জুলাই-আগস্টে ছাত্র আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসা: বিভিন্ন স্তরে আলোচনা ও সমালোচনা

হ-বাংলা নিউজ: 

জুলাই-আগস্টের ছাত্র আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসা বিষয়টি বর্তমানে বিভিন্ন স্তরে আলোচনা ও সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। এই প্রেক্ষাপটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি পোস্ট শেয়ার করেছেন, যা আরও বেশি তোলপাড় সৃষ্টি করেছে।

শুক্রবার রাতে নিজের ফেসবুক পেজে সারজিস আলম সাইদুর রহমান খান নামের একজনের পোস্ট শেয়ার করেন, যেখানে উল্লেখ করা হয়, আহতদের মধ্যে একদল দাবি করছে যে, তাদেরকে এখন উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হোক। এমনকি, তারা দ্রুত রাস্তায় নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে, কফনের কাপড় পরে, এবং উপদেষ্টা না হওয়া পর্যন্ত উঠবে না।

অন্যদিকে, এই গ্রুপটি সারা দেশে প্রচার করবে যে, আহতরা চিকিৎসা পাচ্ছে না। আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন ফেসবুক পেজে ইতোমধ্যে ব্যাপকভাবে এই তথ্য শেয়ার করা হয়েছে এবং এর প্রচারে আরও জোর দেওয়া হচ্ছে।

এটা আরও অদ্ভুত যে, এই আহতদের মধ্যে বেশিরভাগই ছাত্রলীগের সদস্য। ছাত্রলীগের হাতে মার খেয়ে আহত হওয়া কয়েকজন এখন হাসপাতাল ছাড়তে চান না, যদিও তাদের চিকিৎসা ইতোমধ্যে শেষ হয়ে গেছে। অনেক “আহত” নেতা সারাদিন বিভিন্ন প্রোগ্রামে অংশ নেন, ব্যস্ত সময় কাটিয়ে আবার হাসপাতালে ফিরে ঘুমান। ডাক্তাররা এক মাস আগে তাদের সুস্থ ঘোষণা করেছেন, কিন্তু তারা হাসপাতালেই থেকে গেছেন, যাতে রাজনৈতিক ফায়দা নিতে পারেন।

এই গ্রুপটির দাবি এখন হলো, হাসপাতাল ভিত্তিক নেতা নিয়োগ দিতে হবে। ভাবুন, হাসপাতালে রাজনীতি করার কি কোনো জায়গা আছে? একজন আহত ব্যক্তি কেন leader (নেতা) হতে চাইবে?

আর যখন আওয়ামী লীগ সমর্থক অনলাইন এক্টিভিস্টরা এই পরিস্থিতিকে প্রচার করছে, তখন কি এটিকে আরও কিছুটা নির্দোষভাবে দেখা সম্ভব? আমার মতে, এর পেছনে দুটি প্রধান কারণ থাকতে পারে:

১. ছাত্রলীগের সঙ্গে তাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। তারা এমন পরিস্থিতি তৈরি করছে যাতে সাধারণ মানুষ মনে করে সরকার আহতদের চিকিৎসা দিচ্ছে না। এর মাধ্যমে পরবর্তী সময়ে কেউ রাস্তায় নামলে সরকারের জন্য সেটা একটি বড় বিপদ হতে পারে।

২. সরকার আহতদের জন্য টাকা এবং কার্ড দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এই অবস্থায় নেতা হতে পারলে বড় অঙ্কের টাকা পাওয়া যাবে, এমনকি তালিকায় নাম উঠানোর বিনিময়েও টাকা পাওয়া সম্ভব।

এদের এত সাহস কোথা থেকে আসছে? কারণ, সাধারণ মানুষের সহানুভূতি। বেশিরভাগ মিডিয়া এবং টকশো বিশেষজ্ঞরা এই “আহত” ব্যক্তিদের নিয়ে মানুষের সহানুভূতি তৈরি করতে সহায়তা করছে। তারা বলছে, আহতদের চিকিৎসার দায়িত্ব নিতে হবে। কিন্তু কেউ কেন প্রশ্ন করছে না যে, একজন আহত ব্যক্তি কেন উপদেষ্টা হতে চাইবে অথবা কেন সারাদিন প্রোগ্রাম করে রাতে হাসপাতালে ফিরে ঘুমাবে?

এই আবেগের খেলা থেকে যে লাভ হচ্ছে, তা পুরোপুরি আওয়ামী লীগ এবং তাদের সমর্থক পেজগুলো পাচ্ছে। তারা ব্যাপকভাবে প্রচার করছে যে আহতরা চিকিৎসা পাচ্ছে না। আমার মনে হয়, সরকার এবার কঠোর অবস্থান নিতে পারে।

এভাবে যদি চলতে থাকে, তবে আনসার বাহিনীর মতো এখানেও একই ধরনের কৌশল হতে পারে, যেখানে নিজেদের আহত বলে প্রচার করে বিশাল ঝামেলা তৈরি করা হতে পারে। মিডিয়া এবং জনগণকে বলব, আবেগের কুয়াশা দূর করে সত্যিকার বাস্তবতা যাচাই করুন এবং খবর প্রচার করুন।

আনসার লীগের পর এখন সরকার আহতদের এই ষড়যন্ত্রের শিকার হচ্ছে। এই বিষয়টি জনগণের কাছে কেন জানানো হচ্ছে না? চিকিৎসার বিষয়ে বারবার বলা হচ্ছে, কিন্তু সুস্থ ব্যক্তিরা যখন রাস্তায় শুয়ে উপদেষ্টা হওয়ার দাবি জানায়, তখন তাকে কীভাবে চিকিৎসা করা যাবে?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *