কুমিল্লার ডাঃ হেদায়েত উল্ল্যাহ: শ্রদ্ধেয় চিকিৎসক, জনদরদী সমাজসেবক, এবং নিবেদিতপ্রাণ নেতা

হ-বাংলা নিউজ:

২৬ নভেম্বর দুপুর ২:৩০ মিনিটে কুমিল্লার জনমানুষের হৃদয়ে স্থায়ী জায়গা করে নেওয়া একজন মহান মানুষ, ডাঃ হেদায়েত উল্ল্যাহ পৃথিবীর মায়া ছেড়ে চলে গেলেন। তিনি ছিলেন কুমিল্লার লাকসাম কান্দির পাড় দক্ষিণ পাড়ার বাসিন্দা, মরহুম মাষ্টার মৌলভী মকবুল আহমেদ সাহেবের বড় ছেলে। তার জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত ছিল ন্যায়বিচার, সমবেদনা, এবং স্বাস্থ্যসেবার প্রতি গভীর প্রতিশ্রুতির প্রতীক।

প্রারম্ভিক জীবন ও পরিচয়

ছোটবেলা থেকেই ডাঃ হেদায়েত উল্ল্যাহ তার প্রখর বুদ্ধিমত্তা ও দায়িত্ববোধের পরিচয় দিয়েছিলেন। সিলেট মেডিকেল কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের মধ্য দিয়ে তিনি চিকিৎসাবিজ্ঞানে তার জ্ঞানের গভীরতা ও দক্ষতার প্রতি নিবেদিত ছিলেন।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি মানবতার এক অনন্য উদাহরণ হিসেবে আবির্ভূত হন। যুদ্ধের বিশৃঙ্খলার মধ্যে আহত মুক্তিযোদ্ধা এবং সাধারণ মানুষকে চিকিৎসা সেবা প্রদান করে তিনি নিজের দেশপ্রেম এবং মানবিক গুণাবলীর অমোঘ স্বাক্ষর রেখে গেছেন। তার এই সাহসী ভূমিকা তাকে সিলেট ও কুমিল্লার মানুষের কাছে একজন দেশপ্রেমিক ও বীর হিসেবে পরিচিত করে তোলে।

স্বাস্থ্যসেবায় এক মহান অধ্যায়

মুক্তিযুদ্ধ শেষে তিনি কুমিল্লায় ফিরে আসেন এবং সদর হাসপাতালে কাজ শুরু করেন। আর্থিক পরিস্থিতি নির্বিশেষে রোগীদের জন্য সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে তিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করেন। তার ডায়াগনস্টিক দক্ষতা, নৈতিকতাপূর্ণ চিকিৎসা পদ্ধতি, এবং রোগীদের প্রতি গভীর সহানুভূতি তাকে কুমিল্লার স্বাস্থ্যসেবার অন্যতম স্তম্ভে পরিণত করে।

সমাজসেবা ও নেতৃত্ব

ডাঃ হেদায়েত উল্ল্যাহ শুধু একজন চিকিৎসক ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন মানবিক নেতা, বন্ধু, এবং পরামর্শদাতা। তিনি কুমিল্লা জেলা বিএমএ’র প্রাক্তন সভাপতি, কুমিল্লা জেলার সিভিল সার্জন এবং মিডল্যান্ড হাসপাতালের সাবেক চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। জনস্বাস্থ্য বিষয়ক উদ্যোগে তার অবদান, তরুণ চিকিৎসকদের পরামর্শদান এবং সমাজের মধ্যে ঐক্য গড়ে তোলার তার প্রচেষ্টা তাকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে।

একটি ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণ

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর আমার কুমিল্লা সফরে এই তরুণ চিকিৎসকের সঙ্গে পরিচয়ের ঘটনা আজও স্মৃতিপটে ভাসে। একবার ছাত্র ইউনিয়ন ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষে আহত হয়ে কুমিল্লা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গিয়ে তার সেবার অভিজ্ঞতা হয়েছিল। নিজের কপালে আঘাত পেয়ে তিনটি সেলাই নিতে হয়েছিল, যা ডাঃ হেদায়েত উল্ল্যাহ অত্যন্ত যত্নসহকারে করেছিলেন। সেই দিন থেকেই তার সঙ্গে আমার আত্মিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বয়সে অগ্রজ হলেও তার আচরণ ছিল বন্ধুর মতো।

পরিবার ও উত্তরাধিকার

ডাঃ হেদায়েত উল্ল্যাহ কুমিল্লায় তার পরিবারসহ বসবাস করতেন। তার একটি মেয়ে অস্ট্রেলিয়ায় থাকেন। দেশ-বিদেশে তার প্রচুর শুভানুধ্যায়ী এবং অনুরাগী রয়েছেন, যারা তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।

সমাপ্তি

ডাঃ হেদায়েত উল্ল্যাহ কেবল একজন চিকিৎসক ছিলেন না, তিনি ছিলেন হৃদয়ের নিরাময়কারী। তার জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপ, প্রতিটি সিদ্ধান্ত, এবং প্রতিটি অবদান তার সাহস, বুদ্ধিমত্তা, এবং সহানুভূতির এক অনন্য মিশ্রণ হিসেবে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। সমাজ ও জাতির জন্য তার এই অবদান আমাদের অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।

ডাঃ হেদায়েত উল্ল্যাহ, আপনি আমাদের মাঝে চিরকাল বেঁচে থাকবেন আপনার সেবামূলক কাজের মাধ্যমে। আল্লাহ আপনাকে জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থান দান করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *