আয়নাঘর পরিদর্শনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, সাংবাদিক তাসনিম খলিলের অভিজ্ঞতা

হ-বাংলা নিউজ:  বুধবার দুপুরে ঢাকা শহরের কচুক্ষেত, উত্তরা এবং আগারগাঁওয়ে অবস্থিত ডিজিএফআই এবং র‌্যাবের আয়নাঘর পরিদর্শন করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

এসময় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ছিলেন নেত্র নিউজের এডিটর-ইন-চিফ তাসনিম খলিল। ২০২২ সালে নেত্র নিউজে ‘আয়নাঘরের বন্দি’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল, যা ব্যাপক আলোচিত হয়।

আয়নাঘর পরিদর্শন শেষে তাসনিম খলিল তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।

তিনি লিখেছেন, “বাংলাদেশের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআইয়ের গোপন বন্দিশালা ও নির্যাতনকেন্দ্র জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেল (জেআইসি) বা আয়নাঘর, যা ২০২২ সালে নেত্র নিউজে প্রকাশিত হয়েছিল, সেই আয়নাঘর পরিদর্শনে গেলাম। প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসের সঙ্গে আছি, কিন্তু আমার মাথায় কাঁঠাল গাছ আর আম গাছ ঘুরছে। আম গাছ কি কেমন ছিল, কাঁঠাল গাছ কীভাবে দেখতাম, একেকটা ঘটনা মনে পড়ছে। একটি কাঁঠাল গাছ খুঁজে বের করতে হবে।”

তিনি আরও বলেন, “এই আয়নাঘরের এক সাবেক বন্দির সঙ্গে কথা বলেছিলাম, যিনি বহু মাস সেই সেলে ছিলেন। তিনি জানিয়েছিলেন যে, সেলের দরজায় দাঁড়ালে, সামনের দেয়ালের ঘুলঘুলির মাধ্যমে এক কাঁঠাল গাছ দেখা যেত। সুতরাং, আমি ওই কাঁঠাল গাছটি খুঁজে বের করতে চাইছিলাম।”

তাসনিম খলিল স্মৃতিচারণ করেন, “যখন বন্দিশালার গেটের সামনে দাঁড়ালাম, তখন কাঁঠাল গাছ দেখার মতো কিছু মনে পড়েনি। কিন্তু হঠাৎ মনে পড়ল—এটাই তো সেই গেট, যা শেখ মোহাম্মদ সেলিম (সারভাইভার-১) বলেছেন! কলাপসিবল গেট এবং সিঁড়ি, সব মিলিয়ে ছবির মতো মনে পড়ল। ওপরে ছিল ‘করোনা আইসোলেশন সেন্টার’ লেখা সাইনবোর্ড।”

পরবর্তী সময়ে তাসনিম খলিল গেট দিয়ে প্রবেশ করে বিভিন্ন সেল পরিদর্শন করতে থাকেন। এক পর্যায়ে তিনি একজন সেনাবাহিনীর কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেন, যিনি তাকে জানিয়ে দেন যে তাসনিম খলিল কেবল খুঁজছেন সেই ‘বড় এগজস্ট ফ্যান’গুলো। ওই কর্মকর্তা তাসনিমকে সেগুলো দেখানোর জন্য নিয়ে যান। এরপর, তাসনিম খলিল ভিডিও কলে মোবাশ্বের হাসান নামক সাবেক বন্দির সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং সেল নম্বর ১৯ এর অবস্থান যাচাই করেন।

“এটা ১৯ নম্বর সেল! মোবাশ্বের ঠিকঠাক চিনে ফেলল। এরপর, আমরা ১৯ নম্বর সেলের বাথরুমের জন্যও ভেরিফিকেশন করলাম। মোবাশ্বের চিৎকার করে বলল, ‘হ্যাঁ, এই বাথরুম আমি ইউজ করেছিলাম!’” লিখেন তাসনিম খলিল।

তিনি আরও বলেন, “এখানে ২০টি সেল ছিল। ১০টি সেল ছিল একদিকে, আরেকটা সেকশনে ১০টি সেল। এই সেকশনে অনেক পরিচিত নাম-বৃত্তান্ত ছিল, যাদের থাকার চিহ্ন মুছে ফেলা হয়েছিল।”

শেষে, তাসনিম খলিল বলেন, “যখন আমি ভাঙা দেয়াল দিয়ে বাইরে তাকালাম, তখন দেখলাম কাঁঠাল গাছগুলো। জীবন আহমেদকে ডেকে বললাম, ‘জীবন, এইগুলা কাঁঠাল গাছ না?’ তিনি হেসে বললেন, ‘জি ভাইয়া, এইগুলা কাঁঠাল গাছ।’ আমরা সবাই হাসলাম।”

তাসনিম খলিল নিশ্চিত করেন, যে কাঁঠাল গাছগুলো এখনও দাঁড়িয়ে আছে, আয়নাঘরের সেই ভয়াবহ স্মৃতির সাক্ষী হয়ে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *