গণপরিষদ নির্বাচন নিয়ে নতুন আলোচনা; সৃষ্ট হচ্ছে রাজনৈতিক বিতর্ক

হ-বাংলা নিউজ: রাজনীতিতে হঠাৎ করেই গণপরিষদ নির্বাচনের আলোচনা শুরু হয়েছে। এর আগে কিছু কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তি গণপরিষদ নির্বাচন নিয়ে কথা বললেও তা তেমন গুরুত্ব পায়নি। তবে বর্তমানে বিষয়টি গুরুত্বের সাথে আলোচিত হচ্ছে, কারণ ছাত্রদের নতুন রাজনৈতিক দল, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), তাদের আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশের দিনে গণপরিষদ নির্বাচনের দাবি তুলেছে। অন্যান্য রাজনৈতিক দলও এই বিষয়ে নানা মতামত প্রকাশ করেছে।

এনসিপি দাবি করছে, গণপরিষদ নির্বাচন নতুন সংবিধান প্রণয়নের জন্য অপরিহার্য।

শেখ হাসিনার সরকারের পতন ঘটানো ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর, আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন দলের মধ্যে একধরনের ঐক্য দেখা গিয়েছিল। তবে সময়ের সাথে সাথে দলগুলো তাদের নিজস্ব রাজনৈতিক কৌশল নিয়ে এগিয়ে এসেছে। বিএনপি শুরু থেকেই দ্রুত জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের পক্ষে। জামায়াতে ইসলামী সংস্কারের পর ‘যৌক্তিক সময়’ এর মধ্যে নির্বাচন চায়। অন্য দলগুলোও একে অন্যের মতো একই রকম মতামত দিয়েছে।

তবে এনসিপি গণপরিষদ নির্বাচনের কথা বলছে, যা বিএনপি নির্বাচন পেছানোর ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছে। দলটির স্থানীয় কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ ঢাকায় সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে গণপরিষদের দাবির সমালোচনা করেছেন।

তিনি বলেছেন, যারা গণপরিষদ নির্বাচন দাবি করছেন, তারা হয় বুঝে না বা বুঝেও আমাদের রাষ্ট্রব্যবস্থাকে আরো দীর্ঘায়িত গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্যে নিয়ে যাওয়ার ষড়যন্ত্র করছেন।

এদিকে, গণপরিষদ নির্বাচন হলে কি জাতীয় সংসদ নির্বাচন পেছাতে হবে, এমন প্রশ্ন উঠছে রাজনৈতিক মহলে। নির্বাচন কমিশন বলছে, স্থানীয় সরকার নির্বাচন হলে জাতীয় নির্বাচন পিছিয়ে যেতে পারে। নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেছেন, ‘আমরা যদি স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে করি, তাহলে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনেক পিছিয়ে যাবে। তখন প্রধান উপদেষ্টা ডিসেম্বর অথবা পরবর্তী বছরের জুনে যে সময়সীমা বলেছেন, সেটি রক্ষা করা সম্ভব হবে না।’

এই ধরনের মন্তব্যের মধ্যে প্রশ্ন উঠছে, শেষমেশ জাতীয় সংসদ, গণপরিষদ বা স্থানীয় সরকার নির্বাচনের বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত আসে।

বিএনপি ইতোমধ্যেই সেকেন্ড রিপাবলিক, নতুন সংবিধান অথবা গণপরিষদ নির্বাচন নিয়ে বিরোধিতা করেছে। তারা মনে করছে, এর মাধ্যমে নির্বাচন পেছানোর চেষ্টা হচ্ছে। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘‘যে কেউ যে কোনো কথা বলতেই পারে, তবে তা পূর্ণ করতে জনগণের ম্যান্ডেট প্রয়োজন।’’

তিনি আরও বলেন, ‘‘এখানে নির্বাচন পেছানোর কোনো সুযোগ নেই। ডিসেম্বরের পরে তো এটি অসম্ভব হয়ে যাবে।’’ তিনি উল্লেখ করেন, ‘‘বাংলাদেশে গণতন্ত্রহীন অবস্থার কারণে মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করা বিলম্বিত হচ্ছে, যা একদিনও থাকার প্রয়োজন নেই।’’

এনসিপির দাবি, তারা নির্বাচনের সময় পেছাতে চায় না। এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল আসলাম আদিব এই দাবি অস্বীকার করে বলেন, ‘‘আমরা গণপরিষদ নির্বাচন চেয়ে জাতীয় নির্বাচন পেছাতে চাইনি। আমাদের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ইতোমধ্যে বলেছেন, গণপরিষদ এবং জাতীয় সংসদ নির্বাচন একসঙ্গে হতে পারে। এতে কোনো নির্বাচনই পেছাতে হবে না।’’

এছাড়া তিনি বলেন, ‘‘এটা একসঙ্গে হতে পারে, কারণ নির্বাচিত প্রতিনিধিরা সংবিধান পরিবর্তন এবং নতুন সংবিধান তৈরির ম্যান্ডেট পাবে, পাশাপাশি পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকার ম্যান্ডেটও তারা পাবে।’’

এখন প্রশ্ন উঠছে, গণপরিষদ নির্বাচন এবং জাতীয় নির্বাচন একসঙ্গে হতে পারবে কি না? এনসিপি মনে করছে, এতে জাতীয় নির্বাচন পিছাবে না, তবে অন্যান্য রাজনৈতিক দল বিষয়টি নিয়ে সন্দিহান। জামায়াতে ইসলামী এবং এনসিপি উভয়েই স্থানীয় নির্বাচন আগে করার পক্ষে। জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘‘এখন কোনো সিটি করপোরেশনে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি নেই, তাই স্থানীয় সরকার নির্বাচন প্রয়োজন।’’

অন্যদিকে বিএনপি স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে একটি ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করছে। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘‘স্থানীয় নির্বাচন আয়োজন করা হলে জাতীয় নির্বাচন পিছিয়ে যাবে।’’ তিনি বলেন, ‘‘এই সরকারের ম্যান্ডেটের মধ্যে স্থানীয় সরকার নির্বাচন নেই।’’

এনসিপিও স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে করতে চায়, তবে তারা মনে করে, এর জন্য প্রয়োজন হলে নির্দিষ্ট কিছু জেলা বা উপজেলা নির্বাচন করা যেতে পারে।

এদিকে, নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে যে, স্থানীয় সরকার নির্বাচন সম্পন্ন করতে অন্তত এক বছর সময় প্রয়োজন হতে পারে। যদি স্থানীয় নির্বাচন আগে অনুষ্ঠিত হয়, তাহলে জাতীয় নির্বাচন পিছিয়ে যাবে। তবে নির্বাচন কমিশন ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

এনসিপি এবং অন্যান্য দলের এই বিতর্কের মধ্যে, নির্বাচনের সময়সীমা এবং পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *