হ-বাংলা নিউজ: স্থানীয় সরকারভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোতে ভোটগ্রহণের প্রক্রিয়ায় দলীয় প্রতীকের পরিবর্তে নির্দলীয় প্রতীকে ভোট নেওয়ার বিষয়ে সুপারিশ করার ইঙ্গিত দিয়েছেন নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য ড. তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলেন, সিটি করপোরেশন, উপজেলা পরিষদ, জেলা পরিষদ, পৌরসভা এবং ইউনিয়ন পরিষদে দলীয় প্রতীকে ভোট গ্রহণের বিষয়টি তাকে অনুচিত মনে হয় এবং তিনি চান না যে এসব নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার করা হোক।
শনিবার, রাজধানীর ‘নির্বাচন ভবনে’ বাংলাদেশ নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে কর্মরত সাংবাদিকদের সংগঠন ‘রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ইলেকশন অ্যান্ড ডেমোক্রেসি’ (আরএফইডি) এর সাথে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব মন্তব্য করেন।
অনুষ্ঠানে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, অতীতের নির্বাচনে নানা ধরনের অন্যায় এবং অপকর্ম ঘটেছে, যা বন্ধ করতে হবে। তিনি নিশ্চিত করেছেন, তাদের লক্ষ্য হলো নির্বাচন ব্যবস্থা আরও কার্যকর এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া দীর্ঘমেয়াদে শক্তিশালী করা।
এদিন, আরএফইডি’র সদস্যরা নির্বাচনে সংবাদ সংগ্রহ ও প্রচারে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না হওয়ার জন্য নীতিমালা সংশোধনের দাবি জানান। আরএফইডি’র সাধারণ সম্পাদক মো. হুমায়ূন কবীর জাতীয় সংসদের নারী আসনে সরাসরি ভোট, ‘না’ ভোটের বিধান ফিরিয়ে আনা, নির্বাচন কমিশনের অধীনে এনআইডি কার্যক্রম রাখা, নির্বাচনে পেশিশক্তির প্রভাব বন্ধ করা, নির্বাচন কমিশনারদের মর্যাদা মন্ত্রীর ওপরে রাখার মতো ৩২টি সুপারিশ উপস্থাপন করেন।
মতবিনিময় সভায় ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, “স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার হবে কিনা, এ বিষয়ে আমাদের অবস্থান চূড়ান্ত হয়নি, তবে আমাদের আগ্রহ নেই যে, এসব নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার করা হোক। এর জন্য স্থানীয় সরকার আইন সংশোধন করা প্রয়োজন।”
তিনি আরও বলেন, তারা চান যে, শুধু বিদেশে বসবাসরত নাগরিকরা নয়, দেশে আছেন এমন অসচ্ছল, নারী, কর্মস্থলের কারণে এলাকার বাইরে থাকা এবং রেমিট্যান্স প্রেরণকারী মানুষেরও ভোট দেওয়ার সুযোগ নিশ্চিত করা হোক। তবে, এ ক্ষেত্রে একটি বড় সমস্যা হচ্ছে ভোটারদের আইডি কার্ডের অভাব, এজন্য তারা পাসপোর্টকে ভোটার হিসেবে গ্রহণের কথা ভাবছেন।
নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের বিষয়ে ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, “ইভিএম ছিল ত্রুটিপূর্ণ এবং দুর্বল যন্ত্র, যা এখন অকেজো হয়ে গেছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এর জন্য রাজনৈতিক ঐক্য এবং আস্থাশীলতা প্রয়োজন। ভবিষ্যতে রাজনীতিবিদদের এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।” তিনি বলেন, “ভোট কেনা, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের কেনা এসব বন্ধ করার পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, কারণ এমন নির্বাচনে জনকল্যাণ নেই, এটা হয়ে গেছে একটি ব্যবসা।”
নির্বাচন সংস্কারে ২২টি রাজনৈতিক দল এবং জোটের কাছে প্রস্তাব চাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, “এ বিষয়ে আমরা আগামী দিনে সংবাদ সম্মেলন করব। আমরা সরকারের কাছে মতামত নিচ্ছি, এবং চেষ্টা করছি যাতে সব দল ও মতের ঊর্ধ্বে উঠে একটি সুপারিশ প্রদান করতে পারি।”
এ সময়, কমিশনের সদস্য ছাত্র প্রতিনিধি সাদিক আল আরমান বলেন, “যারা আমাদের ভাইদের হত্যা করেছে, তাদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে আমাদের আওয়ামী লীগের মতামত নেওয়া উচিত কি না, এটাই একটা বড় প্রশ্ন।”
আরএফইডি’র সভাপতি একরামুল হক সায়েম সংবাদমাধ্যম নীতিমালা সংশোধন করার দাবি জানান। আরএফইডি সদস্য রিয়াদুল করিম বলেন, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে নির্বাচনের সংজ্ঞা স্পষ্টকরণ, সংরক্ষিত নারী আসনে সরাসরি ভোট এবং নির্বাচনে যোগ্য লোক নিয়োগের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।
আরেক সদস্য গোলাম রাব্বানী বলেন, “প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রায় দেড় কোটি ভোটার রয়েছে, নির্বাচনি দায়িত্ব এবং অন্যান্য কারণে ৫০ লাখের মতো ভোটার ভোটের বাইরে থাকেন। তাদের ভোট দেওয়ার সুযোগ নিশ্চিত করা উচিত।”
