হ-বাংলা নিউজ: রেলপথে ট্রেন সিডিউল মেনে চলা প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠেছে। গত কিছুদিনে উনিশ থেকে কুড়ি ঘটনার মতো ট্রেন দুর্ঘটনা, লাইনচ্যুতির ঘটনা বেড়েই চলেছে। এর ফলে ট্রেনের সিডিউল প্রায়ই বিপর্যস্ত হচ্ছে, এবং এই অবস্থা দাবির মাধ্যমে প্রতিবাদ বা আন্দোলনের হাতিয়ার হিসেবেও ব্যবহৃত হচ্ছে। ট্রেন আটক করে, চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ ও অন্যান্য উদ্বেগজনক ঘটনা একে অপরকে ছাপিয়ে যাচ্ছে। আন্দোলনকারীরা ট্রেনের জানালা ভাঙার মতো তাণ্ডব চালিয়ে সাধারণ যাত্রীদের আহত করছে, যা রেলওয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে একেবারে দুর্বল অবস্থায় ফেলছে।
তবে, রেলওয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নানা কৌশলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছেন। আন্দোলনকারীদের বুঝিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করার প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে, তবে ট্রেন আটকে ও অন্যান্য প্রকারের হামলায় সাধারণ যাত্রীরা প্রায়ই আহত হচ্ছেন। এতে যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ও অস্বস্তি সৃষ্টি হচ্ছে।
অভিযোগ উঠেছে যে, রেলওয়ে শ্রমিক সংগঠন, সরকারি দপ্তর ও বেসরকারি খাতের শ্রমিকরা একের পর এক রেলপথ অবরোধ, ট্রেন আটক ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটাচ্ছে। মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানী ঢাকার কারওয়ানবাজারে ট্রেন আটকে শ্রমিকরা অবরোধ করেন, যা বকেয়া বেতন আদায়ের জন্য ছিল।
এ বিষয়ে রেলওয়ে পুলিশ প্রধান ও অতিরিক্ত আইজি সরদার তমিজ উদ্দিন আহমেদ জানান, রেলপথে যাত্রী সেবা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রেলপুলিশ এবং অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিন-রাত দায়িত্ব পালন করছে। তিনি আরও বলেন, ট্রেন আটক করে বা পাথর নিক্ষেপ করে দাবি আদায় করা একেবারেই গ্রহণযোগ্য পন্থা নয়। তিনি এই ধরনের ঘটনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারও আশ্বাস দিয়েছেন এবং আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন।
এছাড়া, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে শ্রমিক সংগঠনগুলোর প্রতি আহ্বান জানানো হচ্ছে যেন তারা অবরোধ, ট্রেন আটকে কিংবা ভাঙচুরের মতো অপরাধমূলক কার্যক্রম থেকে বিরত থাকেন। পুলিশ এও জানায়, এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের শনাক্ত করা হচ্ছে।
চলতি বছরের ৬ মাসে এসব আন্দোলনের ফলে সারা দেশে ১৯ বার রেলপথ অবরোধ, ট্রেন আটক এবং ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এই সব কর্মকাণ্ডের কারণে ট্রেনের সিডিউল বার বার বিপর্যস্ত হচ্ছে, যার ফলে যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়ছেন। মঙ্গলবার, কারওয়ানবাজারে শ্রমিকদের ট্রেন আটকানোর কারণে ঢাকার সঙ্গে সারা দেশের ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। যদিও দুপুরে ট্রেন চলাচল শুরু হলেও সিডিউল বিপর্যয় অব্যাহত থাকে এবং বিভিন্ন স্টেশনে ট্রেন আটকা পড়ে।
রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার আনোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, সিডিউল বিপর্যয় সত্ত্বেও তাদের শত চেষ্টা সত্ত্বেও ট্রেন চালানোর সময় সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। চলন্ত ট্রেন থামিয়ে আন্দোলনকারীরা যাত্রীদের জিম্মি করে দাবি আদায় করছে, যা অবিলম্বে বন্ধ হওয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন।
রেলওয়ের অস্থায়ী শ্রমিকদের দাবি, তারা দীর্ঘদিন ধরে বকেয়া বেতন পাচ্ছেন না, এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের দাবি পূরণ না হলে বড় ধরনের আন্দোলনের হুমকি দিয়েছেন তারা। এর পাশাপাশি, রেলপথের গেটকিপার, খালাসি, পোর্টারসহ বিভিন্ন পদে কর্মরত শ্রমিকদের স্থায়ীকরণ এবং মাইলেজ বৃদ্ধি নিয়েও আন্দোলন চলছে।
রেলওয়ে পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, শুধু রেলওয়ে শ্রমিক নয়, বাইরের শ্রমিকরাও রেলপথ অবরোধ এবং ট্রেন আটকে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটাচ্ছে, যা সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য।
রেলওয়ে মহাপরিচালক মো. আফজাল হোসেন যুগান্তরকে জানান, এই ধরনের আন্দোলন অপরাধের সামিল। তিনি বলেন, শ্রমিকদের দাবির প্রতি সরকার গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে, তবে এরকম বিক্ষোভ বা বাধা সৃষ্টি কোন সমাধান নয়। তিনি শ্রমিকদের আলোচনার মাধ্যমে তাদের সমস্যার সমাধান করার আহ্বান জানান।
