হ-বাংলা নিউজ: আজ ২১ রমজান, রমজান মাসের শেষ দশকের প্রথম দিন। শুরু হলো নাজাতের দশক, যা মুক্তি ও পরিত্রাণের সন্ধান। রমজান মাসের এই শেষ দশক সেই সময় যখন মুমিনেরা আত্মশুদ্ধি ও আত্মোন্নয়নের চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছাতে চেষ্টা করে। গত ২০ দিন যাদের উদ্দেশ্য ছিল আল্লাহর রহমত ও মাগফিরাত লাভ, আজ থেকে তারা মুক্তির সন্ধানে আরও দৃঢ় প্রতিজ্ঞা নিয়ে কাজ শুরু করবেন।
আম্মাজান আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘‘রমজানের শেষ দশকে যখন আসত, তখন নবি করিম (সা.) কোমরে কাপড় বেঁধে নেমে পড়তেন, বেশি বেশি ইবাদতের প্রস্তুতি নিতেন এবং রাত জেগে থাকতেন। তিনি পরিবার-পরিজনকে জাগিয়ে দিতেনও।’’ (বুখারি শরিফ-১০৫৩)
নাজাতের এই দশকে, রাসূল (সা.) শবেকদরের সন্ধান করতেন। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, ‘‘রমজানের শেষ দশকের বেজোড় তারিখে শবেকদর অনুসন্ধান করো।’’ (বুখারি শরিফ) রাসূল (সা.) আরও বলেন, ‘‘রমজানের শেষ দশকের ২১, ২৩, ২৫, ২৭, ২৯ তারিখে শবেকদর পাওয়া যায়।’’ যে ব্যক্তি বিশ্বাসের সাথে এই রাতে ইবাদত করবে, তার সব পাপ মুছে যাবে। সে রাত থাকবে অতি শান্তি ও প্রশান্তির, আর সূর্য উদিত হবে যেন পূর্ণ চাঁদের মতো। (আহমদ বায়হাকি)
পবিত্র শবেকদর রাতে কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে, এবং সেই কারণে রাতটি অত্যন্ত সম্মানিত। এ রাতের ফজিলত অর্জনে ইতিকাফের কোনো বিকল্প নেই। শায়খুল হাদিস আল্লামা জাকারিয়া (রহ.) বলেছেন, ‘‘ইতিকাফকারী হলেন সেই ব্যক্তি, যে আল্লাহর ঘরে এসে এই বলে থাকেন, ‘আমার আবেদন মঞ্জুর না হওয়া পর্যন্ত আমি এখান থেকে সরব না।’’’ আল্লাহর দয়ার সাগরে বিশ্বাসী হয়ে, যিনি দুনিয়ার সব কিছু থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আল্লাহর ঘরে অবস্থান করেন, আল্লাহ তাকে অবশ্যই ক্ষমা করবেন।
রাসূল (সা.) রমজানের শেষ দশকে অন্যান্য সময়ের তুলনায় বেশি ইবাদত করতেন। (মুসলিম, হাদিস : ২৬৭৮) এই দিনগুলোতে তিনি অধিকাংশ রাতেই জেগে থাকতেন। প্রথম ২০ দিন তিনি সালাত আদায় করে ঘুমাতেন, কিন্তু শেষ দশকে তিনি ঘুমাতেন না, বরং অধিক পরিমাণে সালাতে মনোনিবেশ করতেন। (মুসনাদে আহমাদ)
আমাদের উচিত এই নাজাতের দশককে মূল্যায়ন করা। বেশি বেশি দোয়া-দরুদ, তাওবা-ইস্তিগফার, নফল নামাজ, তারাবিহ, তাহাজ্জুদ ও কিয়ামুল্লাইলে নিমগ্ন থাকা। শেষ দশকের এই পবিত্র সময়ে, পৃথিবীর যে প্রান্তেই যারা শবেকদরের সন্ধানে আল্লাহর ঘরে অবস্থান করছেন, তাদের সঙ্গে আমরা যারা ইতিকাফে অংশগ্রহণ করতে পারিনি, আমাদেরও আমল কবুল করে নিন। আল্লাহ আমাদের সিয়ামের শিক্ষা ও এই মাসের বরকত দিয়ে আমাদের জীবন ও সমাজকে আলোকিত করুন।
লেখক: প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক, মারকাযুত তারবিয়াহ বাংলাদেশ, আলমনগর, সাভার, ঢাকা
