চীনের সঙ্গে সম্পর্ক অব্যাহত থাকবে, জানিয়েছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস

হ-বাংলা নিউজ:  বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক অব্যাহত থাকবে। ৩০ নভেম্বর নিক্কেই এশিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন, যা সোমবার প্রকাশিত হয়।

ড. ইউনূস রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়ে মন্তব্য করে বলেন, “বাংলাদেশ কতদিন এই দায় বহন করবে?” তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানের জন্য বাংলাদেশকে একটি সুস্পষ্ট গন্তব্য নির্ধারণ করতে হবে। মিয়ানমারে জাতিসংঘ-শাসিত নিরাপদ অঞ্চল প্রতিষ্ঠার পক্ষে বাংলাদেশ। তিনি বলেন, “মিয়ানমার যদি অনুমতি দেয়, তাহলে এই বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা তাদের দেশে থাকতে পারবে। যদি সেখানকার পরিস্থিতি স্থিতিশীল হয়, তারা নিজেদের দেশে ফিরে যেতে পারবে, অন্য কোথাও স্থানান্তরের প্রয়োজন পড়বে না।”

ড. ইউনূস আরও বলেন, বাংলাদেশ দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর সংস্থা আসিয়ানে যোগ দেওয়ার বিষয়ে জোর দিয়েছেন, কারণ এটি বাংলাদেশের জন্য একটি প্রতিশ্রুতিশীল সুযোগ হতে পারে। বাংলাদেশ ২০২৬ সালের মধ্যে জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছে। তিনি জানান, আসিয়ানের আগামী সভাপতিত্ব মালয়েশিয়া গ্রহণ করবে, এবং তিনি মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের সঙ্গে এই বিষয়ে আলোচনা করেছেন।

ড. ইউনূস বলেন, আসিয়ানে বাংলাদেশের সদস্যপদ অর্জনের জন্য প্রথম পদক্ষেপ হবে একটি সর্বসম্মত রেজুলেশন গ্রহণ। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, আসিয়ানের সদস্য দেশগুলো বাংলাদেশের এই প্রচেষ্টাকে সমর্থন করবে।

বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলের সমালোচনা করে ড. ইউনূস বলেন, “হাসিনা সবকিছু ধ্বংস করে দিয়েছেন।” তিনি জানান, নির্বাচন আয়োজনের আগে দেশের অর্থনীতি, শাসনব্যবস্থা, আমলাতন্ত্র এবং বিচার ব্যবস্থায় ব্যাপক সংস্কার প্রয়োজন। ৮৪ বছর বয়সী এই নোবেলজয়ী বলেন, “নতুন বাংলাদেশ” গড়তে কাজ শুরু হয়েছে, তবে সংস্কারের ফলে নির্বাচনের সময় নির্ধারণ হবে।

তিনি বলেন, “আমি রাজনীতিবিদ নই, রাজনীতি থেকে দূরে ছিলাম। রাষ্ট্রের যেসব ব্যক্তিরা নীতির প্রতি দায়বদ্ধ এবং দুর্নীতিমুক্ত থাকেন, তাদের নির্বাচন করা উচিত।”

ড. ইউনূস হাসিনার শাসনামলে গণতন্ত্রের মূলনীতি ভেঙে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে বলেন, তিনি তিনবার ভোটারবিহীন নির্বাচন করে নিজেকে এবং তার দলকে বিজয়ী ঘোষণা করেছেন। এ বছরের আগস্টে সরকারি চাকরিতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালীন নিহত শিক্ষার্থীদের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, এই আন্দোলন হাসিনার পতনের কারণ হয়েছিল। ৫ আগস্ট ছাত্র-নাগরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে হাসিনার ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। তিনি বলেন, “হাসিনা ভারতে পালিয়ে গেছেন এবং বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে।”

ড. ইউনূস জানালেন, হাসিনার বিরুদ্ধে বিচার শেষে তার আনুষ্ঠানিক প্রত্যাবর্তন নিয়ে ভারতকে জানানো হবে। তিনি ভারতকে অনুরোধ করবেন হাসিনাকে হস্তান্তর করার জন্য, কারণ দুই দেশের মধ্যে একটি আন্তর্জাতিক আইন রয়েছে।

কূটনৈতিক বিষয়ে, ড. ইউনূস ভারতের সঙ্গে শক্তিশালী সম্পর্ক গড়ে তোলার গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, “বাংলাদেশকে ভারতের সঙ্গে সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্ক গড়তে হবে।” তিনি দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা (সার্ক) পুনরুজ্জীবিত করার প্রস্তাবও দেন এবং ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের উত্তেজনা নিরসনের আহ্বান জানান।

ভারতের দিক থেকে বাংলাদেশে হিন্দুদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশের পর, ড. ইউনূস বলেন, এই ধরনের বক্তব্য অনেকাংশে প্রোপাগান্ডা। তিনি ভারতীয় সাংবাদিকদের বাংলাদেশে এসে সঠিক তথ্য সংগ্রহ করার আহ্বান জানান।

এছাড়া, চীনকে বাংলাদেশের বন্ধু দেশ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “চীন আমাদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহায়তা করেছে, যেমন সড়ক, বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং সমুদ্রবন্দর উন্নয়ন।” তিনি জানান, বেইজিংয়ের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক আগের মতোই অব্যাহত থাকবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *