হ-বাংলা নিউজ:
নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) আরও কার্যকরভাবে কাজ করার জন্য সুপারিশ করা হয়েছে, যাতে তারা যে কোনো পর্যায়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচন বন্ধ করতে পারে। নতুন সংশোধনীতে, তফশিল ঘোষণা থেকে ফলাফল গেজেট প্রকাশ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে নির্বাচনের পরিবেশ অনুকূল না থাকলে, পুরো নির্বাচন বাতিল করার ক্ষমতা পাচ্ছে নির্বাচন কমিশন। এই বিষয়ে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) ৯১(এ) উপধারা সংশোধন করার প্রস্তাব করেছেন নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্যরা।
এছাড়া, প্রার্থীদের হলফনামায় অসত্য তথ্য প্রদান বা তথ্য গোপন করলে, তার প্রার্থিতা যে কোনো সময় বাতিল করার ক্ষমতা ইসির হাতে আসছে। এমনকি নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদের সদস্যপদও বাতিল করা যাবে। এসব বিষয়সহ আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ইসির হাতে ক্ষমতা দিতে নির্বাচনী সংস্কার কমিশন সুপারিশ করবে। আগামী ১ জানুয়ারির মধ্যে কমিশনের পূর্ণ প্রতিবেদন অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জমা দেওয়ার কথা রয়েছে, যদিও ইতোমধ্যে একটি প্রাথমিক প্রতিবেদন সরকারকে পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার যুগান্তরকে বলেন, “আমরা অনেক ধরনের সংস্কারের প্রস্তাব বিবেচনা করছি, তার মধ্যে নির্বাচন বাতিলের ইসির ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়ার বিষয়টি অন্যতম। অতীতে এই ক্ষমতা কমানো হয়েছিল, তখনই আমরা প্রতিবাদ জানিয়েছিলাম। আমাদের মতে, এই ক্ষমতা ইসির হাতে থাকা প্রয়োজন।”
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ সরকার আরপিও সংশোধন করে জাতীয় সংসদে বিল পাশ করেছিল, যাতে ৯১(এ) উপধারায় ক্ষমতা কমানোর প্রস্তাব ছিল। সে সময়ে নির্বাচন কমিশন কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বে ওই ক্ষমতা কমানোর পক্ষে ছিল, যার ফলে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন নিয়ে সমালোচনা তৈরি হয়। যদিও তখন তৎকালীন সিইসি দাবি করেন যে, ৯১(এ)-এর সঙ্গে আরেকটি উপধারা যুক্ত হওয়ায় নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা বেড়েছে।
এছাড়া, বর্তমান নির্বাচন আইনে প্রার্থীদের হলফনামায় জমা দেওয়া তথ্য যাচাইয়ের কোনো বিধান নেই। প্রার্থীদের হলফনামা যাচাইয়ের সুযোগ পেলে, যদি কোনো প্রার্থী তথ্য গোপন বা অসত্য তথ্য দেয়, তাহলে তার প্রার্থিতা বাতিল করা যাবে। সংস্কার কমিশন প্রস্তাব করছে যে, হলফনামা যাচাইয়ের সময় বাড়ানো, প্রার্থীদের তথ্য সুনির্দিষ্ট করা, এবং সম্পদের প্রকৃত মূল্য উল্লেখ করা হোক।
সংস্কার কমিশনের একজন সদস্য জানিয়েছেন, “মাদারীপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুস সোবহান গোলাপ যুক্তরাষ্ট্রে থাকা একাধিক বাড়ির তথ্য গোপন করেছিলেন। সেই সময়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেছিলেন যে, হলফনামায় দেওয়া তথ্য যাচাইয়ের আইনি সুযোগ নেই। কিন্তু, হলফনামায় তথ্য গোপন করলে কমিশনকে প্রার্থী বাতিলের সুযোগ দেওয়া প্রয়োজন।”
এছাড়া, নির্বাচন কমিশন প্রস্তাব করছে, প্রার্থীদের হলফনামায় তথ্য যাচাই করার সময় আরও বাড়ানো, এবং সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পরেও হলফনামায় অসত্য তথ্য দেওয়ার জন্য পদ বাতিলের বিধান রাখা।
আরেকটি সুপারিশ হলো, ভোটার তালিকা আইন এবং জাতীয় সংসদের সীমানা পুনর্নির্ধারণ আইনে সংশোধনী। প্রবাসীদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ এবং পোস্টাল ব্যালট সহজতর করার বিষয়ে কমিশনের সদস্যরা একমত হয়েছেন। সীমানা পুনর্নির্ধারণে ইসির কর্মকর্তা, ভূগোলবিদ, পরিসংখ্যানবিদদের সঙ্গে সরকারি কর্মকর্তাদের যুক্ত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া, নির্বাচন কমিশনের নিয়োগ পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনার প্রস্তাব এবং ‘না’ ভোটের বিধান ফিরিয়ে আনার সুপারিশ করা হচ্ছে। এতে নির্বাচন কমিশনের নিয়োগ ক্ষমতা, মনোনয়ন বাণিজ্য বন্ধে প্রার্থীদের চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া এবং তৃণমূল নেতাকর্মীদের ভোটে প্রার্থী নির্বাচন করাসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে আসবে।
এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে ড. বদিউল আলম মজুমদার জানিয়েছেন, “আগামী নির্বাচনে ইভিএম (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) ব্যবহার বন্ধ করার সুপারিশ করা হবে এবং এর সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তাদের বিচারের জন্য সুপারিশ করা হবে।”
এমন কিছু প্রস্তাব রয়েছে যা নির্বাচনী সংস্কারের মাধ্যমে নির্বাচন প্রক্রিয়াকে আরও স্বচ্ছ, সুষ্ঠু এবং বিশ্বাসযোগ্য করতে সহায়তা করবে, যাতে ভবিষ্যতে নির্বাচন ব্যবস্থা আরো নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক হতে পারে।
