জাতিসংঘ মানবাধিকার দপ্তর জুলাই ও আগস্টের বর্বরতার চিত্র তুলে ধরল

হ-বাংলা নিউজ:  জাতিসংঘ মানবাধিকার দপ্তর বুধবার জেনেভায় অনুষ্ঠিত মানবাধিকার কাউন্সিলের ৫৮তম অধিবেশনে বাংলাদেশে জুলাই ও আগস্ট মাসে ঘটে যাওয়া বর্বরতার চিত্র পুনরায় তুলে ধরেছে। সেখানে বিক্ষোভরত মানুষের ওপর গুলিবর্ষণ এবং দমন-পীড়নের ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে।

ভিকটিমদের হৃদয়বিদারক বর্ণনায় উপস্থিত পরিবেশ বদলে যায়। তাদের মতে, একটি বুলেট কেবল একজনকেই আহত বা নিহত করেনি; বরং পুরো পরিবারকেই পথে বসিয়ে দিয়েছে। ক্ষতিপূরণ দিয়ে এই ঘটনার সমাপ্তি ঘটানো সম্ভব নয়, বরং এর জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদি সমাধান প্রয়োজন। হতাহতদের কষ্টের পাশাপাশি তাদের জন্য ন্যায়বিচার, চিকিৎসা এবং বর্তমান ব্যবস্থার সংস্কারের প্রতি সমর্থন উঠে আসে আলোচনায়। মানবাধিকারকে কেন্দ্র করে সংস্কারের আহ্বানও সেখানে স্থান পায়।

এদিন জাতিসংঘ মানবাধিকার দপ্তরের মুখপাত্র রাভিনা সামদানির সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে জাতিসংঘ মানবাধিকার হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক, বাংলাদেশের আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, সিভিল সোসাইটির প্রতিনিধি ফারহানা শারমিন ইমো, শহিদ মির মাহফুজুর রহমান মুগ্ধের ভাই মির মাহমুদুর রহমান দীপ্ত, গুম হওয়া যুবদল নেতা সুমনের বোন সানজিদা, ১৭ বছর বয়সী আন্দোলনে অংশ নেওয়া আইনের ছাত্রী নওশিন, নেদারল্যান্ডস ও সৌদি সরকারের প্রতিনিধি এবং সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যান উপস্থিত ছিলেন।

এছাড়া, অনুষ্ঠানে ডেভিড বার্গম্যানের তৈরি একটি প্রামাণ্য ভিডিও দেখানো হয়, যেখানে যাত্রাবাড়ীতে কীভাবে বর্বরতা চালানো হয়েছে তা তুলে ধরা হয়। জাতিসংঘ মানবাধিকার দপ্তরের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং রিপোর্টের সুপারিশ মেম্বার স্টেটদের সামনে উপস্থাপন করা হয়। ১২ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত ওই রিপোর্টে জানানো হয়, জুলাই-আগস্ট মাসে এক হাজার চারশো মানুষ নিহত হয়েছে।

ভলকার তুর্ক তার বক্তৃতায় বলেন, সাবেক রাজনৈতিক নেতাদের এবং নিরাপত্তা বাহিনী ও গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের মদদেই এসব নির্যাতন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা ঘটেছে। তিনি এসময় বাংলাদেশের ভিকটিমদের সঙ্গে কথা বলার স্মৃতি স্মরণ করেন এবং তাদের আহত হওয়া, জীবনযাত্রা এবং সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে গুরুত্ব আরোপ করেন।

আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেন, জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি এই বর্বরতার চিত্র সঠিকভাবে তুলে ধরেছে এবং তাদের জন্য অবশ্যই জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হবে। তিনি জানান, আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে আইন সংস্কার করা হয়েছে। অনেককেই গুম করা হয়েছে এবং আহতদের চিকিৎসা না দিয়ে তাদের অবহেলা করা হয়েছে।

এছাড়া, তিনি বলেন, ১৫টি সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে এবং ছয়টি কমিশনের প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। তার মতে, এসব প্রতিবেদন জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং রিপোর্টের সুপারিশের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।

ফারহানা শারমিন ইমো, যিনি পেশায় একজন আর্কিটেক্ট, বিক্ষোভের দিনগুলোতে আহতদের সাহায্য করেছিলেন, বলেন, “একটি বুলেট শুধুমাত্র একজনকেই আহত করে না, এটি পুরো পরিবারকেই হতাশার মধ্যে ফেলে দেয়।”

মুগ্ধর ভাই মির মাহমুদুর রহমান দীপ্ত বলেন, “এখন নতুন স্লোগান উঠেছে, ‘আবু সাঈদ মুগ্ধ/শেষ হয়নি যুদ্ধ’”। সানজিদা বলেন, “সত্য বেরিয়ে আসা প্রয়োজন এবং অপরাধীদের বিচার হওয়া উচিত।” নওশিন বলেন, “গুলিতে আমার ভাই আহত হয়েছিল। তখন কোনো হাসপাতাল তাকে চিকিৎসা দেয়নি, তবে ভাগ্যক্রমে সে বেঁচে গেছে। একটি প্রজন্ম মানসিকভাবে ট্রমা হয়ে গেছে।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *