাবে দেখেছে। বর্তমানে বাংলাদেশের পরিস্থিতি থেকে যদি আমরা লক্ষ্য নির্ধারণ করি, তবে একটি শব্দ প্রয়োজন, সেটা হলো ‘ঐকমত্য’। ঐকমত্যের ভিত্তিতে যদি আমরা সংবিধানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারি, তবে তা দেশের জন্য ভালো হবে।”
জাতীয় নির্বাচন ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন বিষয়ে মাহফুজ আলম বলেন, “প্রথমে সেবা পৌঁছানোর জন্য প্রশাসকের মাধ্যমে জনগণের সমস্যা সমাধানের কথা ভাবা হচ্ছে, সিটি করপোরেশন বা ইউনিয়ন পরিষদে সরকারি সেবা সঠিকভাবে না পৌঁছালে সেগুলোর দিকে নজর দেওয়া হবে।”
জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “জাতীয় নির্বাচন সংস্কার সাপেক্ষ। আশা করা হচ্ছে, এই মাসের মধ্যে সংস্কার কমিশনের রিপোর্ট পাওয়া যাবে।” তিনি আরও বলেন, “প্রথম ছয়টি কমিশন নির্বাচনসংক্রান্ত, এবং তাদের প্রস্তাবনা নির্বাচনকেন্দ্রিক হবে। এসব প্রস্তাবনা নিয়ে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা হবে।”
