সরকারের বিরুদ্ধে একের পর এক আন্দোলনের ঢেউ, অস্থির পরিস্থিতির সৃষ্টি

হ-বাংলা নিউজ: সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই একের পর এক আন্দোলনের ঢেউ সরকারের ওপর আছড়ে পড়ছে। একদিকে সমস্যার সমাধান শেষ হতে না হতেই আরেকটি নতুন সমস্যা তৈরি হচ্ছে। এর ফলে দাবির মিছিল দীর্ঘ হতে থাকছে, যা কখনো কখনো আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিও ঘটাচ্ছে। খুন, ছিনতাই, চলন্ত যানবাহনে নারীদের শ্লীলতাহানি এবং অন্যান্য ভয়াবহ অপরাধ বেড়ে গেছে। এসব ঘটনার পেছনে পরাজিত রাজনৈতিক শক্তির হাত রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ আওয়ামী লীগের ফ্যাসিস্ট নেতারা বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে বিবৃতি দিয়েছেন এবং বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে আন্দোলনের পক্ষে নির্দেশনা দিচ্ছেন। এমনকি আওয়ামী লীগের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজেও হরতাল, মশাল মিছিল এবং লিফলেট বিতরণের মতো কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে, যা সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে অস্থিরতা সৃষ্টি করছে। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে, যেখানে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ সাবেক প্রশাসনিক ও পুলিশ কর্মকর্তাদের নামও চিহ্নিত হয়েছে।

এছাড়া, সরকারের বিরুদ্ধে ঈদ সামনে রেখে গার্মেন্ট সেক্টরে বড় ধরনের অস্থিরতা সৃষ্টি করতে ষড়যন্ত্র চলছে। সেখানে বিভিন্ন দাবিকে ইস্যু করে শ্রমিকদের মধ্যে অস্থিরতা তৈরি করা হচ্ছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ‘ভায়োলেন্স ক্রিয়েটার গ্রুপ’ নামে একটি গ্রুপ গঠন করা হয়েছে, যারা টাকার বিনিময়ে অবরোধ, মিছিল এবং অন্যান্য সংঘবদ্ধ অপরাধের পরিকল্পনা করছে। সরকারের সংশ্লিষ্টরা বিষয়টি নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন।

এদিকে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর চেষ্টা গত ফেব্রুয়ারিতে শুরু হয়েছিল। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের অডিও বার্তা ফাঁস হওয়ার পর এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ‘জিরো টলারেন্স’ ঘোষণা করেন। এর ফলে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে। তবে, তিনি আরও জানান, আওয়ামী লীগের পলাতক নেতাদের কাছে প্রচুর টাকা রয়েছে, যার মাধ্যমে তারা দেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে।

সরকারি সূত্র জানায়, এসব ষড়যন্ত্রের পেছনে রাজনৈতিক নেতা ছাড়াও কিছু আমলাদের হাত রয়েছে। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—ধনঞ্জয় কুমার দাস, শেখ ছালে আহম্মদ, নাসরিন পারভীন, বিকাশ বিশ্বাস, আমিনুল ইসলাম, সেখ ফরিদ আহমেদ, শরিফা আহমেদ, ড. ফারুক আহমদ, আবু সাঈদ মোল্লাহ এবং আরও অনেকে।

পুলিশ মহাপরিদর্শক বাহারুল আলম বলেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ অনেকেই দেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্রে জড়িত। তাদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচার করা হবে এবং যারা দেশেই ষড়যন্ত্রে লিপ্ত, তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চলবে।

এছাড়া, সরকার পরিবর্তনের পর থেকেই গার্মেন্ট সেক্টরে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে এবং একাধিক গার্মেন্ট কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। বেক্সিমকো গ্রুপসহ ফ্যাসিবাদী সরকার এবং তাদের পলাতক দোসররা এই অস্থিরতা সৃষ্টির পেছনে রয়েছে।

অপরদিকে, বিদ্যুৎ খাতে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে একাধিক ষড়যন্ত্র হচ্ছে, যার নেপথ্যে ছাত্রলীগের কিছু নেতা ও দেশি-বিদেশি চক্র রয়েছে। গার্মেন্ট, বিদ্যুৎ, শিক্ষা ও রেলওয়ে খাতের আন্দোলনগুলোর পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য স্পষ্ট।

এ ধরনের পরিস্থিতিতে সরকার ইতোমধ্যেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে এবং এসব ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *