ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই: উচ্চশিক্ষিত হলেও রাষ্ট্র পরিচালকদের নৈতিক শিক্ষা ছিল না

হ-বাংলা নিউজ:

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই বলেছেন, অতীতের রাষ্ট্র পরিচালকদের অধিকাংশই উচ্চশিক্ষিত ছিলেন, কিন্তু তারা প্রমাণ করতে পারেননি যে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিতরা নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত। এর ফলস্বরূপ, ৫৩ বছরের রাষ্ট্র পরিচালনার ফলে তারা দুর্নীতির মাধ্যমে আঙ্গুল ফুলে বটগাছ হয়ে উঠেছে। তারা দেশের অর্থ বিদেশে পাচার করে বাংলাদেশকে একটি তলাবিহীন ঝুড়িতে পরিণত করেছে।

শনিবার সকালে রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জাতীয় শিক্ষক ফোরামের কেন্দ্রীয় কাউন্সিল ২০২৫-এর প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

চরমোনাই পির বলেন, শিক্ষকরা আদর্শ নাগরিক গড়ার কারিগর, এবং এই মানুষ গড়ার কারিগরদের ঐক্যবদ্ধ করার কাজ করে যাচ্ছে জাতীয় শিক্ষক ফোরাম। তিনি আরও বলেন, আল্লাহর ঘোষণা অনুযায়ী, প্রত্যেক মুসলিম সন্তানকে দ্বীনি শিক্ষা অর্জনের সুযোগ দিতে হবে, সেজন্য প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ বাধ্যতামূলক করা উচিত।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ পাঁচবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে, যা আমাদের জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে জাতিকে একটি সুন্দর দেশ উপহার দিতে পারবেন এবং এই লক্ষ্যে তিনি দেশবাসীর সহযোগিতা কামনা করেন।

কাউন্সিলে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যক্ষ মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী বলেন, গত ১৫-১৬ বছরে আওয়ামী লীগ সরকার স্কুল ও কলেজগুলো থেকে ইসলামী শিক্ষা বাদ দিয়েছিল। শেখ হাসিনা ভারতের পুতুল সরকার ছিলেন, এবং ভারতের প্রেসক্রিপশনে ইসলামী শিক্ষা বাদ দেওয়া হয়েছিল। কুরআনী শিক্ষা ছাড়া আদর্শ মানুষ গড়ে তোলা সম্ভব নয়। তিনি আরও বলেন, ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থী সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত, তাদের অধিকাংশই ইসলামী শিক্ষা থেকে দূরে, এবং তারা নাস্তিকদের দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছে।

তিনি বলেন, কুরআনী শিক্ষা বাদ দিয়ে বাজে শিক্ষা প্রচারের কোন ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করতে দেওয়া হবে না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষক ড. আরিফুল ইসলাম অপু বলেন, শিক্ষকদের কাছ থেকে ছাত্রদের আমানত, আদালত ও আদর্শ শিখতে হবে।

বৈষম্য দূরীকরণ, শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণ, শিক্ষক সমাজের ন্যায্য দাবি আদায় এবং শিক্ষার সর্বস্তরে ইসলামী শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার দাবিতে আয়োজিত সম্মেলনে ১৫টি দাবি তুলে ধরা হয়। দাবিগুলোর মধ্যে ছিল:

১. শিক্ষাক্ষেত্রে বৈষম্য দূর করতে সকল এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করতে হবে।
২. শিক্ষা খাতে জিডিপির কমপক্ষে ৫.৫% বরাদ্দ দিতে হবে।
৩. শিক্ষকদের জন্য উচ্চতর বেতন কাঠামো এবং নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন করতে হবে।
৪. আলিয়া মাদরাসার পাঠ্যবইগুলো থেকে ইসলামিক কালচার বহির্ভূত ছবি ও ভাষা পরিহার করতে হবে।
৫. ধর্মীয় শিক্ষার জন্য প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ বাধ্যতামূলক করতে হবে।
৬. ইসলামী শিক্ষা থেকে নষ্ট শিক্ষা বন্ধ করতে হবে।
৭. প্রাইমারী স্কুলের পাঠ্যবই থেকে অপ্রাসঙ্গিক ছবি ও বিপদজনক বিষয় পরিহার করতে হবে।
৮. কওমি মাদরাসা শিক্ষার্থীদের আত্মত্যাগের ইতিহাস পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
৯. ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর নেতৃত্বের নাম পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
১০. শিক্ষা কারিকুলামে এনজিও ফান্ডিং বন্ধ করতে হবে।
১১. শিক্ষকদের স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো নির্ধারণ করতে হবে।
১২. শিক্ষার আমূল সংস্কার করার জন্য শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠন করতে হবে।

এছাড়া, ফোরামের ২০২৩-২৪ সেশনের কমিটি বিলুপ্ত করে ২০২৫-২০২৬ সেশনের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। অধ্যাপক নাছির উদ্দিন খান সভাপতি, মাওলানা এ বি এম জাকারিয়া সহ-সভাপতি এবং প্রভাষক আবদুস সবুর সেক্রেটারি জেনারেল নির্বাচিত হন।

এ সম্মেলনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের বিভিন্ন নেতা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং দেশের শীর্ষস্থানীয় শিক্ষাবিদরা উপস্থিত ছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *