আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গৃহীত প্রকল্পগুলির জন্য বাড়তি ব্যয়ের পরিমাণ ১৫ হাজার ৫৬ কোটি টাকা

হ-বাংলা নিউজ: উন্নয়নের নামে আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সময়ে গৃহীত বিভিন্ন প্রকল্পে ব্যাপক ব্যয়ের ঊর্ধ্বগতি হয়েছে। এর ফলস্বরূপ, ৬টি প্রকল্পে বাড়তি খরচ হয়েছে ১৫ হাজার ৫৬ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এসব প্রকল্পের মূল অনুমোদিত ব্যয় ছিল ১২ হাজার ৮৩১ কোটি ৭৩ লাখ টাকা, কিন্তু সংশোধনীর মাধ্যমে এই ব্যয় বাড়িয়ে ২৭ হাজার ৮৮৮ কোটি ২ লাখ টাকায় উন্নীত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

এই প্রস্তাবগুলো রোববার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি কক্ষে অনুষ্ঠিতব্য বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকল্পগুলো যদি সময়মতো বাস্তবায়িত হতো, তাহলে অতিরিক্ত খরচ লাগত না। তবে, এখন প্রকল্পগুলো হঠাৎ করে বন্ধ করা সম্ভব নয়, তাই বাধ্য হয়ে ব্যয় ও মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে, কারণ ইতোমধ্যে বড় অঙ্কের টাকা খরচ হয়ে গেছে।

সাবেক পরিকল্পনা সচিব মামুন-আল-রশীদ যুগান্তরকে বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়নের সাথে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকেই দায়ী করা উচিত, কেননা দায়িত্বহীনতা ও পর্যাপ্ত মনিটরিংয়ের অভাবে এমন ঘটনা ঘটেছে। তিনি আরও বলেন, এ ধরনের অপচয় বন্ধ করতে হলে প্রকল্প বাস্তবায়নে দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

এই প্রকল্পগুলির মধ্যে রয়েছে:
১. পায়রা সমুদ্রবন্দরের প্রথম টার্মিনাল এবং আনুষঙ্গিক সুবিধাদি নির্মাণ
২. চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ে ও ট্যাক্সিওয়ের শক্তি বৃদ্ধিকরণ
৩. সায়েদাবাদ পানি শোধনাগার প্রকল্প ফেজ-৩
৪. বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টার নির্মাণ
৫. পঞ্চবটি হতে মুক্তারপুর সেতু পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণ ও দোতলা রাস্তা নির্মাণ
৬. ঢাকা শহরের নিকটবর্তী ১০টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন

বিশেষ প্রকল্প ব্যয়ের বিশ্লেষণ:

  • পায়রা সমুদ্রবন্দরের প্রথম টার্মিনাল প্রকল্প: মূল ব্যয় ছিল ৩ হাজার ৯৮২ কোটি ১০ লাখ টাকা, পরে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৪ হাজার ৫১৬ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। দ্বিতীয় সংশোধনীর মাধ্যমে এটি ৫ হাজার ৪২৭ কোটি ৯৪ লাখ টাকায় পৌঁছেছে, ফলে বাড়তি খরচ হচ্ছে ১ হাজার ৪৪৫ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। প্রকল্পটির বাস্তবায়ন সময়ও ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে, যা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ৭ বছর হবে।
  • চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর প্রকল্প: এর মূল ব্যয় ছিল ৫৪০ কোটি ৫২ লাখ টাকা, পরবর্তীতে বেড়ে ৬২২ কোটি ৪০ লাখ টাকায় পৌঁছায়। এই প্রকল্পের বাস্তবায়ন মেয়াদও ৭ বছর বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
  • সায়েদাবাদ পানি শোধনাগার প্রকল্প ফেজ-৩: এর মূল ব্যয় ছিল ৪ হাজার ৫৯৭ কোটি ৩৬ লাখ টাকা, যা এখন ১৬ হাজার ১৪ কোটি ৮২ লাখ টাকায় বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। ৫ বছরের পরিবর্তে এখন ১৪ বছরের মধ্যে প্রকল্পটি সম্পন্ন হওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
  • বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টার প্রকল্প: মূল ব্যয় ছিল ৭৯৬ কোটি টাকা, যা এখন বেড়ে ১ হাজার ৭০০ কোটি ৫১ লাখ টাকায় পৌঁছেছে। প্রকল্পের মেয়াদ ১২ বছর হবে, যা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রায় ১২ বছর বৃদ্ধি পেয়েছে।
  • পঞ্চবটি-মুক্তারপুর সেতু সড়ক প্রকল্প: মূল ব্যয় ছিল ২ হাজার ২৪২ কোটি ৭৭ লাখ টাকা, পরে ৩ হাজার ৩১৮ কোটি ৭৯ লাখ টাকায় বৃদ্ধি করা হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নেও ৭ মাস অতিরিক্ত সময় বৃদ্ধি হয়েছে।
  • ঢাকা শহরের নিকটবর্তী ১০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্প: মূল ব্যয় ছিল ৬৭৩ কোটি ৪৬ লাখ টাকা, যা ৮০৩ কোটি ৭৪ লাখ টাকায় বৃদ্ধি পেতে যাচ্ছে। বাস্তবায়ন সময়ও ৩ বছরের পরিবর্তে ১০ বছরে বৃদ্ধি করা হয়েছে।

এছাড়া একনেকে উপস্থাপিত হতে যাওয়া অন্যান্য প্রকল্পগুলির মধ্যে রয়েছে সরকারি বিদ্যালয়ে ফিডিং কর্মসূচি, চট্টগ্রামের কালুরঘাটে পয়ঃশোধনাগার নির্মাণ, স্ট্রেংথেনিং ইনস্টিটিউশন ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যাডাপটেড ওয়াটার রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট প্রজেক্ট, ডিজিটাল কানেকটিভিটি শক্তিশালীকরণ, রাঙামাটি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল নির্মাণ, ক্ষতিগ্রস্ত খাদ্য গুদাম সংস্কার, এবং জেলা প্রশাসকদের কার্যালয়ে রেকর্ড সংস্কার প্রভৃতি প্রকল্প।

এই প্রকল্পগুলির জন্য অতিরিক্ত ব্যয়ের পরিমাণ, মেয়াদ বৃদ্ধিসহ যেসব সংশোধন প্রস্তাব উত্থাপিত হচ্ছে, তা নিশ্চিত করতে হবে যাতে ভবিষ্যতে অর্থের অপচয় রোধ করা যায় এবং প্রকল্পগুলো যথাসময়ে কার্যকরভাবে সম্পন্ন হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *