হ-বাংলা নিউজ: হাসিনা সরকারের পতনের পর, ৫ আগস্ট মো. জসীম উদ্দিনকে নতুন পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তিনি ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সরকারের আমলে ২৭তম পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের স্থলাভিষিক্ত হন। গত ৮ সেপ্টেম্বর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে জসীম উদ্দিনের নাম নতুন পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে যুক্ত করা হয়।
এর আগে, জসীম উদ্দিন চীনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এর আগে তিনি কাতার এবং গ্রিসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ছিলেন। বিসিএস পররাষ্ট্র ক্যাডারের ত্রয়োদশ ব্যাচের কর্মকর্তা হিসেবে জসীম উদ্দিন নয়াদিল্লি, টোকিও, ওয়াশিংটন ডিসি এবং ইসলামাবাদে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম এবং ব্যর্থতা
জসীম উদ্দিন পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জুলাই বিপ্লবের বিষয়ে কোনো কার্যকর ন্যারেটিভ তৈরি করা হয়নি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কোনো ধরনের সংস্কারের পদক্ষেপও দেখা যায়নি। এই ব্যর্থতার জন্য তাকে দায়ী করা হচ্ছে।
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের বৈধতা তুলে ধরতে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কোনো কার্যক্রম গ্রহণ করতে সক্ষম হয়নি। বহুপক্ষীয় কূটনীতিতেও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্যর্থতা স্পষ্ট হয়ে উঠছে। এছাড়াও, আওয়ামী দোসরদের অনেককে বঞ্চিত কর্মকর্তা অভিহিত করে সুপারিশ তৈরি করা হয়েছে।
ফ্যাসিস্ট আমলে জসীম উদ্দিন জনপ্রশাসন পদক পেয়েছিলেন, যা তিনি শেখ হাসিনার হাত থেকে গ্রহণ করেন। তার ফেসবুক পেজে তিনি এ পদক গ্রহণের ছবিও শেয়ার করেছিলেন, যেখানে তিনি লিখেছিলেন, “২০১৮ সালের ২৩ জুলাই একটি স্মরণীয় দিন। এই দিনে আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট থেকে জনপ্রশাসন পদক গ্রহণ করি।” এই পদক, মূলত, কেবল কট্টর আওয়ামী সমর্থকদের জন্য দেওয়া হতো।
জসীম উদ্দিনের কর্মকাণ্ডে অসাফল্য
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর, দেশ অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠলেও, জসীম উদ্দিন হাসিনা সরকারের অনুগত ছিলেন। তিনি নিজে তার ফেসবুকে আওয়ামী লীগ সরকারের পক্ষে পোস্ট করেছেন। হাসিনাকে ফেরত পাঠানোর এবং ভারতের কাছে হাসিনার বাংলাদেশবিরোধী কার্যকলাপ বন্ধ করার ব্যাপারে কোনো চাপ সৃষ্টি করতে পারেননি তিনি।
বর্তমানে নিউইয়র্কে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বাংলাদেশি দূতাবাসগুলো আওয়ামীপন্থি কর্মকর্তাদের পুনর্বাসন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। সাবেক মন্ত্রী দীপু মনির সুপারিশে টাকার বিনিময়ে নিয়োগপ্রাপ্ত প্রায় ৩০ কর্মচারী বাংলাদেশের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি করছেন। সাবেক প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমও তার নির্বাচনী এলাকা থেকে প্রায় ৯০ জনকে নিয়োগ দিয়েছিলেন।
মোজাম্মেল হকের নিয়োগ এবং বিতর্ক
গত বছরের ২৬ অক্টোবর, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক অফিস আদেশের মাধ্যমে চীনে নিযুক্ত বাংলাদেশ মিশনের উপ-প্রধান মোজাম্মেল হককে প্রফেসর ইউনূসের একান্ত সচিব হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। মোজাম্মেল সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী বেইজিংয়ে তার দায়িত্ব হস্তান্তর করে ঢাকা আসেন, তবে জসীম উদ্দিন তখন দুবাইতে অবস্থান করছিলেন।
জসীম উদ্দিন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনকে একাধিকবার ফোন করে মোজাম্মেলের নিয়োগ বাতিলের জন্য ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেন। তিনি দাবি করেন, মোজাম্মেল একান্ত সচিব হিসেবে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে যোগ দিলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ করবে। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা জসীমের অনুরোধে আলী ইমাম মজুমদারকে ফোন করে মোজাম্মেলের নিয়োগ বাতিলের অনুরোধ করেন। এর ফলস্বরূপ, মাত্র একদিনের মধ্যে ২৭ অক্টোবর মোজাম্মেলের নিয়োগ বাতিল করা হয়।
অর্থ অপচয় এবং প্রশাসনিক ব্যর্থতা
জসীম উদ্দিনের সিদ্ধান্তে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কার্যকর পদক্ষেপের অভাব এবং নানান প্রশাসনিক ব্যর্থতার পাশাপাশি, ডিসেম্বরে তিনি কনসালটেশনের নামে বহু গুরুত্বহীন দেশে সফর করে রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয় করেছেন। এসব পদক্ষেপের কারণে তার প্রতি বিরোধিতা এবং সমালোচনা তীব্র হয়ে উঠেছে।
উপসংহার
পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে জসীম উদ্দিনের দায়িত্ব গ্রহণের পর, তার নেতৃত্বে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কোনো উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন বা উন্নতি হয়নি। কূটনৈতিকভাবে এবং প্রশাসনিকভাবে তার দায়িত্বে তেমন কোনো সাফল্য দেখা যায়নি, যা সরকারের প্রতি জনগণের আস্থাহীনতা তৈরি করছে।
