হ-বাংলা নিউজ: সামাজিক হেনস্তার ভয় কাটিয়ে ধর্ষণের বিচার চাওয়ার পথে নারীদের যেসব বাধার মুখে পড়তে হয়, তার মধ্যে প্রভাবশালীদের চাপ, আইনের ফাঁক, বিচারের প্রতিটি ধাপে সময়ক্ষেপণ এবং মামলার দীর্ঘসূত্রতা অন্যতম বড় কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মীরা। বর্তমানে যেখানে ৩০ দিনের মধ্যে তদন্ত এবং ১৮০ দিনের মধ্যে বিচার কাজ সম্পন্ন করার বিধান রয়েছে, সেখানে বিচার শেষ হতে সময় লাগছে ৫ বছর বা তারও বেশি। সম্প্রতি মাগুরার আলোচিত শিশু ধর্ষণের ঘটনার পর সরকার ১৫ দিনের মধ্যে তদন্ত এবং ৯০ দিনের মধ্যে বিচার কাজ সম্পন্ন করার কথা বলেছে। বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অধ্যাদেশের খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তবে প্রকৃতপক্ষে বিচার প্রক্রিয়ার প্রতিটি ধাপে সময়ক্ষেপণের চিত্রটি ভয়াবহ। আদালতে ধর্ষণ মামলার স্তূপ জমে গেছে এবং বিচার ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা হারাচ্ছে।
২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর ঢাকার বাড্ডায় এক কিশোরী ধর্ষণের শিকার হন। ওই দিনই থানায় মামলা করা হয় এবং আসামি ৩১ ডিসেম্বর গ্রেফতার হয়। ফরেনসিক রিপোর্টও দ্রুত পাওয়া যায়, কিন্তু এরপরই শুরু হয় দীর্ঘসূত্রতা। ৪ মাস পর ২০১৬ সালের ১০ এপ্রিল তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়। তবে একে একে ৫ বছর সময় লাগে মামলাটি শেষ হতে। বর্তমানে মামলাটি সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে।
এছাড়া, বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণের অভিযোগে ২০২৪ সালের ৯ এপ্রিল রাজধানীর পল্লবী থানায় মামলা দায়ের করা হয়, কিন্তু প্রায় এক বছর পরেও তদন্ত শেষ হয়নি। তদন্ত কর্মকর্তা বলেছেন, আইনে ৩০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা বলা হলেও বাস্তবে ডিএনএ রিপোর্ট, মেডিকেল সার্টিফিকেট, সাক্ষ্যপ্রমাণ এবং বিশেষজ্ঞ মতামত পেতে দেরি হয়।
২০১৮ সালের ২১ অক্টোবর, ৭ বছর আগে ঢাকা জেলার দোহারের বানাঘাটা গ্রামে ১৪ বছরের এক কিশোরী ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় আসামি জিয়াউর রহমানকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়, কিন্তু ওই মামলার চার্জশিট দেওয়া হয় ঘটনার সাড়ে ৪ মাস পর। মামলার নিষ্পত্তি করতে ৫ বছর সময় লেগেছে।
আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মীরা জানান, ধর্ষণের মামলার বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে। আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম বলেছেন, আদালতে এখন অনেক মামলার নিষ্পত্তি দ্রুত হচ্ছে। তবে এসব মামলা নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে সময়ক্ষেপণ কমানোর জন্য আরও পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিশেষ প্রসিকিউটোরিয়াল উপদেষ্টা, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী বলেন, তদন্ত সংস্থাকে দ্রুততম সময়ে তদন্ত শেষ করার জন্য সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে নতুন আইনের সংশোধন আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যা ধর্ষণ মামলাগুলোর নিষ্পত্তি দ্রুত করতে সাহায্য করবে।
তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, সংশোধিত আইনের মাধ্যমে মামলার তদন্ত ও বিচার দ্রুত নিষ্পত্তি হবে এবং আইনজীবীদের সুপারিশ অনুযায়ী নতুন ধারাগুলোর সন্নিবেশিত করার ফলে ধর্ষণ মামলার বিচার দ্রুত সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।
