হ-বাংলা নিউজ:
বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে প্রশাসন এবং ২৫ ক্যাডারের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হওয়ায় মোট ১০ জন কর্মকর্তা সাময়িকভাবে বরখাস্ত হয়েছেন। মূলত, নিজেদের ক্যাডারের পক্ষে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট লেখার কারণে তাদের বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তবে, নিয়ম অনুসারে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে প্রশাসন ছাড়া অন্যান্য ক্যাডারের কর্মকর্তাদের বরখাস্ত করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছে আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ। তারা এসব বরখাস্ত আদেশ বাতিলের দাবি জানিয়েছে।
এই ধরনের ব্যবস্থাকে তারা প্রচলিত আইন ও বিধির পরিপন্থি বলে উল্লেখ করেছেন। তাদের অভিযোগের ব্যাপারে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা দাবি করেছেন যে, এসব অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই। জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সিভিল সার্ভিসের সকল কর্মকর্তা নির্দিষ্ট আইন ও বিধির অধীনে কাজ করেন এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কী লেখা যাবে, কী লেখা যাবে না, সে বিষয়ে তাদের কাছে গাইডলাইন রয়েছে।
আইনবিধি অমান্য করলে শাস্তি পেতেই হবে এবং এতে কোনো ছাড় দেওয়া হলে সরকারের ইমেজ দুর্বল হতে পারে।
গত ১৭ ডিসেম্বর, আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসনে জনপ্রশাসন কমিশনের পরিকল্পনা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে ক্যাডার সংগঠনগুলো বিক্ষোভ শুরু করে। প্রশাসন ক্যাডার সচিবালয়ে বিশাল শোডাউনের আয়োজন করে এবং বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস (বিএএসএ) ও বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডার কল্যাণ বহুমুখী সমবায় সমিতির যৌথ আয়োজনে প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সেখানে কঠোর ভাষায় জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সমালোচনা করে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কমিশন প্রধানকে বরখাস্ত এবং কমিশন বিলুপ্ত করে নতুন কমিশন গঠনের দাবি জানানো হয়। এই সময়েই গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও বর্তমানে ওএসডি অবস্থায় থাকা সিনিয়র সহকারী সচিব মোহাম্মদ সাদিকুর রহমান সবুজ ফেসবুকে বিরূপ মন্তব্য করার কারণে ২৯ ডিসেম্বর ও ৩০ ডিসেম্বর বরখাস্ত হন।
এরপর, প্রশাসন ছাড়া অন্যান্য ২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তারা আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের ব্যানারে বিভিন্ন প্রতিবাদ কর্মসূচি আয়োজন করেন। ৩ জানুয়ারি, খামারবাড়ি কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে আয়োজিত ২৫ ক্যাডারের এক আলোচনা সভায় বক্তারা সিভিল সার্ভিসে প্রশাসন ক্যাডারের একচ্ছত্র আধিপত্য এবং তার নির্দিষ্ট আধিপত্যের বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা করেন এবং দ্রুত সমাধান দাবি করেন।
এছাড়া, ২৫ ক্যাডারের মধ্যে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের ৫ জন, মত্স্য ক্যাডারের ১ জন, প্রাণিসম্পদ ক্যাডারের ১ জন এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের ১ জন নির্বাহী প্রকৌশলীসহ মোট ৯ জনকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। এসব বরখাস্তের মধ্যে রয়েছে শিক্ষা ক্যাডারের প্রভাষক অসীম চন্দ্র সরকার, তানভীর খান, মো. আনোয়ার হোসেন ফকির, মো. রফিকুল ইসলাম এবং শাহাদাত উল্লাহ কায়সার; মত্স্য কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম; প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম; এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রকৌশলী মোহাম্মদ শাহ আরেফীন।
আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ এই ব্যবস্থা ঢালাওভাবে বরখাস্তের মাধ্যমে ইস্যু হিসেবে তুলে ধরে বিবৃতি প্রকাশ করেছে। তারা উল্লেখ করেছে যে, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরে কর্মরত বিসিএস ক্যাডার কর্মকর্তাদের সামাজিক মিডিয়ায় মতপ্রকাশের জন্য একযোগভাবে বরখাস্ত করা হচ্ছে, যা অত্যন্ত অনভিপ্রেত এবং অনাকাঙ্ক্ষিত। তাদের দাবি, কোনো কারণ দর্শানো নোটিশ ছাড়া বরখাস্তের এই পদক্ষেপ মৌলিক অধিকার ও চাকরিবিধির পরিপন্থি।
এদিকে, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই ব্যবস্থা রাজনৈতিক কারণে নয়, বরং সিভিল সার্ভিসের সব কর্মকর্তা নির্দিষ্ট আইন ও বিধি মেনে কাজ করেন। ফেসবুকে কী লেখা যাবে এবং কী লেখা যাবে না, সে বিষয়ে স্পষ্ট গাইডলাইন রয়েছে। তারা যদি এসব নিয়ম অমান্য করেন, তবে তাদের শাস্তি পেতেই হবে। জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ ফিরোজ মিয়া যুগান্তরকে বলেছেন, ‘‘সিভিল সার্ভিসের প্রতিটি ক্যাডারের কর্মকর্তা মেধাবী ও সচেতন। তারা আইন ভঙ্গ করলে, তাদের শাস্তি পাওয়া উচিত, না হলে সরকারের ইমেজ সংকটে পড়বে।’’
এভাবে বরখাস্ত করা চলতে থাকলে, সিভিল সার্ভিসে অসন্তোষ সৃষ্টি হতে পারে, যা সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলতে পারে—এমন আশঙ্কা জানিয়েছে আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ। তারা দাবি জানিয়েছে, এসব বরখাস্ত আদেশ প্রত্যাহার করা হোক এবং অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হোক।
