হ-বাংলা নিউজ:ময়মনসিংহের নান্দাইল মডেল থানায় অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ফরিদ আহমেদ মাত্র ১৬৯ দিন দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এই সময়ের মধ্যেই তিনি ছিলেন একাধিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। তাঁর নিয়মিত কুরআন তেলাওয়াত, নামাজ, জিকির এবং মসজিদে উপস্থিতি অনেকের কাছে তাঁকে ধার্মিক ওসি হিসেবে পরিচিত করেছিল। শুধু ধর্মীয় কার্যকলাপেই নয়, রাস্তায় পড়ে থাকা মানুষের চিকিৎসা ও বৃদ্ধাশ্রমে থাকার ব্যবস্থা করে তিনি মানবিক ওসি হিসেবেও প্রশংসিত হয়েছিলেন।
তবে এই পরিচয়ের আড়ালে বাস্তবে তিনি বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছিলেন। বিশেষ করে, মাদক কারবারিদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করলেও, তিনি মাদক ব্যবসায়ীদের থেকে মোটা অঙ্কের বকশিশ নিয়ে পরবর্তীতে তাদেরকে মুক্তি দিতেন। আর সরকারি খাস জায়গায় অবৈধ দোকান গড়ে উঠলে, ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা নিয়ে তাদের ব্যবসা চালাতে সুযোগ দিয়ে টাকা আদায় করতেন।
এছাড়া, ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে মামলা করেও তাদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করার অভিযোগ ওঠে। নান্দাইল বাজারের এক ওষুধ ব্যবসায়ী দেলোয়ার হোসেনের কাছে তিনি ৫০ হাজার টাকা আদায় করেন, জেলহাজতে পাঠানোর ভয় দেখিয়ে। তেমনি, চৌরাস্তা বাজারের ব্যবসায়ী রুবেল ও কাজল মিয়াসহ আরো কয়েকজন ব্যবসায়ীকে জেলহাজতে পাঠিয়ে মাসিক চাঁদা আদায় করতেন।
এরপরেও তিনি একাধিক পুরস্কার লাভ করেছিলেন। ২০২৪ সালের ২৪ নভেম্বর মাদক উদ্ধার কার্যক্রমে জেলার শ্রেষ্ঠ পুরস্কার পান, এরপর ২ ফেব্রুয়ারি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির জন্যও শ্রেষ্ঠ ওসি হিসেবে পুরস্কৃত হন। ১৩ ফেব্রুয়ারি একটি চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন এবং আসামি গ্রেফতারে তাঁর আরেকটি পুরস্কার পাওয়া যায়। কিন্তু এসব ‘গৌরব’ তার অন্ধকার কার্যকলাপগুলোকে ঢেকে দেয়।
বৃহস্পতিবার তাকে অজ্ঞাত কারণে ময়মনসিংহ পুলিশ অফিসে বদলি করা হয়। বদলির পর থানায় এসে পাওনাদাররা ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকেন। এরপর, শুক্রবার ভোর রাতে তিনি পাওনাদারদের বকেয়া টাকা পরিশোধ করেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি অভিযোগগুলো অস্বীকার করে বলেন, “এগুলো গুজব রটানো হচ্ছে, তবে পাওনাদারের টাকা পরিশোধ করেছি।”
তবে, সব অভিযোগ অস্বীকার করা সত্ত্বেও, নান্দাইলের ব্যবসায়ীরা দাবি করেছেন যে, তিনি তাদের কাছ থেকে নানা পণ্যসামগ্রী নিয়ে টাকা পরিশোধ করতে বিলম্ব করেছিলেন।
