হ-বাংলা নিউজ: ভারতে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতে ভারতীয় গণমাধ্যমে অপপ্রচার চালানো ও আগরতলায় বাংলাদেশের উপ-হাইকমিশনে হামলার ঘটনায় এবং দেশের চলমান সংকট নিয়ে মঙ্গলবার দুপুরে গণঅধিকার পরিষদের দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে দলের পক্ষ থেকে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খাঁন।
তিনি বলেন, “প্রিয় দেশবাসী, আসসালামু আলাইকুম। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্প্রতি ভারতের বিধানসভার শীতকালীন অধিবেশনে যোগ দিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করেছেন এবং জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা বাহিনী বাংলাদেশে মোতায়েনের দাবি জানিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হস্তক্ষেপও দাবি করেছেন।”
তিনি আরও বলেন, “তবে গত ২৮ অক্টোবর কলকাতায় বঙ্গীয় হিন্দু জাগরণ নামে একটি সংগঠন ও বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে ডেপুটি হাইকমিশনের সামনে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা পোড়ানো হয় এবং কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়। এর পাশাপাশি সীমান্ত অবরোধের হুমকি ও বিক্ষোভের মাধ্যমে ঘৃণ্য প্রচার চালানো হচ্ছে। কিন্তু এ বিষয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কোনও প্রতিবাদ ছিল না। বরং তিনি এবং শুভেন্দু অধিকারী বাংলাদেশ ইস্যুতে মিথ্যাচারের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছেন।”
“কলকাতা উপ-হাইকমিশনে নিরাপত্তা না দেওয়ায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে আমরা ভিয়েনা কনভেনশন লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলছি। তিনি উপ-হাইকমিশনের কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছেন। শান্তি প্রতিষ্ঠায় কলকাতায় জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা বাহিনীর সাহায্য নেওয়া উচিত,” বলেন তিনি।
ভারতের গণমাধ্যমে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার প্রচেষ্টা নিয়ে রাশেদ খাঁন বলেন, “ভারতীয় গণমাধ্যমে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন ও আইনজীবী সাইফুল ইসলামের হত্যাসহ নানা গুজব প্রচার করা হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে বাংলাদেশের জনগণ শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করছে এবং এখানে ধর্মীয় বিভেদ বা সাম্প্রদায়িক সহিংসতা নেই। বাংলাদেশের হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ এবং খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে সম্প্রীতির সঙ্গে জীবনযাপন করছেন।”
তিনি আরও বলেন, “অক্টোবর মাসে ভয়েস অব আমেরিকার বাংলা বিভাগের জরিপে বলা হয়, আওয়ামী লীগ সরকারের তুলনায় অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা বেশি নিশ্চিত হয়েছে।”
গত ২৬ নভেম্বর চট্টগ্রামের আদালতে সনাতনী নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে জামিন না দেওয়ায় তার অনুসারীরা আদালতে হামলা চালিয়ে সরকারি সহকারী কৌঁসুলি সাইফুল ইসলাম আলিফকে হত্যার ঘটনায় ভারতের গণমাধ্যম মিথ্যাচার করেছে বলে দাবি করেন রাশেদ খাঁন।
তিনি বলেন, “এছাড়া, ২ ডিসেম্বর আগরতলায় বাংলাদেশের উপ-হাইকমিশনে হামলা চালানো বিজেপি সরকারের অপতৎপরতা ও বাংলাদেশকে নিয়ে ভারতের ষড়যন্ত্রের অংশ। এই হামলা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য চরম হুমকি।”
“ভারতের এসব কর্মকাণ্ড থেকে স্পষ্ট হয় যে, আওয়ামী লীগ তাদের বিদায় ও পরাজয় মেনে নিতে পারলেও, স্বৈরাচারী হাসিনার বিদায় ভারতের পক্ষ থেকে মেনে নেওয়া হচ্ছে না। কারণ, বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা ভারতীয় পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে ওঠা হাসিনার মসনদ ভেঙে দিয়েছে,” বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, “যারা বাংলাদেশে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে যুদ্ধের পরিবেশ সৃষ্টি করতে চায়, তাদের সব চক্রান্ত ব্যর্থ হবে। দেশের জনগণ কোনো উস্কানির ফাঁদে পা দেবে না। আইনজীবী সাইফুল ইসলামের হত্যাকাণ্ডের পরেও কোনো হিন্দু বাড়ি বা মন্দিরে হামলা হয়নি, বরং নিরাপত্তা আরও জোরদার হয়েছে।”
রাশেদ খাঁন এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ সংকট নিয়ে বলেন, “বাংলাদেশের ভিতরেও ষড়যন্ত্র চলছে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসা, শাসক দল আওয়ামী লীগের মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্ব এবং প্রশাসনে নানা ধরনের অস্থিরতা সঙ্কটকে আরও প্রকট করেছে।”
তিনি অবশেষে বলেন, “তবে এখনো একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ার সুযোগ আছে। দেশের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক ষড়যন্ত্রগুলি এই স্বপ্ন ধ্বংস করতে পারে। তাই, জাতীয় ঐক্য ও সংহতি প্রতিষ্ঠা অপরিহার্য। এই লক্ষ্যে গণঅধিকার পরিষদ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টাকে জাতীয় সংলাপ আয়োজনের আহ্বান জানাচ্ছে।”
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন গণঅধিকার পরিষদের সদস্য আবু হানিফ, শাকিল উজ্জামান, এডভোকেট সরকার নুরে এরশাদ সিদ্দিকী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান আল মামুন, যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক ইলিয়াস মিয়া, সহ স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক রবিউল ইসলাম এবং যুব অধিকার পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক মুনতাজুল ইসলাম।
