হ-বাংলা নিউজ: চলতি বছরের জুলাই মাসে বাংলাদেশে এক গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবর্তন ঘটে, যখন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতা হারান। এই আন্দোলনের সূচনা মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের জন্য চাকরিতে কোটা পুনঃপ্রবর্তনের দাবি থেকে হলেও তা দ্রুত এক বৃহৎ আন্দোলনে রূপ নেয়, যেখানে বৈষম্য, রাজনৈতিক নিপীড়ন এবং দীর্ঘকালীন অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে জনরোষ প্রকাশিত হয়।
আন্দোলন শুরু হওয়ার পর, শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় একটি পারিবারিক হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে কোটা কমিয়ে ৫% করার প্রস্তাব দেন, তবে এটি পরিস্থিতির সমাধানে যথেষ্ট ছিল না। আন্দোলনটি সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক জনঅসন্তোষের প্রতিফলন হিসেবে দেখা যায়। আন্দোলন দমন করার চেষ্টা সহিংসতায় রূপ নেয় এবং দেশজুড়ে প্রায় এক হাজার ছাত্র-জনতা নিহত হয়।
যখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তখন শেখ হাসিনাকে সামরিক বাহিনীর হেলিকপ্টারে করে দেশ থেকে নিরাপদে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়, এবং তিনি ভারতে নির্বাসিত হন, যেখানে তিনি এখনো রয়েছেন।
শেখ হাসিনার বিদায় এবং রাজনৈতিক শূন্যতা:
শেখ হাসিনার পতনের পর বাংলাদেশ রাজনৈতিক শূন্যতার সম্মুখীন হয়। তার ১৫ বছরের শাসনের ফলে দেশের প্রায় প্রতিটি সরকারি প্রতিষ্ঠান আওয়ামী লীগের মাধ্যমে রাজনৈতিকীকৃত হয়ে যায়। সেনাবাহিনী, বিচার ব্যবস্থা, সিভিল সার্ভিস এবং নিরাপত্তা বাহিনীর প্রতি মানুষের বিশ্বাস কমে যায়।
এ অবস্থায় সেনাবাহিনী ও নতুন প্রজন্মের ছাত্রনেতাদের সমন্বয়ে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়, যার নেতৃত্ব গ্রহণ করেন নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
ড. ইউনূস নতুন সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর একটি ছয় দফা সংস্কার পরিকল্পনা হাতে নেন, যার মধ্যে নির্বাচনী ব্যবস্থা, পুলিশ প্রশাসন, বিচার ব্যবস্থা, দুর্নীতি দমন কমিশন, প্রশাসনিক কাঠামো এবং জাতীয় সংবিধানের সংস্কার অন্তর্ভুক্ত ছিল। তার মতে, এসব সংস্কার দেশের দুর্নীতি, লুটপাট এবং গণহত্যার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহায়তা করবে।
তবে নতুন সরকারের সামনে অসংখ্য চ্যালেঞ্জ রয়েছে। দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ক্রমাগত অবনতির দিকে যাচ্ছে এবং সাম্প্রতিক বন্যা ও রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অনেকটাই হ্রাস পেয়েছে।
শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনা:
শেখ হাসিনার ক্ষমতা হারানোর পর দেশের রাজনৈতিক মঞ্চে নতুন ধরনের অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। যদিও তিনি ভারতে নির্বাসিত, অনেকেই মনে করছেন তার ফিরে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশ্লেষকরা মনে করেন, যদি ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কার প্রক্রিয়ায় ব্যর্থ হয় এবং জনগণের মধ্যে হতাশা তৈরি হয়, তাহলে জনগণ শেখ হাসিনার শাসনামলকে নতুন করে ইতিবাচকভাবে দেখতে শুরু করতে পারে।
শেখ হাসিনার শাসনামলে বাংলাদেশ ছিল এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ, যদিও সেই সময় বৈষম্য ও রাজনৈতিক নিপীড়ন ব্যাপক ছিল।
রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ:
অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, শেখ হাসিনা বা তার আওয়ামী লীগ পুনরায় রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে, বিশেষ করে যদি বর্তমান সরকার সংস্কার প্রক্রিয়ায় ধীরগতিতে চলে এবং জনগণ দ্রুত পরিবর্তন না দেখে। দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে পরিবারভিত্তিক রাজনীতির উদাহরণ বিদ্যমান, এবং শেখ হাসিনার পরিবারও এর ব্যতিক্রম নয়। তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ও এক পর্যায়ে রাজনীতিতে আসতে পারেন, যদিও তিনি এখনও এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেননি।
শেখ হাসিনার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ অনেকাংশে বর্তমান সরকারের কার্যক্রমের ওপর নির্ভর করবে। যদি মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার সফল হয় এবং দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা উন্নত করে, তবে শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনা কমে যাবে। অন্যদিকে, যদি বর্তমান সরকারের কার্যক্রম জনগণের প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়, তাহলে শেখ হাসিনা ও তার দল পুনরায় রাজনৈতিক প্রভাব ফিরে পেতে পারে।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে শেখ হাসিনা ও তার দলের ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত, তবে তাদের ভূমিকা কখনও অবহেলা করা যায় না। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হবে।
সূত্র: টাইম ম্যাগাজিন
