বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা

হ-বাংলা নিউজ: সম্প্রতি, একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় ‘বেনজীরের ঘরে আলাদিনের চেরাগ’ এবং ‘বনের জমিতে বেনজীরের রিসোর্ট’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়, যেখানে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উত্থাপন করা হয়। পরে প্রাথমিক অনুসন্ধানে বেনজীর আহমেদ এবং তার পরিবারের বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদের তথ্য নিশ্চিত করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এই অনুসন্ধানের ভিত্তিতে, ঢাকার সিনিয়র স্পেশাল জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন তার স্ত্রী-সন্তানদের নামে থাকা বিভিন্ন সম্পত্তির দলিল, ঢাকায় ফ্ল্যাট এবং কোম্পানির শেয়ার জব্দের (ক্রোক) নির্দেশ দেন। তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

রোববার, দুদক ঢাকার সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে এই মামলাগুলো দাখিল করে। দুদকের মহাপরিচালক আক্তার হোসেন নিশ্চিত করেন যে, মোট চারটি মামলায় বেনজীর পরিবারের বিরুদ্ধে ৭৪ কোটি ১৩ লাখ ৩৯ হাজার ৩৯ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন এবং তথ্য গোপন করার অভিযোগ আনা হয়েছে।

প্রতিটি মামলায় বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে পৃথক অভিযোগ রয়েছে। একটি মামলায়, বেনজীর আহমেদকে ৯ কোটি ৪৪ লাখ ৬৪ হাজার ৭৫১ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং ২ কোটি ৬২ লাখ ৮৯ হাজার ৬০ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করার জন্য আসামি করা হয়েছে। আরেকটি মামলায় তার স্ত্রী জীসান মির্জাকে আসামি করা হয়েছে, যার বিরুদ্ধে ৩১ কোটি ৬৯ লাখ ৫৫ হাজার ১৪৯ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং ১৬ কোটি ১ লাখ ৭১ হাজার ৩৩৬ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করার অভিযোগ রয়েছে। এই সম্পদটি বেনজীর আহমেদের অবৈধ আয়ের মাধ্যমে অর্জিত হয়েছে বলে দুদকের অনুসন্ধানে প্রমাণিত হয়েছে।

অপর মামলায়, বেনজীর ও তার মেয়ে ফারহিন রিশতা বেনজীরকে আসামি করা হয়েছে। ফারহিনের বিরুদ্ধে ৮ কোটি ৭৫ লাখ ২৭৪ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। আরও একটি মামলায়, বেনজীর এবং তার মেয়ে তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজীরকে আসামি করা হয়েছে, যিনি ৫ কোটি ৫৯ লাখ ৫৫ হাজার ৮৫ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগের মুখোমুখি হয়েছেন। আসামিদের বিরুদ্ধে দুদক আইন ২০০৪ এর ২৭(১) ও ২৬(২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।

দুদক জানিয়েছে, প্রাথমিক অনুসন্ধানে বেনজীর পরিবারের বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদের তথ্য নিশ্চিত হওয়ার পর, ২৩ ও ২৬ মে আদালত বেনজীর আহমেদ এবং তার পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা ১১৯টি স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ দেন। এর মধ্যে গুলশানে ৪টি ফ্ল্যাট, সাভারের একটি জমি এবং মাদারীপুরে ১১৪টি দলিলের সম্পত্তি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এছাড়া, ২৩ মে ৮৩টি দলিলে ক্রয়কৃত সম্পত্তি এবং ৩৩টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টসহ সিকিউরিটিজের টাকা অবরুদ্ধ করা হয়েছে।

এই অনুসন্ধান শুরু হয়েছিল ২২ এপ্রিল, যখন দুদক বেনজীর আহমেদ, তার স্ত্রী জিসান মির্জা, এবং দুই মেয়ে ফারহিন রিশতা ও তাশিন রাইসা বিনতে বেনজীরের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করে। অনুসন্ধান টিমের নেতৃত্ব দেন উপপরিচালক হাফিজুল ইসলাম, সহকারী পরিচালক নিয়ামুল আহসান গাজী এবং জয়নাল আবেদীন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *