বিএনপির নির্বাচন আন্দোলন: রোডম্যাপের জন্য সরকারের ওপর বাড়ছে চাপ

হ-বাংলা নিউজ: 

বিএনপির সব তৎপরতা এখন মূলত নির্বাচনের দিকে ঘুরে গেছে। তবে, অন্তর্বর্তী সরকার ১০০ দিনেও নির্বাচনের রোডম্যাপ বা প্রয়োজনীয় সংস্কারের কোনো সুস্পষ্ট ঘোষণা না দেওয়ায় দলের শীর্ষ নেতারা সরকারের ওপর আরও চাপ সৃষ্টির কথাই বলছেন।

জানা গেছে, যদি ডিসেম্বর মাসের মধ্যে সরকার নির্বাচনের জন্য কোনো যৌক্তিক রোডম্যাপ ঘোষণা না করে, তাহলে বিএনপি আন্দোলনের দিকে যেতে পারে। তবে দলের মধ্যে নানা ধরনের অশঙ্কাও রয়েছে। বিশেষ করে, খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার প্রস্তুতি থাকলেও আপাতত তিনি দেশের বাইরে যাচ্ছেন না। একইভাবে, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়টিও অনিশ্চিত, কারণ তার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দায়ের করা অনেক মামলা এখনো অমীমাংসিত, এবং জামিন প্রক্রিয়াও শুরু হয়নি।

৬ নভেম্বর বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে দলের শীর্ষ নেতারা অন্তর্বর্তী সরকারের কাজ ও গতিপ্রকৃতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। সেখানে তারা নির্বাচনের রোডম্যাপের জন্য সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির কথা বলেন। তারা ডিসেম্বরের মধ্যেই রোডম্যাপ চান, না হলে সরকারকে আরো চাপ দিতে প্রস্তুত থাকবেন তারা।

রোডম্যাপ না পেলে বিএনপি মার্চ নাগাদ আন্দোলনে যেতে পারে, তবে নেতারা এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য করেননি। বিএনপি নির্বাচনের রোডম্যাপ নিয়ে সরকারকে চাপ দিতে ছাড়াও, তাদের রাজনৈতিক জোটের শরীকদের সঙ্গেও আলোচনা করছে। নির্বাচনী প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে, আন্দোলনের শরীকদের কিছু আসন ছেড়ে দেওয়ার পরিকল্পনাও শুরু হয়েছে।

নির্বাচন নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় বিএনপির মধ্যে সংশয়ও কাজ করছে। কিছু নেতা ওয়ান ইলেভেন সময়ের “টু মাইনাস থিওরি”-র কথাও বলছেন। তবে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ড. আসাদুজ্জামান রিপন এ ব্যাপারে বলেন, “বেগম খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যাচ্ছেন না, কারণ চিকিৎসকরা এখানেও তাকে অনুমতি দিচ্ছেন না। আর তারেক রহমানের মামলা আইনি প্রক্রিয়ায় চলছে, যদিও ড. ইউনূস সাহেব মামলাগুলো প্রত্যাহার করার চেষ্টা করছেন, আমি মনে করি এটা ঠিক নয়, তাকে আইনি প্রক্রিয়ায় যেতে হবে।”

তিনি আরো বলেন, “মাইনাস করার প্রবণতা থাকলে, সেটা বাস্তবায়নের সক্ষমতা থাকতে হবে। বর্তমান সরকারের এমন ক্ষমতা নেই, বিএনপি দেশের মানুষের মধ্যে সুদৃঢ় শিকড়বদ্ধ একটি রাজনৈতিক দল। অতীতে অনেক চেষ্টা করা হয়েছে বিএনপিকে ভাঙার, কিন্তু তা সফল হয়নি।”

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নির্বাচনী রোডম্যাপের প্রসঙ্গ তুলে সরকারের সমালোচনা করেছেন।

শনিবার, তারেক রহমান ঢাকায় এক দলের সভায় অনলাইনে যোগ দিয়ে বলেন, “তিন মাস পরে সরকারের সফলতা ও ব্যর্থতা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠতে পারে, এটা অস্বাভাবিক নয়। যদি সরকার পরিচালনায় অদক্ষতা দেখা যায়, জনগণ সেটি মেনে নেবে না।”

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও একই দিনে ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বলেন, “নির্বাচনের রোডম্যাপ দ্রুত ঘোষণা করা হলে অনেক বিতর্কের অবসান হবে। আমাদের অনুরোধ, অন্তর্বর্তী সরকার আর বিলম্ব না করে যত দ্রুত সম্ভব রোডম্যাপ ঘোষণা করুন, এটা এখন অত্যন্ত জরুরি।”

এক সপ্তাহ আগে, তারেক রহমান আবারও বলেছিলেন, “ভোট হতে হবে, ডামি নির্বাচন বা নিশিরাতের ভোট নয়, দিনের আলোতে ভোট হতে হবে, জনগণ যেন তাদের পছন্দমতো ভোট দিতে পারে।”

স্থায়ী কমিটির সদস্যদের বক্তব্য:

৬ নভেম্বর বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে উপস্থিত সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, “যদি অন্তর্বর্তী সরকার কোনো রোডম্যাপ না দেয়, তবে দেশের জনগণ অন্ধকারে থাকবে। বিদেশে কেউ জানতে পারছে না, বাংলাদেশ কোন দিকে যাচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকার কী করছে? রোডম্যাপ দেওয়া হলে জনজীবনে স্বস্তি ফিরে আসবে, অস্থিরতা কমে যাবে।”

তিনি আরো বলেন, “কমিশন গঠন ভালো, কিন্তু রোডম্যাপ তো থাকতে হবে। অনির্ধারিত সময় কোনোভাবেই চলতে পারে না। এটা একটা ট্রানজিশনাল সরকার, তাদের কাজ হল একটি সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করা এবং নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা।”

অন্য স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, “আমরা বারবার সরকারের কাছে রোডম্যাপের দাবি জানাচ্ছি, কারণ দেশের মানুষ জানতে চায় কী ঘটছে। সরকারকে একটা স্পষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে, যাতে আগামী দিনগুলোতে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি পরিষ্কার হয়।”

তিনি আরো বলেন, “সরকারের ১০০ দিনের পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের মনে হচ্ছে তারা কাঙ্ক্ষিত গতিতে এগোচ্ছে না। তাই আমরা সরকারের প্রতি রোডম্যাপ দাবি করছি। আশা করছি, সরকার দ্রুতই রোডম্যাপ ঘোষণা করবে, এবং সংস্কারের কাজ দ্রুত শুরু হবে।”

বিএনপির কিছু নেতা জানান, যদিও সরকার এখনো রোডম্যাপ ঘোষণা করেনি, বিএনপি নিজেদের রোডম্যাপ তৈরি করার চিন্তা করছে, এবং ২০২৪ সালের মধ্যে নির্বাচন এবং নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর চাইছে। তারা মার্চ থেকে শক্ত অবস্থানে যেতে প্রস্তুত।

সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, “আমরা যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচনের জন্য সরকারকে চাপ প্রয়োগ করছি, সরকারের এখন উচিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসে একটি সিদ্ধান্তে আসা।”

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, “নির্বাচনের জন্যই মানুষ এত বছর সংগ্রাম করেছে, তাই সরকারের দায়িত্ব এখন নির্বাচনের বিষয়টি দ্রুত পরিষ্কার করা।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *