হাসিনার স্বৈরাচারী সরকারের গণমাধ্যম ব্যবহারের প্রতিবাদ ও সংস্কারের দাবি

হ-বাংলা নিউজ:

ক্ষমতাচ্যুত হাসিনার স্বৈরাচারী সরকার গণমাধ্যমকে ভয়াবহভাবে ব্যবহার করেছে এবং একে নিজের স্বার্থে কাজে লাগিয়েছে, এমন অভিযোগ তুলে শফিকুল আলম, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব, বলেন যে বিদেশিদের দেখানোর জন্য এখানে এক হাজারেরও বেশি গণমাধ্যম রয়েছে, যা এক ধরনের ভুল ধারণা তৈরি করা হয়েছে। তিনি বলেন, “আমরা গণমাধ্যমের সংস্কার চাই। বিগত ১৬ বছরে গণমাধ্যম কীভাবে দলীয় কাজে ব্যবহৃত হয়েছে, তা আমাদের সামনে এসেছে।”

শুক্রবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) ‘গণমাধ্যম সংস্কার প্রস্তাব: নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন শফিকুল আলম।

শফিকুল আলম মন্তব্য করেন, দেশের গণমাধ্যমে হস্তক্ষেপমুক্ত একটি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তিনি আরও বলেন, “আমরা চাই, বিগত স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার সরকার সময়কালে যেসব গুম, খুন ও আইসিটি মামলার ঘটনা ঘটেছিল, এবং যে মিথ্যা মামলাগুলি জনগণের বিরুদ্ধে করা হয়েছিল, সে বিষয়গুলো মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ উল্লেখ করেছে। সে সময় অনেক পত্রিকা সেই সরকারের পক্ষেই কথা বলেছে। আমরা আশা করি যে, এসব অপরাধগুলো এখন গণমাধ্যমের মাধ্যমে জনগণের কাছে তুলে ধরা হবে।”

তিনি বলেন, “বিগত সময়ে ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ ও প্রতারণামূলক নির্বাচন হয়েছে, যার ফলে দেশের মানুষ গণমাধ্যমের প্রতি আস্থা হারিয়েছে। গুম-খুনের খবরগুলো গণমাধ্যম আমাদের জানায়নি, বরং পুলিশের মাধ্যমে আমরা সেগুলি পেয়েছি। তাহলে গণমাধ্যমের কোনো ভূমিকা নেই?”

শফিকুল আলম আরও বলেন, “জুলাই-আগস্ট মাসে কতজন মারা গেছেন, সে বিষয়েও গণমাধ্যম সঠিক তথ্য প্রচার করেনি। আন্দোলনকারীদের দুর্বৃত্ত আখ্যা দেওয়া হয়েছে। মিথ্যা প্রচার করা হয়েছে। এ ধরনের ঘৃণা ছড়ানো উচিত নয়, আমরা সঠিক প্রমাণ চাই।”

তিনি আরও বলেন, “বিগত সময়ের গণমাধ্যম হেফাজতের কিলিংকে পশুর সঙ্গে তুলনা করেছে। এ ধরনের কাজ কি সঠিক ছিল? হাসিনার স্বৈরাচারী সরকারের জন্য গণমাধ্যম নানা ধরনের প্রচারণা চালিয়েছে।”

শফিকুল আলম বলেন, “বিগত সময়ে গণমাধ্যম অনেকাংশে সঠিক কাজ করতে পারেনি, বিশেষ করে ডিজিএফআইয়ের ফোনকলের কারণে তারা নত হয়ে গেছে। তারা বস্তুনিষ্ঠ তথ্য উপস্থাপন করতে পারেনি। এটা আমরা জানি। ইন্টেলিজেন্স গোয়েন্দা বিভাগগুলো খবর আটকানোর চেষ্টা করেছিল, সেসব বিষয়গুলো সাংবাদিকদের মাথায় রাখতে হবে।”

তিনি কপি-পেস্টের মাধ্যমে মেধাসত্ত্ব চুরির বিষয়ে সতর্ক করে বলেন, “বাংলাদেশের গণমাধ্যমে কপি-পেস্ট বন্ধ করতে হবে। যখন কোনো রিপোর্ট প্রকাশিত হয়, সেটি মুহূর্তের মধ্যে অন্য জায়গায় কপি-পেস্ট হয়ে যায়। এটি মেধাসত্ত্ব চুরি। এতে সাংবাদিকদের মূল্য বাড়বে।”

গণমাধ্যমের মালিকদের উদ্দেশে প্রেস সচিব বলেন, “গণমাধ্যমে যারা কাজ করেন, তাদের যথাযথ সম্মানি দিতে হবে। বর্তমানে দেশে ফেইক নিউজের ছড়াছড়ি হয়ে গেছে, এ থেকে আমাদের সাবধান হতে হবে। যদি কোনো মিথ্যা রিপোর্ট করা হয়, তাহলে সেটা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ক্ষতি করতে পারে। সঠিক তথ্য যাচাই না করে কারো বিরুদ্ধে লেখা উচিত নয়।”

তিনি আরও বলেন, “গণমাধ্যমের মালিকদের কাছে আমাদের আবেদন, যেন তারা সাংবাদিকদের সুরক্ষা ও সম্মান প্রদান করেন। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের খবর দেওয়ার আগে তথ্য যাচাই করে সঠিক রিপোর্ট প্রকাশ করা উচিত।”

এ সময় শফিকুল আলম ব্যক্তিগতভাবে রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ হলের নামটি পুনর্বিবেচনার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে একটি মতামত দেন।

এর আগে অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে ‘ফ্যাসিবাদমুক্ত গণমাধ্যম চাই আন্দোলন’-এর আহ্বায়ক জয়নাল আবেদীন শিশির ১৩ দফা গণমাধ্যম সংস্কার প্রস্তাব তুলে ধরেন। প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে- গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ, গণমাধ্যমে নৈতিকতা ও পেশাদারিত্ব প্রতিষ্ঠা, সরকারের নিয়ন্ত্রণ রোধ, স্বতন্ত্র গণমাধ্যম কমিশন গঠন, মালিকানা ও অর্থায়নের স্বচ্ছতা, সাংবাদিকদের চাকরির নিরাপত্তা, সাইবার নিরাপত্তা আইন সংস্কার, এবং গণমাধ্যমের জন্য বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধি।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন যুক্তরাজ্যের বাংলাদেশ দূতাবাসের সেক্রেটারি (প্রেস) আকবর হোসেন, উত্তরা ইউনিভার্সিটির প্রভাষক মাহবুব আলম, জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য মোল্লা ফারুক এহসান, এবং সাইবার অ্যাকটিভিস্ট আব্বাস উদ্দিন নয়ন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *