হ-বাংলা নিউজ: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই সমন্বয়ক, হাসনাত আবদুল্লাহ এবং সারজিস আলম, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কার্যক্রম নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা সরকারের উপদেষ্টাদের সতর্ক করে বলেছেন, সরকার গঠনের দুই মাস পার হয়েছে, কিন্তু এখনো কোনো বিপ্লবী পদক্ষেপ দেখা যায়নি। তাদের মতে, যদি সরকার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থেকে সুশীলতা দেখাতে চায়, তবে তা গ্রহণযোগ্য নয়। তারা ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার এবং তাদের সহযোগীদের বিচার দাবি করেন এবং সংবিধানসহ ফ্যাসিস্ট আইনের সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।
শনিবার রাজধানীর রাওয়ায় ‘বৈষম্যমুক্ত সশস্ত্র বাহিনী বাংলাদেশ ২.০ বিনির্মাণে প্রয়োজনীয় রূপরেখা’ শীর্ষক সেমিনারে অতিথির বক্তৃতায় তারা এসব কথা বলেন। সশস্ত্র বাহিনীর কয়েকজন সাবেক কর্মকর্তা এ সেমিনারের আয়োজন করেন। বক্তারা সামরিক বাহিনীতে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধে কমিশন গঠন, পিলখানা হত্যাকাণ্ডের জন্য কমিশন গঠন এবং সংবিধান বাতিল ও আইন সংশোধনের প্রস্তাব দেন।
হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, “৫ আগস্টের আগে আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর জন্য অনেক উদ্যোগ ছিল। কিন্তু ৫ আগস্টের পর সরকারের উচিত ছিল জাতির আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধির জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া, বিশেষ করে ফ্যাসিস্টদের বিচার নিশ্চিত করা।” তিনি উপদেষ্টাদের মনে করিয়ে দেন, তারা বিপ্লবী সরকারের সদস্য এবং তাদের পদক্ষেপে তা প্রতিফলিত হওয়া উচিত।
তিনি সরকারের সদস্যদের আহ্বান জানান বিপ্লবী সরকারের চেতনা ধারণ করতে এবং দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার। সংবিধানের বেড়াজালে সিদ্ধান্ত আটকে থাকলে জনগণ হতাশ হবে। তিনি কমিশন গঠন করে বঞ্চিতদের প্রতি ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানান।
পিলখানা হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে হাসনাত বলেন, “এটি ফ্যাসিবাদের প্রথম পদক্ষেপ। বর্তমান প্রজন্ম এই হত্যাকাণ্ডের স্মৃতি নিয়ে বড় হচ্ছে। সরকার দুই মাস পার করেছে, এখন তাদের প্রশ্ন করতে হবে বিডিআর হত্যাকাণ্ডের বিচারের জন্য কি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।”
সারজিস আলম সরকারের সমালোচনা করে বলেন, “হাজার হাজার মানুষের রক্তের বিনিময়ে আপনারা এখন গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন। এখনও হাসপাতালগুলোতে অনেক মানুষ কষ্ট পাচ্ছেন। আমাদের বার্তা পরিষ্কার—সিস্টেমে পচন ধরাতে অল্প কিছু পচা মানুষই যথেষ্ট।”
তিনি জানান, যারা ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হামলা চালিয়েছিল, তারা হয় দেশে আছে নয়তো বিদেশে পালিয়ে গেছে। এই তথ্য গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মাধ্যমে সরকারের কাছে পৌঁছানোর প্রয়োজন ছিল। যদি গোয়েন্দা সংস্থা তথ্য না দেয়, তাহলে বোঝা যাবে, তাদের ধমনিতে এখনও ফ্যাসিস্ট রক্ত প্রবাহিত হচ্ছে।
সারজিস আলম বলেন, “ব্রিটিশরা দাস বানানোর জন্য আইন করেছিল, পাকিস্তানিরা শোষণের জন্য। ২০২৪ সালে আমরা ওই আইন দিয়ে কেন চলব?” তিনি সশস্ত্র বাহিনীসহ দেশের প্রতিটি জায়গায় ফ্যাসিস্ট আইনসমূহ সমূলে উৎপাটনের দাবি জানান।
সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, সাবেক রাষ্ট্রদূত মারুফ হাসান, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) হাসিনুর রাহমান, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) শাহির বীরপ্রতীক এবং কমান্ডার (অব.) মোহাম্মদ শাহরিয়ার আকন। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কমান্ডার (অব.) নেসার আহমেদ জুলিয়াস।
