রুনা লায়লার প্রেমে পড়েছিলেন ছোটবেলায় নচিকেতা

হ-বাংলা নিউজ: কবির সুমনের পর ‘জীবনমুখী’ ধারার শিল্পী হিসেবে পরিচিতি পাওয়া নচিকেতা চক্রবর্তী নিজের পরিচয় দিতে ভালোবাসেন একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে। আজ ১ সেপ্টেম্বর, দুই বাংলার এই জনপ্রিয় শিল্পীর জন্মদিন। ২০১৫ সালের ৯ এপ্রিল চট্টগ্রামের সিনিয়রস ক্লাবে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করেছিলেন তিনি। তার আগে সকালে ঘণ্টা দেড়েক ধরে জমজমাট আড্ডা হয়েছিল। গান, লেখালেখি, চলচ্চিত্রের প্লেব্যাক, রাজনীতি—সব বিষয়ে কথা উঠেছিল। নচিকেতার জন্মদিন উপলক্ষে এই লেখাটি আবার প্রকাশ করা হলো।

ভারতীয় কণ্ঠশিল্পী নচিকেতার জন্ম কলকাতায় হলেও বাপ–দাদার ভিটা বরিশালে। তাই বাংলাদেশের প্রতি তাঁর বিশেষ অনুভূতির কথা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। বরিশাল ছাড়া এ দেশের প্রতি গভীর অনুরাগের আরেক বড় কারণ হলেন রুনা লায়লা। ছেলেবেলায় তাঁর গান শুনে নচিকেতা প্রেমে পড়েছিলেন রুনা লায়লার। তিনি নিজেই বলেছেন, বয়স কম হলে হয়তো রুনা লায়লাকে নিয়ে পালিয়ে যেতেন!

নীল রঙের খোলা শার্টের নিচে লাল গেঞ্জি, এলোমেলো চুল, মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি, আর জ্বলছে পাতার বিড়ি—এই চিরচেনা চিত্রেই নচিকেতা চক্রবর্তী নিজেকে তুলে ধরেন। নব্বইয়ের দশকেই কবির সুমনের পর ‘জীবনমুখী’ ধারার শিল্পী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু আজও কলকাতার দত্তবাগানের ছেলে হিসেবেই পরিচিতি রাখতে পছন্দ করেন এবং পাড়ার রকে আড্ডা দিতে ভালোবাসেন।

চট্টগ্রামের সিনিয়রস ক্লাবে অনুষ্ঠিত এক অনুষ্ঠানে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রাপ্ত গায়ক চন্দন সিনহার সংবর্ধনায় গান গাওয়ার আগে নচিকেতা ঘণ্টা দেড়েকের জমজমাট আড্ডা দেন। আলোচনা চলে গান, লেখালেখি, চলচ্চিত্রের প্লেব্যাক, রাজনীতি—সব বিষয়ের ওপর।

এ দিন নচিকেতার কাছে নীলাঞ্জনার প্রসঙ্গ ওঠে। তিনি তিনটি সিক্যুয়েল গান গেয়েছেন নীলাঞ্জনাকে নিয়ে। তার সম্পর্কে জানতে চাইলে সপ্রতিভ নচিকেতা বলেন, ‘বলা যাবে না, বলব না।’ এরপর বলেন, ‘একটা উর্দু শের আছে, যার অর্থ সুন্দর জিনিস থেকে দূরে থাকা ভালো। তাই, এই নীলাঞ্জনা থেকে দূরেই থাকুন।’ এই মন্তব্যে হেসে ফেলেন তিনি।

‘নীলাঞ্জনা’ গানটির ওপর ভিত্তি করে দেশের টিভি চ্যানেলে ছয় পর্বের ধারাবাহিক নাটক হয়েছে, এই তথ্যও নচিকেতা জানতেন না। শুনে তিনি বলেন, ‘ভালো তো!’

নচিকেতা তার পাড়ার রকে সংগীতচর্চা করেছেন। তাঁর বাড়িতে সংগীতচর্চার জন্য আলাদা কোনো রুম নেই। পাড়ার রকে বসেই অনেক গান রচিত হয়েছে। বিখ্যাত হওয়ার পরেও তিনি এখনও সেই পাড়ার ছেলে হিসেবে আছেন।

‘নীলাঞ্জনা’ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলে নচিকেতা এড়িয়ে গিয়ে বলেন, ‘হ্যাঁ, নীলাঞ্জনা দত্তবাগানেরই মেয়ে।’ ১৯৯৩ সালে ‘এই বেশ ভালো আছি’ অ্যালবাম বের হওয়ার পর নচিকেতার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। এরপর গত বছর পর্যন্ত তাঁর ১৮টি একক অ্যালবাম বেরিয়েছে এবং ১১টি মিশ্র অ্যালবাম রয়েছে। চলচ্চিত্রে প্লেব্যাকও করেছেন। ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ প্রযোজনার চলচ্চিত্র ‘হঠাৎ বৃষ্টি’-র সংগীত পরিচালনা করেছিলেন এবং সেখানে তাঁর গাওয়া ‘একদিন স্বপ্নের দিন’ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

নচিকেতা জানান, প্লেব্যাক তাঁর পছন্দ নয়। ফরমায়েশি গান ও মিষ্টি ভালোবাসার গানগুলোর সঙ্গে তিনি দূরে থাকতে চান।

‘এই বেশ ভালো আছি’ অ্যালবামের আগের এবং বর্তমান নচিকেতার মধ্যে পার্থক্য আছে বলে তিনি বলেন। পূর্বে বয়স ছিল ২৮ বছর, সাহস ছিল। এখন সাহসের সঙ্গে অভিজ্ঞতা ও পরিপক্বতা যোগ হয়েছে।

নচিকেতার ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি বেশ অহংকারী।’ তবে তিনি একচোট হাসেন।

নচিকেতা, কবির সুমন, এবং অঞ্জন দত্ত—এই তিন শিল্পী একই সময়ে শ্রোতাদের কাছে পৌঁছেছে। নচিকেতা তাঁর বিশিষ্টতা ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘আমি জনপ্রিয় ধারার গায়ক। হিন্দি গানের প্রাধান্য সত্ত্বেও বাংলা গানকে জনপ্রিয় করেছি। বর্তমান গায়করাও আমার গান শুনেছেন।’

নচিকেতার গানে বেশ কিছু গল্প পাওয়া যায় এবং তিনি নিজেও গল্প লিখেছেন। ‘ক্যাকটাস’ এবং ‘জন্মদিনের রাত’ নামের দুইটি উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছে। লেখালেখি প্রসঙ্গে তিনি জানান, ‘আমি খুব অলস। মাথায় ঘোরানো গল্পগুলো লেখার ফুসরত পাই না, তাই সেগুলো গানে ঢুকিয়ে দিই।’

জ্যাক লন্ডন, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় এবং হুমায়ূন আহমেদ তাঁর প্রিয় লেখক। হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে দেখা না হওয়া নিয়ে তিনি আফসোস করেন। তিনি মনে করেন, হুমায়ূনের ‘মিসির আলী’ চরিত্রটি অমর হয়ে থাকবে।

সলিল চৌধুরী, হেমাঙ্গ বিশ্বাস, জ্যোতিরিন্দ্র মৈত্রের গান তাঁর ভালো লাগে। তবে সবচেয়ে বড় ভক্ত তিনি রুনা লায়লার। উচ্ছ্বাসের সঙ্গে বলেন, ‘রুনাজি সুফি, গজল, রোমান্টিক সব ধারার গানই করেন। তাঁর গলা অপূর্ব।’

নচিকেতা জানান, তাঁর প্রেমে পড়ার স্বভাব রয়েছে এবং স্ত্রী রুমকির সঙ্গেই সবচেয়ে বড় হৃদয়ের লেনদেন হয়েছে। একজন শিল্পীর সবচেয়ে বড় সম্পদ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘বিশ্বাস। শিল্পীর নিজ কাজের প্রতি বিশ্বাস থাকা জরুরি। এটাই তাকে বাঁচিয়ে রাখে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *