বিশ্বব্যাংক জানিয়েছে, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বর্তমানে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার পাশাপাশি চারটি প্রধান চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান। এসব চ্যালেঞ্জ হলো: উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বহিঃস্থ খাতের চাপ, এবং আর্থিক খাতের দুর্বলতা। এই কারণে প্রবৃদ্ধি উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে না বলে মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিশ্বব্যাংকের সংবাদ সম্মেলনে প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ ডেভলপমেন্ট আপডেট’ প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদৌলায়ে সেক সংবাদ সম্মেলনে অনলাইনে বক্তব্য রাখেন। তার সাথে উপস্থিত ছিলেন বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র ইকনোমিস্ট ধ্রুব শর্মা, ইকনোমিস্ট নাজমুস খান এবং সিনিয়র যোগাযোগ কর্মকর্তা মেহেরিন এ মাহবুব।
আবদৌলায়ে সেক উল্লেখ করেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি কর্মসংস্থানে তেমন ভূমিকা রাখতে পারেনি, যদিও প্রতিবছর অনেক তরুণ কর্মসংস্থানে প্রবেশ করছে। বিশেষ করে শিক্ষিত ও শহুরে বেকারত্ব বেড়ে যাওয়া একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
তিনি বলেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতি বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুতর সমস্যা, বিশেষ করে খাদ্য মূল্যস্ফীতি, যা সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে কঠিন করে তুলছে। এছাড়া, দেশে বৈষম্যও বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা মোকাবেলার জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক সংস্কারের প্রয়োজন।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বর্তমানে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান। এর মধ্যে উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বহিঃস্থ খাতের চাপ, আর্থিক খাতের দুর্বলতা এবং রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা উল্লেখযোগ্য। এসব কারণে প্রবৃদ্ধির হার অতি কম থাকবে।
বিশ্বব্যাংক জানিয়েছে, বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত খাতে কর্মসংস্থান সৃষ্টির বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে, কারণ ৮৪.৯% কর্মসংস্থান এখনও অপ্রতিষ্ঠানিক খাতে। ২০১৬ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে কর্মসংস্থান ৯.৬% কমেছে।
আর্থিক খাতের সংকটের প্রসঙ্গে বলা হয়, ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের সংখ্যা বেড়ে গেছে, যা সরকারের প্রচেষ্টা সত্ত্বেও নিয়ন্ত্রণে আসছে না। এছাড়া, মূল্যস্ফীতি কমাতে ঋণের সুদের হার বাড়ানো হয়েছে, যার ফলে বেসরকারি খাতে ঋণ গ্রহণ হ্রাস পাচ্ছে।
বিশ্বব্যাংক ভবিষ্যদ্বাণী করছে, বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৩.২% থেকে ৫.২% এর মধ্যে থাকবে, যার মধ্যবর্তী পয়েন্ট হবে ৪%। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য পূর্বাভাসে ৫.৭% প্রবৃদ্ধির কথা বলা হয়েছিল, কিন্তু সরকারের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২.৭৫% কম হতে পারে।
কর্মসংস্থান বাজারে চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে গ্যাপ বিদ্যমান, যা একটি বড় সমস্যা। রপ্তানি বহুমুখীকরণ, বৈদেশিক বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং শিক্ষার মান উন্নত করতে হবে। এছাড়া, অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আদায়ের অবস্থা খারাপ বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, আগামী অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ৪% কমে যেতে পারে, তবে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে এটি বেড়ে ৫.৫% হতে পারে। বিনিয়োগের দুর্বলতা ও সাম্প্রতিক বন্যার প্রভাবে কৃষিতে মাঝারি প্রবৃদ্ধি প্রত্যাশিত, যা প্রবৃদ্ধির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
