হ-বাংলা নিউজ:
আগামী বাজেটে (২০২৫-২৬) সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় নতুন করে বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী ভাতাভোগীর সংখ্যা তিন লাখ বাড়ানো হবে। পাশাপাশি, তাদের মাসিক ভাতার পরিমাণও ৫০ টাকা বাড়ানো হবে। তবে বিদ্যমান মূল্যস্ফীতি এবং গরিব মানুষের জীবনযাত্রার উপর এর প্রভাব বিবেচনায়, এই ভাতা বৃদ্ধির পরিমাণ খুবই সামান্য বলে মনে হচ্ছে।
এ সিদ্ধান্তটি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির এক বৈঠকে গৃহীত হয়েছে, যা অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
বর্তমান অর্থনৈতিক সংকট এবং দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা অত্যন্ত কঠিন হয়ে উঠেছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রতি মাসে পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের বেশি ছিল, এবং ফেব্রুয়ারি মাসে এটি ছিল ৯.৩২ শতাংশ, যেখানে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ৯.২৪ শতাংশ। এই উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে দরিদ্র ও নিন্ম আয়ের মানুষ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘‘সাধারণ মানুষের ওপর চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। বিনিয়োগের অভাবে কর্মসংস্থান কমছে, ফলে মূল্যস্ফীতি এবং অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা বাড়াতে হচ্ছে।’’
অর্থ সচিব (সিনিয়র) মাহবুব আহমেদ যুগান্তরকে জানান, ‘‘বিনিয়োগ না থাকার কারণে অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধি নেই এবং কর্মসংস্থান কমছে। একই সঙ্গে মূল্যস্ফীতি বাড়ায় সাধারণ মানুষের অবস্থা খারাপ হয়ে পড়ছে। এই কারণে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, এবং আমি মনে করি এটি সঠিক সিদ্ধান্ত।’’
বৈঠকে জানানো হয়েছে, আগামী অর্থবছরের বাজেটে নতুন করে বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা ও প্রতিবন্ধী ভাতাভোগীর সংখ্যা এক লাখ করে বাড়ানো হবে। এতে, চলতি অর্থবছরে (২০২৪-২৫) বয়স্ক ভাতা পাচ্ছেন ৬০ লাখ ১ হাজার ব্যক্তি, যা আগামী অর্থবছরে ৬১ লাখ ১ হাজারে বৃদ্ধি পাবে, এবং ভাতার পরিমাণ ৬০০ টাকা থেকে ৬৫০ টাকা করা হবে। বিধবা ভাতা পাচ্ছেন ২৭ লাখ ৭৫ হাজার নারী, যাদের সংখ্যা বেড়ে ২৮ লাখ ৭৫ হাজার হবে এবং ভাতা ৬০০ টাকা থেকে ৬৫০ টাকা হবে। প্রতিবন্ধী ভাতা ৩২ লাখ ৩৪ হাজার ব্যক্তি পাচ্ছেন, তাদের সংখ্যা বেড়ে ৩৩ লাখ ৩৪ হাজার হবে, এবং ভাতা ৮৫০ টাকা থেকে ৯০০ টাকা হবে।
এছাড়া, অন্যান্য ভাতার সুবিধাভোগীর সংখ্যাও কিছু বাড়ানো হবে, যা সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে।
বৈঠকে আরও জানানো হয়েছে যে, আগামী অর্থবছরে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নিহত এবং আহতদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এই উদ্দেশ্যে ৪০৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। তবে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় এই অর্থের কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
সূত্রমতে, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় বর্তমানে ১৪০টি কর্মসূচি চলমান রয়েছে। নতুন করে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহত ও নিহতদের এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে কিছু নীতিমালায় পরিবর্তন আনা হবে। এ বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়কে একটি দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
