সংকটের মধ্যে শ্রমিকদের মালয়েশিয়ায় যাওয়ার সুযোগ দিলেন প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম

হ-বাংলা নিউজ:মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম ঘোষণা করেছেন যে, বিমানের টিকিট সংকটের কারণে নির্ধারিত সময়ে মালয়েশিয়ায় যেতে না পারা শ্রমিকদের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করা হবে। প্রথম পর্যায়ে ১৮ হাজার শ্রমিক সহায়তা পাবেন, পরে আরও শ্রমিকের জন্য এই সংখ্যা বাড়ানো হবে। শুক্রবার ঢাকায় হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান।

প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারে পূর্ণ আস্থা প্রকাশ করেন এবং বাংলাদেশে শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা করতে প্রস্তুত আছেন। দুই নেতা ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়িয়ে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে শক্তিশালী করার বিষয়ে একমত হন।

ড. ইউনূস বলেন, তার সরকার জনগণের আকাক্সক্ষা পূরণে কাজ করছে এবং এই কাজে মালয়েশিয়াকে সহযোগিতা চাইছেন। তিনি ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগ ও আগের সরকারের নৃশংসতার কথা উল্লেখ করেন। মালয়েশিয়ার সরকার প্রধানও সব ধরনের সহায়তা ও সমর্থনের আশ্বাস দেন।

একদিনের সফরে শুক্রবার ঢাকা এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম। তিনি দুপুর ২টায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছালে ড. ইউনূস তাকে অভ্যর্থনা জানান। এটি অন্তর্বর্তী সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের পর বাংলাদেশের মাটিতে বিদেশি কোনো সরকারের প্রধানের প্রথম উচ্চপর্যায়ের সফর।

হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে প্রথমে ওয়ান-টু-ওয়ান বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, এরপর দ্বিপাক্ষিক আলোচনা হয়। বৈঠকে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় মালয়েশিয়ার সহায়তা কামনা করা হয়। এছাড়া আসিয়ানে বাংলাদেশকে ‘সেক্টরাল ডায়ালগ পার্টনার’ হিসেবে অন্তর্ভুক্তির বিষয়ও উত্থাপন হয়। আলোচনা হয় অর্থনৈতিক সহযোগিতা, রাজনৈতিক সম্পর্ক, শ্রম অভিবাসন, শিক্ষা, প্রযুক্তি ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতার মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু নিয়ে।

বৈঠকের পর আনোয়ার ইব্রাহিম রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং সন্ধ্যায় ঢাকা ত্যাগ করেন।

আনোয়ার ইব্রাহিম বলেন, “মানুষের মর্যাদা রক্ষায় ড. ইউনূসের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। আমি তার ওপর ভরসা রাখি।” তিনি সংকটের কারণে মালয়েশিয়ায় যেতে না পারা ১৮ হাজার কর্মপ্রত্যাশীর বিষয়টি বিবেচনার আশ্বাস দেন এবং বলেন, “বাংলাদেশের কর্মীরা আধুনিক দাস নয়, তাদের সুরক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব আমাদের।”

মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাদের দেশে আরও জনশক্তির প্রয়োজন, তবে শ্রম অভিবাসন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা থাকা উচিত।” তিনি নতুন প্রযুক্তির ক্ষেত্রে যৌথভাবে কাজ করার বিষয়ে সম্মত হন।

ড. ইউনূস বলেন, মালয়েশিয়ার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার জন্য দুই দেশ সম্মত হয়েছে। রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “এখন ১২ লাখ রোহিঙ্গার সংখ্যা বেড়ে গেছে এবং প্রতিদিন ৪০০-৫০০ রোহিঙ্গা প্রবেশ করছে।”

মালয়েশিয়া বাংলাদেশে অষ্টম শীর্ষ বিনিয়োগকারী দেশ। গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত তাদের বিনিয়োগ ছিল ৮৩ কোটি ২৭ লাখ ডলার। বর্তমানে দেশের মুক্তবাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরের আলোচনা চলছে, যা বাংলাদেশি পণ্যের বাজার সম্প্রসারণে সহায়ক হবে।

মালয়েশিয়া বাংলাদেশি পণ্যের বাজার সম্প্রসারণে সহায়তা করতে আগ্রহী, বিশেষ করে কৃষি, তথ্যপ্রযুক্তি ও লজিস্টিক খাতে। ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে আসিয়ানের চেয়ারম্যান হওয়ার পর এই বিষয়ে আরও আলোচনা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *