রাজীব গান্ধী’র ছয় হত্যাকারী জামিনে মুক্ত! ভারতজুড়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।

হলিউড বাংলা নিউজঃ উপমহাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় নেতা ও ভারতের ষষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী হত্যা মামলায় ৩১ বছরের কারাবাস শেষে আনুষ্ঠানিকভাবে মুক্তি পেলেন ছয় আসামি। ভারতীয় গণমাধ্যম বলছে, একই মামলার আরেক আসামি আরপি রবিচন্দ্রনকেও যেকোনো সময় জেল থেকে মুক্তি দেওয়া হতে পারে।   

এনডিটিভির খবরের বলা হয়েছে, ভারতের সুপ্রিম কোর্ট ছয় আসামিকে মুক্তির নির্দেশ দেওয়ার একদিন পর শনিবার (১২ নভেম্বর) সন্ধ্যায় কারাগার থেকে মুক্তি পান তারা।

মুক্তিপ্রাপ্তরা হলেন, নলিনী শ্রীহরন, তার স্বামী মুরুগান, রবার্ট পায়াস, জয়কুমার ও সান্থান। শনিবার ভেলোরের কারাগারে সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে তাদের মুক্তি দেওয়া হয়েছে।

ছয় আসামিদের ছেড়ে দেয়ার আদালতের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন তামিলনাড়ুর বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিন। গণতন্ত্রের জন্য এ রায়কে ঐতিহাসিক বলে উল্লেখ করেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরেই সব আসামির মুক্তি দাবি করে আসছিলেন স্ট্যালিন। 

যদিও এ ঘটনায় নাখুশ উপমহাদেশের প্রাচীনতম রাজনৈতিক দল কংগ্রেস।

কংগ্রেসের মুখপাত্র জয়রাম রমেশ এক বিবৃতিতে বলেছেন, খুনিদের সুপ্রিম কোর্টের মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়া যায় না। এটি পুরোপুরি ভুল সিদ্ধান্ত। 

তিনি আরও বলেন, রাজীব গান্ধী হত্যা কোনো আঞ্চলিক হত্যাকাণ্ড নয় বরং এটা জাতীয় সমস্যা উল্লেখ করে এ ঘটনায় আইনি প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখার ঘোষণাও দিয়েছে দলটি। 

এদিকে মামলার অন্যতম আসামি নলিনী শ্রীহরন আজ মুক্তির পর বলেছেন, এটি আমার জন্য নতুন এক জীবন। যা আমার স্বামী এবং মেয়ের সাথে কাটাবো। আমাকে সমর্থন করার জন্য আমি তামিল জনগণকে ধন্যবাদ।

এসময় তিনি রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারকেও ধন্যবাদ জানিয়েছেন।উল্লেখ্য, ১৯৯১ সালের ২১ মে তামিলনাড়ুর শ্রীপেরমবদুরে একটি নির্বাচনী জনসভায় আত্মঘাতী বোমা হামলায় নিহত হয়েছিলেন ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী। 

পুলিশ ও তদন্ত কর্মকর্তাদের মতে, এক নারী রাজীব গান্ধীকে মালা পরিয়েছিলেন। এরপরই বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। 

পরে জানা যায়, শ্রীলঙ্কার বিদ্রোহী তামিল গোষ্ঠী এলটিটিই এই হামলা চালিয়েছিল। দেশটির গৃহযুদ্ধে শান্তিরক্ষী পাঠিয়েছিল ভারত, তার প্রতিশোধ নিতেই এ হামলা চালানো হয় বলেই ধারনা সংশ্লিষ্টদের।  

পুলিশের তথ্য মতে, এ মামলায় মোট ৪১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়। যারমধ্যে ১২ জন আগেই মারা যান। নিখোঁজ বা পলাতক ছিলেন তিন জন। অন্যদিকে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন ২৬ জন। এরমধ্যে মুরুগান এবং সান্থান শ্রীলঙ্কার নাগরিক। 

১৯৯১ থেকে টানা সাত বছর চলে মামলার কার্যক্রম। তারপর ১৯৯৮ সালের জানুয়ারিতে ২৬ অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছিল টাডা আদালত। কিন্তু পরে সুপ্রিম কোর্ট মাত্র সাত জনের সাজা বহাল রাখে। এই সাতজনের মধ্যে এ জি পেরারিভালান, নলিনীসহ চারজনকে মৃত্যুদণ্ড এবং বাকি তিনজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। অন্যরা মুক্তি পায়।

অন্যদিকে ২০০০ সালে, নলিনীর সাজা মৃত্যুদণ্ড থেকে কমিয়ে যাবজ্জীবন করা হয়। অন্যদিকে ২০১৪ সালে, পেরারিভালানসহ অন্য তিন জনের মৃত্যুদণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়।

সবশেষ নলিনী এবং রবিচন্দ্রন জেল থেকে আগাম মুক্তির আবেদন জানান। আদালত গত মে মাসে এই মামলায় মুক্তি পাওয়া আরও এক আসামি এ জি পেরারিভালানের বিষয়টি বিবেচনায় আনেন এবং শুক্রবার আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় আসামির মুক্তির নির্দেশ দেন। উক্ত ঘটনায় ভারত জুড়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *