গণ-অভ্যুত্থানে আনাসসহ ৬ শহীদ: পুলিশের গুলিতে মৃত্যুর চাঞ্চল্যকর তথ্য অভিযোগপত্রে

হ-বাংলা নিউজ: 

৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের সময় রাজধানীর চানখাঁরপুলে পুলিশের গুলিতে শিক্ষার্থী শাহরিয়ার খান আনাসসহ ছয়জন আন্দোলনকারী নিহত হওয়ার ঘটনায় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে এসেছে মামলার অভিযোগপত্রে।

তদন্তে জানা গেছে, সেদিন ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি প্রতিহত করতে পুলিশের পক্ষ থেকে ব্যারিকেড দেওয়া হয়। রমনা জোনের তৎকালীন সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ ইমরুল কনস্টেবল ইমাজ হোসেন ইমনকে ইশারায় আনাসকে লক্ষ্য করে গুলি চালাতে বলেন। নির্দেশনা অনুযায়ী ইমন হাঁটু গেড়ে বসে চাইনিজ রাইফেল দিয়ে গুলি চালান। আনাস ঘটনাস্থলেই শহীদ হন। তার বুকে দুটি ও মাথায় একটি গুলি লাগে।

বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) মামলার চার আসামির অব্যাহতির আবেদন নিয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ অভিযোগ গঠনের বিষয়ে আদেশ ঘোষণার জন্য আগামী ১৪ জুলাই দিন নির্ধারণ করেছেন। বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এই আদেশ দেন। অন্য দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং বিচারক মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

আনাসের পরিবার জানায়, মৃত্যুর দিন সকালে তিনি গোসল শেষে পড়ার টেবিলের ওপর মাকে উদ্দেশ করে একটি চিঠি রেখে ঘর থেকে বের হন। ছোট ছেলে তাকে ডাকতে গেলে মা বুঝতে পারেন আনাস নেই। তখন ঘরে ঢুকে টেবিলের ওপর চিঠিটি দেখতে পান।

চিঠিতে আনাস লিখেছিলেন,

“মা, আমি মিছিলে যাচ্ছি। নিজেকে আর আটকে রাখতে পারলাম না। সরি আব্বু, আপনার কথা অমান্য করলাম। স্বার্থপরের মতো ঘরে বসে থাকতে পারলাম না। প্রতিবন্ধী কিশোর, সাত বছরের শিশু, ল্যাংড়া মানুষ যখন সংগ্রামে নেমেছে, আমি কেন ঘরে বসে থাকব? একদিন তো মরতেই হবে। তাই সংগ্রামে নেমে গুলি খেয়ে বীরের মতো মরাই শ্রেয়। যদি ফিরে না আসি, দুঃখ নয়, গর্ব করবে। প্রতিটি ভুলের জন্য ক্ষমা চাচ্ছি।”

চিঠিটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়, এবং সারাদেশে জনরোষ ছড়িয়ে পড়ে। মানুষ হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে সরব হয়ে ওঠে।

আনাসের বাবা শাহরিয়ার খান পলাশ শনিবার যুগান্তর-কে বলেন, “চিঠিটি পড়ে বুঝলাম আমার ছেলে যুদ্ধে গেছে। সেদিন রাতেই ওর সঙ্গে কথা হয়েছিল, আমরা সবাই একসঙ্গে যাব বলে ঠিক করেছিলাম। কিন্তু সে একাই বেরিয়ে পড়ে। পরে মিটফোর্ড হাসপাতাল থেকে আনাসের মরদেহ পাই। আমি এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের জন্য খুনি হাসিনা ও সংশ্লিষ্টদের প্রকাশ্যে ফাঁসি চাই। ট্রাইব্যুনালের প্রতি আস্থা আছে, আশা করি ন্যায়বিচার পাব।”

তিনি আরও জানান, আনাসের স্মরণে গেণ্ডারিয়ার একটি সড়কের নামকরণ করা হয়েছে। সোমবার সেই সড়কের উদ্বোধন করবেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।

অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, আন্দোলন দমন করতে আগ্নেয়াস্ত্র, এপিসি কার, হেলিকপ্টার, ড্রোন ও বিপুল পরিমাণ গুলি ব্যবহৃত হয়। পুলিশের গুলিতে নিহত হন আনাস, শেখ মাহদী হাসান জুনায়েদ, মো. ইয়াকুব, মো. রাকিব হাওলাদার, মো. ইসমামুল হক ও মানিক মিয়া শাহরিক।

এ মামলায় মোট আট আসামি। এদের মধ্যে চারজন পলাতক: ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, রমনা অঞ্চলের সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার আখতারুল ইসলাম এবং সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ ইমরুল।
অপর চারজন গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছেন: শাহবাগ থানার সাবেক পরিদর্শক মো. আরশাদ হোসেন, সাবেক কনস্টেবল সুজন হোসেন, ইমাজ হোসেন ও মো. নাসিরুল ইসলাম।

প্রসিকিউশন ২৫ মে ট্রাইব্যুনালে মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) দাখিল করে এবং ২৯ জুন আট আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আবেদন জানায়। সেদিনই ট্রাইব্যুনাল অভিযোগ আমলে নেয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *