ছাগল-কাণ্ড আমার জীবনের অভিশাপ—মতিউর রহমান

হ-বাংলা নিউজ:

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক সদস্য মতিউর রহমান বলেছেন, ‘ছাগল-কাণ্ড আমার জীবনের জন্য অভিশাপ।’ বুধবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে এই কথা বলেন তিনি। বিকেল পাঁচটার দিকে মাইক্রোবাসে করে আদালতে আনা হয় তাকে।

গত কুরবানির ঈদে ১৫ লাখ টাকায় ছাগল কেনা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হন মতিউর রহমানের ছেলে মুশফিকুর রহমান (ইফাত)। এরপর থেকে আলোচনায় আসেন মতিউর রহমান। তার এবং তার পরিবারের বিপুল সম্পদসহ দুর্নীতির বিভিন্ন তথ্য সামনে আসে, যা নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) মামলা করে।

আদালতে আসার পর তাকে হাজতখানায় রাখা হয়। ২৫ মিনিট পর হাতকড়া পরিয়ে এজলাসে নেয়া হয়। কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে মতিউর রহমানের কাছে প্রশ্ন করা হয়, ‘ছাগলটি কোথায়?’ উত্তরে তিনি বলেন, ‘ছাগলটি আছে।’

এজলাসে বিচারক উপস্থিত হওয়ার পর, ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, “এই আসামি ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের অন্যতম সহযোগী। এজন্য তাকে এনবিআরের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল।” তিনি আরও বলেন, গত কুরবানির ঈদে তার ছেলে ১৫ লাখ টাকার ছাগল কিনেছিল, কিন্তু এনবিআরের একজন সদস্যের বেতন কত?

পিপি ওমর ফারুক ফারুকী আদালতকে জানান, ছাগল-কাণ্ড নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হওয়ার পর দুদক তাদের সম্পদ অনুসন্ধান শুরু করে এবং মতিউর, তার স্ত্রী এবং সন্তানদের বিপুল সম্পদের খোঁজ পায়। তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এরপর মতিউর রহমান বলেন, “ছাগল-কাণ্ড আমার জীবনের জন্য অভিশাপ।”

মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর বসুন্ধরা এলাকা থেকে মতিউর রহমান এবং তার প্রথম স্ত্রী সাবেক চেয়ারম্যান লায়লা কানিজকে গ্রেফতার করা হয়। বুধবার আদালত তাদের রিমান্ডের আদেশ দেন, এবং লায়লা কানিজকে কারাগারে পাঠানো হয়।

ডিএমপির উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জানিয়েছেন, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এরপর তাদের আদালতে পাঠানো হয় রিমান্ডের আবেদন নিয়ে।

এদিকে, দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর মীর আহমেদ আলী সালাম জানিয়েছেন, মতিউর রহমান এবং তার পরিবারের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে পৃথক মামলা হয়েছে। এর মধ্যে লায়লা কানিজকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে এবং তাকে ৭ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হয়েছে।

গত ঈদুল আজহায় ১২ লাখ টাকার ছাগল কেনার ঘটনা প্রকাশিত হওয়ার পর ব্যাপক আলোচনায় আসে মতিউর রহমানের পরিবার। এ ঘটনায় পরবর্তীতে মতিউরকে এনবিআর থেকে অপসারণ করা হয় এবং সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ থেকেও তাকে সরিয়ে দেয়া হয়। সর্বশেষ, তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। ৬ জানুয়ারি অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং তথ্য গোপনের অভিযোগে মতিউর রহমান, লায়লা কানিজ, তাদের ছেলে তৌফিকুর রহমান এবং মেয়ে ফারজানা রহমানের বিরুদ্ধে পৃথক তিনটি মামলা দায়ের করেছে দুদক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *