হ-বাংলা নিউজ:
বাংলাদেশে নোবেলজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার সাবেক স্বৈরাচারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলের গুমের ঘটনা তদন্ত করতে একটি কমিশন গঠন করেছে। তবে, মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) জানিয়েছে যে, নির্যাতন বন্ধে স্থায়ী সংস্কার প্রয়োজন। সংস্থাটি তাদের ২০২৫ সালের ওয়ার্ল্ড রিপোর্টে আরও জানিয়েছে, ব্যাপক প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার এবং আন্তর্জাতিক সমর্থন ছাড়া অন্তর্বর্তী সরকারের পদক্ষেপগুলোর অগ্রগতি অকার্যকর হয়ে যেতে পারে।
বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এইচআরডব্লিউ’র ৫৪৬ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনটি ১০০টির বেশি দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেছে। সংস্থার নির্বাহী পরিচালক তিরানা হাসান প্রতিবেদনের সূচনা প্রবন্ধে লিখেছেন, গত বছর বিশ্বব্যাপী অধিকাংশ সরকার রাজনৈতিক বিরোধী, কর্মী এবং সাংবাদিকদের অন্যায়ভাবে গ্রেফতার ও কারারুদ্ধ করেছে, সশস্ত্র গোষ্ঠী ও সরকারি বাহিনী বেআইনিভাবে বেসামরিক মানুষকে হত্যা করেছে এবং তাদের বাড়িঘর থেকে বিতাড়িত করেছে, এমনকি মানবিক সহায়তা থেকেও বঞ্চিত করেছে।
এইচআরডব্লিউর এশিয়া অঞ্চলের উপপরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলি মন্তব্য করেন, “বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ভবিষ্যৎ নির্মাণের জন্য উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নিয়েছে, তবে বৃহত্তর প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার এবং আন্তর্জাতিক সমর্থন না পেলে এসব পদক্ষেপের অগ্রগতি বিপর্যস্ত হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকারের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সুরক্ষা দেওয়া, গুমের বিষয়ে বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত ও ক্ষতিপূরণ প্রদান এবং নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর বেসামরিক তদারকি প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন।”
এইচআরডব্লিউর প্রতিবেদনে নিরাপত্তা বাহিনীর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অব্যাহত ঘটনার প্রতি উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। অধিকারকর্মীরা জানিয়েছেন, বিরোধী সমর্থক এবং সাংবাদিকদের নির্বিচারে গ্রেফতার করা হচ্ছে এবং তাদের আইনগত পরামর্শ বা বিচার প্রক্রিয়া থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।
এছাড়া, অন্তর্বর্তী সরকার জাতিসংঘের গুমবিষয়ক কনভেনশনে সম্মত হলেও নিরাপত্তা বাহিনী অবৈধভাবে আটক ব্যক্তিদের মুক্তি দিতে বা তাদের পরিবারের কাছে তাদের অবস্থান সম্পর্কে কোন তথ্য দিতে ব্যর্থ হয়েছে।
মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা লাখ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে সশস্ত্র গোষ্ঠী ও সহিংসতার ঝুঁকিতে রয়েছেন, এবং অনিবন্ধিত শরণার্থীরা খাদ্য সংকটের সম্মুখীন। তারা নিজেরাও ভয় পাচ্ছে যে, তাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হতে পারে, যার কারণে তারা প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণে অস্বীকৃতি জানাচ্ছে।
এইচআরডব্লিউ প্রতিবেদনটি আরও উল্লেখ করেছে যে, অন্তর্বর্তী সরকারকে জাতীয় মানবাধিকার মানদণ্ড অনুসরণ করে সংস্কারগুলো করতে হবে, এবং তারা জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার অফিসের সহায়তায় এই সংস্কার কার্যক্রম পরিচালনা করতে বলেছে। এর মধ্যে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) বিলুপ্তি, নিরাপত্তা বাহিনীর স্বাধীন তদারকি ও জবাবদিহি নিশ্চিতকরণ, এবং গুমের শিকার ব্যক্তিদের জন্য ন্যায়বিচারের পথ খোলা রাখার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া, পার্বত্য চট্টগ্রামে মানবাধিকার পর্যবেক্ষকদের অবাধ প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার এবং রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিবন্ধন কার্যক্রমে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনারের সঙ্গে সহযোগিতা করার আহ্বান জানানো হয়েছে, যাতে তারা সুরক্ষা, চিকিৎসা এবং খাদ্য সহায়তা পায়।
