বাঙালী আর বাংলাদেশী এক শব্দ না, পার্থক্য রয়েছে. বাঙালী শব্দটিকে কখনো বাংলাদেশী হিসেবে ব্যবহার করবেন না।

হ-বাংলা নিউজ: 

বাংলাদেশ এবং ভারতের  মানুষের মধ্যে বাঙালী শব্দটি নিয়ে একটি পার্থক্য রয়েছে। বিশেষ করে এই দুই দেশের মানুষ দৈনন্দিন কথোপকথনে  প্রায়ই “বাংলাদেশী” আর “বাঙালী” শব্দ দুটি ব্যবহার করে থাকে। অন্য ভাষার মানুষ অনেক সময় এদের মধ্যে পার্থক্য গুলিয়ে ফেলেন। অথচ দুটি শব্দের ভিন্ন ভিন্ন অর্থ  প্রয়োগ হয়।  “বাংলাদেশী” বলতে বোঝানো হয় বাংলাদেশ রাষ্ট্রের নাগরিকদের। অর্থাৎ যার জাতীয় পরিচয় বাংলাদেশ,  যিনি বাংলাদেশ পাসপোর্ট বহন করেন তিনি বাংলাদেশী। বাংলাদেশী পরিচয় একটি জাতীয়তা বা নাগরিকত্ব ভিত্তিক শব্দ। এতে বাংলাদেশের মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান  সব ধর্মের মানুষ, সব জাতিগোষ্ঠী  যেমন চাকমা, মারমা, সাঁওতাল প্রভৃতি   তারা সবাই বাংলাদেশী। আর “বাঙালী” শব্দটি কোন  জাতীয়তা বা নাগরিকত্ব ভিত্তিক পরিচয় না। বাঙালী  শব্দটি বোঝায় ভাষাগত পরিচয়কে।
যারা বাংলা ভাষায় কথা বলে এবং বাঙালী সংস্কৃতির ধারক, তাদের বলা হয় বাঙালী। এই বাঙালী শব্দটি শুধু বাংলা কথার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, আসাম, আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে অসংখ্য মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলেন তাই ভাষাগতভাবে তারা বাঙালী বলেন। এছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী প্রবাসী বাংলা ভাষাভাষীও বাঙালী হিসেবে পরিচয় দেয়।  বাঙালী পরিচয় মূলত ভাষা, সংস্কৃতি ও গোষ্ঠিসত্তা ভিত্তিক। মূল পার্থক্য হল, বাংলাদেশী বলতে নাগরিকত্ব জাতীয় পরিচয় শুধুমাত্র বাংলাদেশের মানুষ । বাঙালী বলতে গোষ্ঠিগত ও ভাষাগত, সংস্কৃতিগত পরিচয় বহন করে এটা কোন দেশের নাগরিকত্ব ভিত্তিক পরিচয় বহন করে না। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন ভাষার সাথে বাংলা ভাষায় কথা বলার মানুষগুলো নিজের ভাষাগত পরিচয়ের জন্য  বাঙালী শব্দটি ব্যাবহার করে থাকেন বিশেষ করে ভারতের নাগরিকরা  ভাষাগতভাবে বাঙালী পরিচয় দিয়ে থাকেন।  উদাহরণস্বরূপ বলতে পারি কলকাতার একজন মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলেন, তার নাগরিকত্ব ভারতীয় তিনি বাঙালী বলেন, কিন্তু তিনি বাংলাদেশী নন, কারণ তার নাগরিকত্ব ভারতীয়।  বাংলাদেশী মানে বাংলাদেশের নাগরিক। বাঙালী মানে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির ধারক। আরো সহজ করে এরাবিয়ান নাগরিকের সংজ্ঞা দিয়ে বলি । যেমন এরাবিয়ান নাগরিক বলতে সেইসব মানুষকে বোঝানো হয় যাদের জাতীয় পরিচয় আরব অঞ্চলের কোনো দেশের নাগরিকত্বের সাথে যুক্ত। যারা আরবি ভাষায় কথা বলেন তাদের এরাবিয়ান বলা হয়। তথ্যমতে আরব লীগভুক্ত প্রায় ২২টি দেশ রয়েছে আরবী ভাষায় কথা বলেন ।  এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য: আরবী ভাষায় কথা বলেন যেসব দেশের নাগরিকরা তারা হলেন সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই), ওমান, বাহরাইন, ইয়েমেন, জর্ডান, সিরিয়া, লেবানন, ইরাক, মিশর, লিবিয়া, মরক্কো, আলজেরিয়া, সুদান, তিউনিসিয়া,  প্যালেস্টাইন ইত্যাদি দেশের নাগরিকরা উচ্চারনে কিছুটা পার্থক্য থাকলেও তারা সবাই আরবি ভাষায় কথা বলেন।  তাদের জাতিগত ও ভাষাগত পরিচয় হিসেবে এরাবিয়ান বলে।  কিন্তু তাদের নাগরিকত্ব ভিত্তিক পরিচয়ের দিক থেকে সৌদিয়ান, কুয়েতী কিংবা কাতারী সবার আলাদা পরিচয় থাকে নিজ দেশের নামে। তদ্রুপ বাংলা ভাষায় কথা বললেও বাংলাদেশের নাগরিকরা বাংলাদেশী, আর ভারতের নাগরিকরা ভারতীয়, কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে ভারতে যারা বাংলায় কথা বলেন তারা  বাঙালী বলে পরিচয় দিতে শোনা যায় । মূলত বাঙালী শব্দটি কোন নাগরিকত্বের পরিচয় না। অনুরোধ সবার প্রতি  বাঙালী শব্দটিকে কখনো বাংলাদেশী হিসেবে ব্যবহার করবেন না।

লেখক সাংবাদিক মঈন উদ্দিন সরকার সুমন
সভাপতি বাংলাদেশ প্রেসক্লাব কুয়েত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *