হ-বাংলা নিউজ:বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সম্পাদক ও সিনিয়র সাংবাদিকরা আগামী (২০২৫-২৬) অর্থবছরের বাজেটে বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার সুপারিশ করেছেন। একই সঙ্গে, মূল্যস্ফীতি মোকাবিলায় ব্যক্তির করমুক্ত আয়সীমা ৪ লাখ টাকা নির্ধারণ এবং সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির পরিধি ও ভাতার পরিমাণ বাড়ানোর প্রস্তাবও দিয়েছেন তারা।
এই সুপারিশগুলো ১৪ জুন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক প্রাক-বাজেট আলোচনায় উত্থাপন করা হয়। বৈঠকে তিনি জানান, আগামী বাজেটে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি কোনো পরিকল্পনা অন্তর্ভুক্ত করা হবে না, বরং বর্তমান অগ্রাধিকার বিষয়গুলোর ওপর ফোকাস করা হবে। বাজেটটি বাস্তবায়নযোগ্য এবং জনগণের জন্য স্বস্তিদায়ক হবে, যা কোনো রাজনৈতিক দল বাদ দিয়ে রাখতে পারবে না।
এছাড়া, এলডিসি (লোয়েস্ট ডেভেলপড কান্ট্রি) থেকে উত্তরণের জন্য সরকারের প্রস্তুতি রয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। তবে, এর সঙ্গে সাথে দুর্নীতি কমানোর, ব্যয় সাশ্রয়ের এবং দেশের অভ্যন্তরে কাজ করা মানুষদের জাতীয় জিডিপিতে অন্তর্ভুক্ত করারও প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।
বৈঠকে অংশ নিয়ে দৈনিক যুগান্তর সম্পাদক আবদুল হাই শিকদার বলেন, গত কয়েক বছর ধরে চলমান ঊর্ধ্বমুখী মূল্যস্ফীতির কারণে সাধারণ মানুষের আয় কমে গেছে এবং ক্রয়ক্ষমতাও হ্রাস পেয়েছে। এজন্য আসন্ন বাজেটে ব্যক্তির করমুক্ত আয়সীমা ৪ লাখ টাকা করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতির কারণে জনগণ দুর্ভোগে পড়ছে, যা মোকাবিলার জন্য সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আকার এবং ভাতার পরিমাণ বৃদ্ধি করা উচিত। এছাড়া, টিসিবি’র কার্যক্রম বাড়িয়ে গরিব মানুষের জন্য পণ্য সরবরাহের ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তাব দেন তিনি।
দ্য ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ বলেন, রাজস্ব আদায়ে বড় ঘাটতি রয়েছে এবং মূল্যস্ফীতি কমছে না। তিনি উল্লেখ করেন, কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য সরকারের পদক্ষেপের ওপর গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন।
দৈনিক জনকণ্ঠের সিটি এডিটর কাওসার রহমান বলেন, দেশের অর্থনৈতিক ভিত্তি শক্তিশালী করার জন্য রেমিট্যান্স এবং রপ্তানি খাতকে আরও গুরুত্ব দিতে হবে। তিনি টিআইএনধারীদের রিটার্নের আওতায় আনারও পরামর্শ দেন।
অন্যদিকে, ইন্ডিপেন্ডেট টেলিভিশনের প্রধান বার্তা সম্পাদক শামীম জাহিদী বলেন, কর ব্যবস্থায় কালোটাকা মালিকদের এবং ভাল ব্যবসায়ীদের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই, যা কর আদায়ের ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি করছে। তিনি কেবল অপারেটরদের করের আওতায় আনার প্রস্তাব করেন।
প্রথম আলোর হেড অফ অনলাইন শওকত হোসেন বাজেটের আকার বাস্তবমুখী করার এবং বাজেট বক্তৃতার বই ছোট পরিসরে প্রস্তুত করার প্রস্তাব দেন। এছাড়া, কর্মসংস্থানের পরিসংখ্যানও বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানান।
এছাড়া, অন্যান্য সম্পাদক এবং সাংবাদিকরা বলেন, নগদ টাকা লেনদেন কমিয়ে ক্যাশলেস সোসাইটি গড়ে তোলা হলে কালোটাকা কমে আসবে। এছাড়া, শিশুদের কল্যাণে বাজেটে বরাদ্দ বাড়ানোর পাশাপাশি স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে আরও বরাদ্দ বৃদ্ধির সুপারিশও করা হয়।
প্রাক-বাজেট আলোচনায় ভুল তথ্যে জিডিপির প্রবৃদ্ধি নির্ধারণের বিষয়টি উঠে আসে। তারা বলেন, রপ্তানি খাতের ভুল তথ্য সংশোধন করা হলেও, সঠিক জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিরূপণের জন্য সঠিক তথ্য সরবরাহের প্রয়োজন।
এছাড়া, এলডিসি থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা করে বলা হয়, প্রস্তুতিতে আরও কিছু কাজ বাকি রয়েছে, যা ভবিষ্যতে আরও বৃদ্ধি করতে হবে।
