হ-বাংলা নিউজ: বয়স ৬৭ বছর পূর্ণ হওয়ায় সংবিধান অনুসারে আপিল বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল করিম বুধবার অবসর গ্রহণ করেছেন।
এ উপলক্ষে একটি বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “বিচার বিভাগে দুর্নীতির কালো মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছে”—এমন অপপ্রচার মাঝেমধ্যেই কানে আসে। তিনি আরও বলেন, “বিচার ব্যবস্থায় কারও একক অধিকার নেই এবং একক প্রয়াসেও এটি চলতে পারে না। সমষ্টিগত প্রয়াসের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা হল ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার একমাত্র উপায়। তাই বিচারক থেকে শুরু করে বিচার ব্যবস্থার সঙ্গে সম্পৃক্ত সকলকেই একে অপরের সাথে নিবিড়ভাবে কাজ করতে হবে।”
বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আপিল বিভাগের প্রধান বিচারপতির এজলাসে অনুষ্ঠিত এই বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদসহ অন্যান্য আপিল বিভাগের বিচারপতিরা উপস্থিত ছিলেন।
বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল করিম ১৯৫৭ সালের ১২ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। আজ, ১৬ ডিসেম্বর তার ৬৭ বছর পূর্ণ হওয়ায় তিনি অবসর গ্রহণ করেছেন। প্রথা অনুযায়ী, তার শেষ কর্মদিবসে সংবর্ধনা প্রদান করা হয়। এই অনুষ্ঠানে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান এবং সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন, বিদায়ী বিচারপতির কর্মময় জীবন নিয়ে বক্তৃতা করেন।
বিচারপতি জিয়াউল করিম বিদায় উপলক্ষে বলেন, “সুবিচার বা ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হলে, বিচারালয়ের প্রতিটি স্তরের কর্মকর্তা একত্রিত হয়ে কাজ করতে হবে। একজন বিচারক যদি সুচিন্তিত মতামত প্রকাশে বাধাপ্রাপ্ত হন, তবে তাকে প্রতিরোধ করতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “একটি পরিবারের গৃহকর্তা যেমন তার পরিবারের সদস্যদের একত্রে রাখেন এবং শাসন করেন, তেমনি সিনিয়র বিচারকদেরও জুনিয়র বিচারকদের ভালোবাসা, স্নেহ এবং দিকনির্দেশনা দিতে হবে। তাদের পথপ্রদর্শক হতে হবে, যাতে তারা প্রতিটি বাধা অতিক্রম করে তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারে।”
বিচারপতি জিয়াউল করিম বলেন, “আজ বিদায়বেলায় আমার আপনাদের কাছে অনুরোধ, যেন আমরা এমন কিছু না করি, যাতে সুবিচারের প্রতীক এই শ্বেতশুভ্র অট্টালিকার গায়ে বিন্দুমাত্র কালিমা লাগে। আমাদের যেন মনে না হয়, ‘মা, তোর বদনখানি মলিন হলে, ও মা, আমি নয়নজলে ভাসি’।”
বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল করিম ২০০৪ সালের ২৩ আগস্ট হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান এবং পরবর্তীতে ২০০৬ সালে স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পেয়ে সারা দেশের আইনাঙ্গনে তার অবদান রাখেন। ১৩ আগস্ট তিনি আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে শপথ নেন। তিনি রসায়নে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করার পর আইনে এলএলবি, এলএলএম এবং পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৮৬ সালে জেলা আদালতে যোগদান করার পর, ১৯৮৮ সালে হাইকোর্ট বিভাগে এবং ১৯৯৬ সালে আপিল বিভাগে আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন।
