হ-বাংলা নিউজ:
হ-বাংলা নিউজ: বাংলাদেশে প্রযুক্তিগত দক্ষতার উন্নয়নে ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি হলে প্রায় ১৮ লাখ মানুষ চাকরিহারা হতে পারেন। বিশেষত, বস্ত্র ও তৈরি পোশাক (আরএমজি) খাত এই পরিবর্তনের প্রভাব সবচেয়ে বেশি অনুভব করবে। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস)-এর একটি গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।
রোববার রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত বিআইডিএস-এর বার্ষিক গবেষণা সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে ‘প্রযুক্তি, সাপ্লাই চেইন এবং প্রতিষ্ঠানে কর্মসংস্থান’ শীর্ষক অধিবেশনে এই গবেষণাটি উপস্থাপন করা হয়। অধিবেশনটি পরিচালনা করেন ইকোনমিক রিসার্চ গ্রুপ (ইআরজি)-এর নির্বাহী পরিচালক সাজ্জাদ জহির। গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন বিআইডিএস-এর গবেষণা সহযোগী ফারহিন ইসলাম।
এছাড়া, বিআইডিএস-এর মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন, গবেষক ড. মনজুর হোসেন, ড. কাজী ইকবাল এবং জায়েদ বিন সত্তারও পৃথক গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন এবং বক্তব্য দেন। এক গবেষণায় বলা হয়, দেশের তৈরি পোশাক খাতে নারীর অংশগ্রহণ কমছে। ২০১৪ সালে এই খাতের শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ ছিল ৫৬ শতাংশ, যা ২০২৩ সালে ৫৩ শতাংশে নেমে এসেছে।
ফারহিন ইসলাম জানান, প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে শুধু তৈরি পোশাক খাতে ১০ লাখ মানুষের চাকরি হারানোর সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, প্রযুক্তির উন্নয়ন বিভিন্ন খাতে ক্ষতি সাধন করতে পারে, যেমন: অধাতু, খাদ্যপণ্য, চামড়া ও চামড়াসামগ্রী, ফার্নিচার, ফার্মাসিউটিক্যালস, প্লাস্টিক ও রাবারশিল্প। সলো গ্রোথ মডেল ব্যবহার করে তিনি দেখান, প্রযুক্তিগত উন্নয়নের ফলে উৎপাদনশীলতা বাড়লে বাংলাদেশের উৎপাদন খাতে প্রায় ১৮ লাখ কর্মী চাকরি হারাতে পারেন। তবে, এটি কেবল তৈরি পোশাক খাতের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, গবেষণায় বিভিন্ন খাত ও এলাকার মধ্যে কর্মী ছাঁটাইয়ের সম্ভাবনা বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
গবেষণায় বলা হয়েছে, উৎপাদন খাতের প্রবৃদ্ধির হার স্থির রেখে এই হিসাব করা হয়েছে। ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলে ২০২৫ সালের মধ্যে ৫০ শতাংশ উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি সত্ত্বেও নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে, যা ছাঁটাইয়ের তুলনায় বেশি হবে। ফারহিন ইসলাম আরও বলেন, ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধিতে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, কাগজের পণ্য, কোক, পরিশোধিত পেট্রোলিয়াম, খনিজ পণ্য এবং কম্পিউটার ও ইলেকট্রনিক্স নির্মাণ খাতে চাকরি বৃদ্ধি হতে পারে।
তিনি আরও জানান, যেসব খাতে প্রযুক্তি মানবশ্রমের সহায়ক শক্তি হিসেবে ব্যবহার হবে, সেখানে ছাঁটাই কম হবে, তবে যেখানে প্রযুক্তি মানবশ্রমের বিকল্প হিসেবে কাজ করবে, সেখানে ছাঁটাই বেশি হবে। শ্রম প্রতিস্থাপনকারী প্রযুক্তির চেয়ে শ্রম-বর্ধনকারী প্রযুক্তি ব্যবহার করলে বেকারত্ব কম হবে এবং দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য শ্রমশক্তির উন্নয়ন জরুরি।
ফারহিন আরও বলেন, যদি শ্রমশক্তিকে দক্ষ করে তুলতে পারি, তবে আমরা উৎপাদন বৃদ্ধি করতে পারব এবং একইসঙ্গে চাকরি বজায় রাখতে পারব। তিনি সরকারের প্রতি শ্রমশক্তি উন্নয়নের জন্য আরও পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান। এছাড়া, প্রযুক্তি গ্রহণের সময় তার সামাজিক প্রভাবও বিবেচনা করা প্রয়োজন, এ বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
ড. বিনায়ক সেন বলেন, প্রযুক্তির প্রভাবে লিঙ্গভিত্তিক কর্মসংস্থানে কীভাবে প্রভাব পড়তে পারে, তা গবেষণার বিষয় হওয়া উচিত।
অন্য এক অধিবেশনে ‘টেকনোলজি আপগ্রেডেশন ইন আরএমজি ইন্ডাস্ট্রিজ ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন বিআইডিএস-এর গবেষণা পরিচালক ড. কাজী ইকবাল। তিনি বলেন, তৈরি পোশাক খাতে নারীর অংশগ্রহণ ২০১৪ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত কমে এসেছে। তিনি আরও বলেন, খাতটি প্রযুক্তির কারণে পুঁজিঘন হয়েছে, যার ফলে মেশিন অপারেটর ও হেলপারদের ওপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে।
গবেষণা সম্মেলনে একটি প্রশ্নের উত্তরে ড. মঞ্জুর হোসেন বলেন, চীনে প্রযুক্তির কারণে ৩ শতাংশ ছাঁটাই হলেও ২ শতাংশ নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে। এই প্রক্রিয়া বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও ঘটতে পারে, তাই নারীদের দক্ষতা বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
অপর একটি গবেষণায় বলা হয়, বাংলাদেশ তৈরী পোশাক (আরএমজি) খাতে এলডিসি (স্বল্পোন্নত দেশ) উত্তরণের পর একটি বড় চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে চলেছে, তা হলো সরবরাহ চেইন রক্ষার সমস্যা। বিশেষ করে, ডিউটি-ফ্রি ও কোটাহীন সুবিধা হারানোর পর ২০৩১ সালের মধ্যে আরএমজি খাতের রপ্তানি আয় প্রায় ১০ দশমিক ৮ শতাংশ কমে যেতে পারে।
গবেষণায় বাংলাদেশের কাঁচামালের ওপর নির্ভরতার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে এবং শিপমেন্ট, কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স, রাস্তার অবকাঠামো সমস্যা ও বন্দরের কার্যক্রমে দেরির কারণে বড় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে।
এছাড়া, দিনব্যাপী সম্মেলনে দক্ষিণ এশিয়ার খাদ্যপণ্য মূল্য নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা, চালের বাজার এবং মূল্য নিয়ন্ত্রণসহ বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণাপত্র উপস্থাপন করা হয়।
