ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের পর ৮ আগস্ট রাষ্ট্রের হাল ধরেন ড. ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার

হ-বাংলা নিউজ:

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট বিশেষ পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রের দায়িত্ব গ্রহণ করেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এই সরকারের সামনে তখন নানা চ্যালেঞ্জ ছিল। বিগত সরকারের দুর্নীতি, লুটপাট এবং জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি শীর্ষে ছিল। পরে এগুলো ছাড়াও রাষ্ট্র মেরামতের বৃহত্তর ইস্যু সামনে আসে। এর অংশ হিসেবে অন্তর্বর্তী সরকার বিভিন্ন সংস্কার কমিশন গঠন করে। এখন, ছয় মাস পর, জনগণের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ও দুদক সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামানকে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়।

তিনি যুগান্তরকে বলেন, “বিগত সরকারের পতনের পর একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় এসেছে। গত ১৫ বছরে যে জঞ্জাল তৈরি হয়েছে, তা পরিষ্কার করার আশা ছিল জনগণের। তবে এই সরকার সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং প্রশাসনে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা। পাশাপাশি, অর্থনীতি খাদের কিনারে পৌঁছানোর পর তা পুনরুদ্ধারের কাজ সহজ নয়।” তিনি বলেন, “রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে এবং কমিশনগুলো ইতোমধ্যে কিছু প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এগুলো ইতিবাচক, তবে বাস্তবায়ন কৌশল নিয়ে আমার কিছু প্রশ্ন রয়েছে।”

ড. ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, “সরকার যদি দায়িত্ব নেওয়ার পর একটি সুস্পষ্ট রোডম্যাপ তৈরি করতে পারতো, তবে সংস্কারের কাজ সহজ হতো। শুরুর দিকে সরকারের পূর্ণ জনসমর্থন ছিল এবং সে সময় সুচিন্তিত পথে এগিয়ে গেলে নির্বাচন বিষয়ক সমস্যা থেকে সরে আসা যেত। তবে সেই সুযোগ আমরা কাজে লাগাতে পারিনি।”

সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “সবচেয়ে বড় সংস্কারের প্রয়োজন রাজনৈতিক দলের। ভবিষ্যতে এদেরই গণতন্ত্রের মূল চালিকা শক্তি হতে হবে, কিন্তু রাজনৈতিক দলের সংস্কারের জন্য সরকারের এবং দলগুলোর পক্ষ থেকে এখনও কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। রাজনৈতিক দলগুলোর সংস্কার তাদের নিজস্ব উদ্যোগ থেকে আসতে হবে, কারণ তাদের সংস্কার ছাড়া পরিস্থিতির আসল উন্নতি সম্ভব নয়।”

তিনি বলেন, “বাংলাদেশে কর্তৃত্ববাদী শাসন প্রতিষ্ঠায় তিনটি শক্তি বড় ভূমিকা রেখেছে। এই শক্তিগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক দল, আমলাতন্ত্র এবং বড় ব্যবসায়ী গোষ্ঠী ছিল। এই চক্রের কিছু অংশ ব্যবসায়ীরা সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছে, তবে এখন পর্যন্ত ব্যবসা খাতে কোনো সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।”

ড. ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, “বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শুরু হলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার মানুষ এতে যুক্ত হয়েছিল। রাজনৈতিক মতাদর্শের ভিন্নতা থাকা সত্ত্বেও তারা একত্রে কর্তৃত্ববাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল। তবে তাদের মধ্যে প্রত্যাশা ও চিন্তাভাবনায় পার্থক্য ছিল। কিছু কিছু মিল থাকার পাশাপাশি পুরোনো কর্তৃত্ববাদের কিছু লক্ষণও দেখা যাচ্ছে।”

তিনি অবশেষে বলেন, “জাতীয় ঐকমত্য একটি জটিল ও বড় বিষয়। এর অর্জন সহজ নয় এবং এর মাধ্যমে ঝুঁকি নিতে হবে।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *