হ-বাংলা নিউজ: সয়াবিন তেলের দাম লিটারে আরও ১৫ টাকা বাড়ানোর চেষ্টা করছে একটি সিন্ডিকেট চক্র। সরকার রোজার আগেই একদফা দাম বাড়ানোর পর, বাজারে তেলের সরবরাহ স্বাভাবিক হয়নি এবং এখন ঈদের আগে আবার বিপুল অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিতে এই চক্র ফাঁদ পেতে কাজ করছে। নতুনভাবে আমদানি করা তেল বন্দরে খালাস করা হচ্ছে না এবং তা ‘মাদার ভেসেল’ থেকে ‘লাইটার জাহাজে’ আনলোড করা হচ্ছে। অবৈধভাবে মজুত করে গভীর সমুদ্রে তেল রাখা হয়েছে, এবং সরকারিভাবে নতুন দাম ঘোষণা হওয়ার পরই এই তেল খালাস করে বাজারে ছাড়বে। বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।
রাজধানীর মৌলভীবাজারে সয়াবিন তেলের পাইকারি বাজারে কয়েকজন বড় ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা জানান, দেশে তেলের কোনো সংকট নেই। আসলে কোম্পানিগুলো এবার রোজায় সরকারিভাবে তাদের চাহিদামতো খুচরা মূল্য নির্ধারণ করতে পারেনি। তেলের বাজার নিয়ন্ত্রণকারী প্রভাবশালী মহল প্রথমে চেয়েছিল লিটারে ২০ টাকা বাড়াতে, কিন্তু সরকার ৮ টাকা বাড়িয়ে দাম নির্ধারণ করে ১৭৫ টাকা। এতে তারা ক্ষুব্ধ হয়ে আবার লিটারে ১৫ টাকা বাড়ানোর জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছে। তাদের দাবি, বাজারে তেলের সরবরাহ স্বাভাবিক করতে হলে এই দাম বাড়ানো প্রয়োজন।
এদিকে, সয়াবিন তেলের সরবরাহে কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। তারা জানান, বিপুল পরিমাণ তেল সমুদ্রে মজুত করা হয়েছে এবং লাইটার জাহাজে তা রাখা হচ্ছে। তারা আরও জানান, প্রশাসনসহ কিছু ব্যক্তি এ মজুত করার প্রক্রিয়ায় জড়িত, তবে কেউ তা স্বীকার করছে না। ঈদের আগে দাম বাড়ানোর পর তেল খালাস করে সরবরাহ লাইনে প্রবাহিত করা হবে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ২৬ ফেব্রুয়ারি একটি সার্কুলার জারি করে জানিয়েছে, মাদার ভেসেল থেকে লাইটার জাহাজে পণ্য খালাস করার পর তা ৭২ ঘণ্টার মধ্যে বন্দরের সীমানা ত্যাগ করতে হবে। পণ্য মজুত করা, সংকট সৃষ্টি এবং মূল্য বৃদ্ধি করা রাষ্ট্র ও জনস্বার্থবিরোধী উল্লেখ করে এ সার্কুলার জারি করা হয়।
চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ বলেন, বর্তমানে ৪/৫টি কোম্পানি তেল আমদানি করে, কিন্তু তারা তেলের প্রয়োজনীয়তা ও পরিমাণের সঠিক মনিটরিং করতে ব্যর্থ। তিনি আরও বলেন, ট্যারিফ কমিশন ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উদাসীনতার কারণে তেলের বাজারে সংকট সৃষ্টি হচ্ছে।
বাংলাদেশ লাইটার শ্রমিক ইউনিয়নের সহসভাপতি মোহাম্মদ নবী আলম বলেন, আমদানিকারকরা লাইটার জাহাজে পণ্য মজুত করে সংকট সৃষ্টি করছে। এর ফলে নৌপথে অন্যান্য পণ্যের পরিবহণে সমস্যা হচ্ছে।
এছাড়া, ক্যাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন বলেন, সয়াবিন তেলের দাম বাড়াতে কারসাজি করছে কোম্পানিগুলো। তারা কৃত্রিম সংকট তৈরি করে ঈদের সময় লাভবান হতে চায়।
অন্যদিকে, বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনষ্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ মুস্তাফা হায়দার বলেন, সয়াবিন তেলের দাম বৈশ্বিক বাজার ও অভ্যন্তরীণ খরচের সঙ্গে সমন্বয় করা উচিত। তবে সরকারের সিদ্ধান্তের কারণে ভ্যাট ছাড় রাখা হয়েছে রোজার সময়, যাতে দাম বৃদ্ধি না পায়।
বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের বার্ষিক ভোজ্যতেলের চাহিদা ২৩ থেকে ২৪ লাখ টন। ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৫ জানুয়ারি ২০২৫ পর্যন্ত আমদানি হয়েছে ১৮ লাখ ৫৭ হাজার ৫৪৮ টন, এবং দেশের উৎপাদন ২ লাখ ৫০ হাজার টন। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম নিম্নমুখী থাকলেও, দেশে দাম বাড়ছে।
