হ-বাংলা নিউজ:
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী বলেছেন, দলবাজি, অপসাংবাদিকতা, হলুদ সাংবাদিকতা এবং তথ্যসন্ত্রাস সাংবাদিকদের মর্যাদাকে ক্ষুণ্ণ করছে। তিনি বলেন, বস্তুনিষ্ঠ, সৎ ও নির্ভীক সাংবাদিকতা দেশ ও জাতির জন্য উন্নতির পথে এগিয়ে নিয়ে আসে, আর বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতায় কোনো আপোষ করা উচিত নয়। দুর্ভাগ্যবশত, স্বার্থনির্ভর সাংবাদিকতা এখন বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতাকে অনেকটা দখল করে নিয়েছে।
শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের অডিটোরিয়ামে জাতীয় সাংবাদিক সংস্থা আয়োজিত সাংবাদিক মহাসম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
কাদের গনি চৌধুরী আরও বলেন, “বাংলাদেশের গণমাধ্যম বর্তমানে নানা সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, এবং এই সংকট সৃষ্টি করেছে গত ফ্যাসিস্ট সরকার। বিগত ১৫ বছর দেশের গণমাধ্যম সঠিকভাবে সাদা এবং কালো বলতে পারছিল না। গণমাধ্যম মুক্তভাবে খুন, গুম, লুটপাট ও হত্যার তথ্য প্রকাশ করতে পারেনি, কারণ স্বৈরশাসকরা গণমাধ্যমের কণ্ঠ রোধ করেছে। এই কারণে জনগণ গণমাধ্যমের ওপর বিশ্বাস হারাচ্ছে, যা আমাদের জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক।”
তিনি আরও বলেন, “গণমাধ্যমের দায়িত্ব ছিল জনগণের পক্ষে থাকা, তবে আজকাল গণমাধ্যমের সঙ্গে সাধারণ মানুষের এক ধরনের দূরত্ব তৈরি হয়ে গেছে। এখন সাধারণ মানুষের গালির তালিকায় পুলিশ, ডাক্তারদের পাশাপাশি সাংবাদিকদের নামও থাকে।”
বিএফইউজে’র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহিন বলেন, “দেশে প্রকৃত অর্থে সাংবাদিকতার সংকট রয়েছে এবং এর সমাধানে সংস্কারের প্রয়োজন। আমি মনে করি, অন্তর্বর্তী সরকার আসার পর এখন সাংবাদিকতার সংস্কার সময়ের দাবি।”
বিএফইউজে’র সিনিয়র সহকারী মহাসচিব বাছির জামাল বলেন, “সাংবাদিকদের সামাজিক, অর্থনৈতিক, শারীরিক ও মানসিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি সংবাদমাধ্যম শুধু মালিকপক্ষের মুনাফার হাতিয়ার হয়ে থাকে, তবে সাংবাদিকতায় সংস্কার সম্ভব নয়।”
তিনি আরও বলেন, “নতুন গঠিত গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনকে আমি আহ্বান জানাই, যেন তারা তৃণমূল সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনা করে সারাদেশে সাংবাদিকতার সংস্কার কার্যক্রম শুরু করেন।”
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহিদুল ইসলাম বলেন, “সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনির হত্যার ১২ বছর পেরিয়ে গেছে, কিন্তু এখনও আমরা বিচার পাইনি। ফ্যাসিবাদ মুক্ত দেশ হিসেবে বর্তমান সরকারকে আমি বলছি, অবিলম্বে সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের বিচার করতে হবে। আমরা যেমন সাংবাদিক সুরক্ষা আইন চাই, তেমনি কোন রাজনৈতিক দলের কর্মসূচিতে সাংবাদিকদের আঘাত না করার নিশ্চয়তাও চাই।”
জাতীয় সাংবাদিক সংস্থার সভাপতি মমিনুর রশিদ শাইন এর সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলম, শাহজান মোল্লা, আলমগীর গনি, খায়রুল ইসলাম, মিজানুর রহমান প্রিন্স, জামাল হোসেন, আরিফুর রহমান আজাদ, হাসান সরকার জুয়েল। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন জাতীয় সাংবাদিক সংস্থার মহাসচিব কামরুল ইসলাম।
সাংবাদিকরা গণ-অভ্যুত্থানের পাঁচ মাস পরেও সাংবাদিকতা সংস্কারে কোনো উদ্যোগ না নেওয়ার বিষয়ে ক্ষোভ ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
